আগে-পরে যত যাই বলা হোক না কেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের আসল শক্তি ‘পঞ্চপান্ডব’। মাশরাফি বিন মর্তুজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে গড়া এই পঞ্চপাণ্ডবের হাত ধরেই মূলত এসেছে সাম্প্রতিক সময়ের সব সাফল্য। তরুণ খেলোয়াড়দের মধ্যে কেউ কেউ হঠাৎ হঠাৎ আলোর ঝলকানি দিলেও কাজের কাজ করতে হয়েছে শীর্ষ পাঁচকেই।
Advertisement
যার প্রমাণ ছিল সবশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরটিই। যেখানে তিন ম্যাচ সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জয় লাভ করেছিল বাংলাদেশ। ব্যাটে-বলে দলকে এগিয়ে নিয়েছিলেন পঞ্চপান্ডবরাই। পুরো ওয়ানডে সিরিজে তামিম, সাকিব, রিয়াদ, মুশফিক ও মাশরাফি মিলে করেছিলেন ৭৩৪ রান। সিরিজে দুটি সেঞ্চুরির দুটিই এসেছিল তামিমের ব্যাট থেকে। সেখানে জুনিয়রদের মধ্যে এনামুল হক বিজয়, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও সাব্বির রহমান মিলে তিন ইনিংসে করেন মাত্র ৭৩ রান। অর্থ্যাৎ সিনিয়রদের দশ ভাগের এক ভাগ।
এতো গেল ব্যাটিংয়ের চিত্র। বোলিংয়ের অবস্থা দেখলে দেখা যায় বাংলাদেশের বোলাররা তিন ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের যে ২৫ উইকেটের পতন ঘটিয়েছেন তার ৯টি পকেটে পুড়েন পঞ্চ পান্ডবের দুই শীর্ষ তারকা মাশরাফি (৭) আর সাকিব (২)।
তবে তুলনামূলকভাবে তরুণ বোলাররা ভাল করেছেন। তিন তরুণ মোস্তাফিজ (৫), মিরাজ (৩) ও রুবেল (৫) মিলে পেয়েছেন ১৩ উইকেট। আর কোন বোলার একটি উইকেটও পাননি। বাকি তিনটি ছিল রান আউট। প্রতি ম্যাচে একজন করে ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান রান আউট হয়েছেন। এই হলো সংক্ষেপে ‘পঞ্চ পান্ডবের’ পারফরম্যান্স। তরুণদের পারফরমেন্স যার ধারে কাছেও নেই।
Advertisement
তাই তরুণ খেলোয়াড়রা আদৌ জ্বলে উঠতে পারবে কি-না, কিংবা জ্বলে উঠলেও তা দলের জন্য কতোটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। ফলে এশিয়া কাপে যেকোন ইতিবাচক ফল পেতে পঞ্চপান্ডবের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হবে বাংলাদেশকে। কিন্তু এক্ষেত্রেও একটা চিন্তার খোরাক আছে। তাহলো পঞ্চপান্ডবের সেরা দুজন- সাকিব ও তামিম শতভাগ সুস্থ্য নন। সব্যসাচি সাকিবের ফিটনেসে ঘাটতি আছে। এছাড়া তার বাঁহাতের কণিষ্ঠা আঙুলে ব্যথা।
আর তামিমেরও ডান হাতের অনামিকায় ব্যথা। সাকিব-তামিম পুরোপুরি সুস্থ্য নন। ফিটনেসে ঘাটতি আর আঙুলে ব্যাথায় ভুগছেন। তারা কি সময় মত শতভাগ সুস্থ্য হয়ে নিজের সেরাটা পারফরম করতে পারবেন? ওয়েষ্ট ইন্ডিজ সফর শেষে হজব্রত পালনের পর যুক্তরাষ্ট্রে স্ত্রী ও কন্যার সাথে সময় কাটিয়ে দুবাইতে দলের সাথে যোগ দিয়েও সাকিব ফিটনেসে ঘাটতির কথা বলেছেন। আর তামিম গতকাল ব্যাটিং প্র্যাকটিসের সময় আঙুলে ব্যাথা অনুভব করেছেন। জাগো নিউজের সাথে মঙ্গলবার রাতে আলাপে তামিম স্বীকার করেছেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় আঙুলে ব্যাথা অনুভব করেছি। খানিকটা ফুলেও গেছে।’
এখন প্রশ্ন একটাই, সাকিব ও তামিম কি শতভাগ ফিট হয়ে খেলতে পারবেন? কোচ স্টিভ রোডস অবশ্য বড় মুখ করে বলেছেন, ৬০ থেকে ৭০ ভাগ ফিট সাকিব হলেও চলবে আমার। হাফ ফিট সাকিবও অনেক কার্যকর। সেটা কথার কথা নয়। অতীতে বহুবার তার প্রমাণ মিলেছে। সাকিব মোটামুটি ফিট থাকলেই ব্যাট ও বল হাতে নিজের কাজটুকু করে ফেলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে আঙুলে ব্যাথা নিয়েও বেশ ভাল খেলে দলের সাফল্যে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ন অবদান।
কিন্তু তামিমের আঙুলের ব্যথাই চিন্তার কারণ। উইলোবাজ তামিম সন্দেহাতীতভাবেই ড্যাশিং। কিন্তু ব্যথায় জর্জরিত তামিমের ট্র্যাক রেকর্ড কিন্তু ভাল না। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি দুই ফরম্যাটে অসাধারন ব্যাটিং করা তামিমের ভাল খেলা জরুরী। এই বাঁহাতি ওপেনারের ব্যাট হাসলেই হাসে বাংলাদেশ। তামিম শুরুতে একটা ভাল স্টার্ট দিলে পরবর্তী ব্যাটসম্যানরা বাড়তি মনোবল পান। আস্থা ও আত্ববিশ্বাস বেড়ে যায়। তখন ব্যাটিংটা হয় অনেক বেশী সাবলীল। আর তামিম রান করতে না পারলে মানে অল্প সময় ও কম সংগ্রহে ফিরে গেলেই ব্যাটিং লাইন আপের চেহারা কেমন যেন ফ্যাকাশে হয়ে যায়। স্বচ্ছন্দে খেলার সাহস ও উদ্যম যায় কমে।
Advertisement
কাজেই শেষ কথা হলো, অন্তত ৭০ ভাগ ফিট সাকিবকে প্রয়োজন। আর আঙুলের ব্যাথা মুক্ত তামিমকে একান্তই দরকার। তাহলেই কেবল লক্ষ্য পূরণ হতে পারে। নতুবা নয়।
এআরবি/এসএএস/পিআর