বহুল আলোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা বিলের প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে সংসদীয় কমিটি। অথচ একদিন আগে বিলটি আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংসদের বৈঠক থেকে ১ মাস সময় নিয়েছিল কমিটি।
Advertisement
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিলটি চূড়ান্ত করা হয়। সংসদের চলতি অধিবেশনেই এই বিলের ওপর সংসদীয় কমিটির প্রতিবেদন পেশ করা হতে পারে। সংসদীয় কমিটি প্রতিবেদন দেয়ার পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী তা পাসের জন্য সংসদে তুলবেন।
গত ৯ এপ্রিল ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল সংসদে তুলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। পরে বিলটি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য চার সপ্তাহ সময় দিয়ে সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। এরপর গত জুনে সংসদীয় কমিটি প্রতিবেদন দিতে সংসদের কাছে আরও দুই মাস সময় চেয়েছিল। গতকাল সোমবার প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে আরও এক মাস সময় নেয় কমিটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সংসদীয় কমিটি প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কিছু ক্ষেত্রে সংজ্ঞা নির্দিষ্ট করাসহ ১৬টি ক্ষেত্রে সংশোধনী আনা হয়েছে। বৈঠকে বিলটি নিয়ে বিশেষ কোনো আলোচনা হয়নি। এর আগের কয়েক দফা বৈঠকে ১৬টি ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব ছিল। মূলত সেগুলোই গতকাল চূড়ান্ত করা হয়।
Advertisement
মঙ্গলবারের বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি ইমরান আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, সংসদীয় কমিটি ডিজিটাল নিরাপত্তা বিলের প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে। বিলের বেশ কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসছে। সাংবাদিকদের প্রস্তাব মোতাবেক অনেক পরিবর্তনও আসছে।
বিল চূড়ান্ত করতে এক মাস সময় নেয়ার পরদিনই বিল চূড়ান্ত করার বিষয়ে জানতে চাইলে ইমরান আহমদ বলেন, আগে নেয়া দুই মাস সময় শেষ হয়ে গিয়েছিল। তাই সময় নেয়ার প্রয়োজন ছিল। তাছাড়া মঙ্গলবারের বৈঠকে যদি বিল চূড়ান্ত করা না যেত, তাহলে তো আরও বৈঠক করতে হতো।
বিতর্কিত তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে রাখা হয়েছিল। বিলটির আটটি ধারা নিয়ে সম্পাদক পরিষদের পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের তিনটি পক্ষ- সম্পাদক পরিষদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্সের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বিলটি নিয়ে বৈঠক করেছিল সংসদীয় কমিটি।
সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত আইনের ২১ ধারায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সংজ্ঞা যুক্ত করেছে সংসদীয় কমিটি। সংবিধানের প্রস্তাবনায় যে ব্যাখ্যা দেয়া আছে সেটাই হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সংজ্ঞা। ২৫ নম্বর ধারার ‘খ’ উপধারা (এমন কোনো তথ্য সম্প্রচার বা প্রকাশ করা যা কোনো ব্যক্তিকে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ করতে পারে) বাতিল এবং সব মিলে দুটি উপধারা করা, ২১ ধারায় সাজা যাবজ্জীবনের ক্ষেত্রে ১৪ বছর করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আর সর্বোচ্চ সাজার কথা আইনে বলা হয়েছে। অপরাধ বিবেচনায় আদালত ঠিক করবে সর্বনিম্ন সাজা কত দিন হবে? ৩২ ধারায় ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তির কথা বলা হয়েছে। সংসদীয় কমিটি গুপ্তচরবৃত্তি নির্ধারণ করতে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট অনুসরণ করতে বলেছে।
Advertisement
এছাড়া বিলের ৫ নম্বর ধারায় ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সির একজন মহাপরিচালকের সঙ্গে দুজন পরিচালক যুক্ত করা, ১২ ধারায় জাতীয় ডিজিটাল নিরাপত্তা কাউন্সিলে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একজন প্রতিনিধি রাখা (তথ্য মন্ত্রণালয় এই প্রতিনিধি নির্ধারণ করবে), ২১ ধারায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জাতির পিতার বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডার সঙ্গে জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীত অবমাননার বিষয় যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত ৫৩ ধারায় আগে ছিল অভিযোগ গঠনের ১৮০ দিনের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করতে হবে। সেটা ১৮০ কার্যদিবস করা এবং মামলা নিষ্পত্তির সময়সীমা সর্বোচ্চ ৯০ দিনের পরিবর্তে ৯০ কার্যদিবস করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এইচএস/জেএইচ/আরআইপি