সড়ক দুর্ঘটনা ও যানজট নিরসনে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছে ডিএমপির ট্রাফিক উত্তর বিভাগ। দুর্ঘটনা রোধে এ ধরনের উদ্যোগ অত্যন্ত জরুরি।
Advertisement
গতকাল সোমবার বিকেলে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় যানজট ও সড়ক দুর্ঘটনার রোধে স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের করণীয় ও রাস্তা পারাপারে বিস্তারিত আলোচনা করেন ট্রাফিক উত্তর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) প্রবীর কুমার রায়। এ সময় ডিসি বলেন, রাস্তা পারাপার, সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে করণীয় এবং ট্রাফিক সাইন সম্পর্কে স্কুল-কলেজের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের সচেতন করার লক্ষ্যে আমাদের এই আয়োজন। ভবিষ্যতে ও আমাদের এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
এটা সত্যি যে, সড়ক দুর্ঘটনা এতটাই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে যে, তা দেশের প্রতিদিনের দুর্ঘটনার চিত্র দেখলেই বোঝা যায়। আজ কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহসড়কের চকরিয়া বরইতলী রাস্তার মাথা এলাকায় যাত্রীবাহী বাস ও লেগুনার (ম্যাজিক গাড়ি) মুখোমুখি সংঘর্ষে চালকসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বরইতলী রাস্তার মাথা নতুন পেট্রল পাম্প এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এটা খুবই দুঃখজনক যে, অনেক চেষ্টার পরও সড়কে নিরাপত্তা ও পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা আনতে পারছে না সরকার। জোরালো অভিযোগ রয়েছে, পরিবহন আইন ও নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর একচেটিয়া প্রাধান্যের কারণেই এই খাতে শৃঙ্খলা আসছে না। এছাড়া সরকার, পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠন একাকার হয়ে গেছে। ফলে সিদ্ধান্ত হয়, কিন্তু বাস্তবায়ন হয় না। আইন আছে কিন্তু এর প্রয়োগ করতে গেলেই বাধা আসে। এরফলে রক্ষা হচ্ছে না যাত্রীস্বার্থ। অকাতরে প্রাণ যাচ্ছে সড়কে। তাহলে নিরাপদ সড়ক কি অলীক কল্পনার বিষয় হয়েই থাকবে?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে সড়ক দুর্ঘটনাজনিত কারণে প্রতিবছর দেশের ক্ষতি হচ্ছে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ২ শতাংশ। যানবাহনের উচ্চগতি, নাজুক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামোগত সমস্যা, পরিকল্পনা ও নীতির দুর্বলতা, অসচেতনতা ইত্যাদি বিষয় সড়ক দুর্ঘটনা ত্বরান্বিত করছে। তাই সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কর্তৃপক্ষকে সেসব সমস্যা দূরীকরণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
Advertisement
সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্ন যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিতের জন্য সমন্বিত ও আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা জরুরি। দুর্ঘটনা রোধে চালক ও পথচারীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। জেব্রা ক্রসিং ও ফুটওভার ব্রিজ ছাড়া রাস্তা পারাপার বন্ধ করতে হবে। যথাযথ পরীক্ষা ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়া যাবে না। ফুটপাথগুলো দখলমুক্ত করে পথচারী চলার উপযোগী করতে হবে। তুলে দিতে হবে মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন। রাস্তা চলাচলে আইন অমান্যের জন্য আরও কঠিন শাস্তি ও জরিমানা আদায় করতে হবে।
প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটের দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে। ফলে আগে যাওয়ার প্রবণতার কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে। তাছাড়া রাস্তায় যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং, ফুটপাথ দখল করে ব্যবসাবাণিজ্য পরিচালনা, একই রাস্তায় বিভিন্ন গতির যানবাহন চলাচল, অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক, মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি, চালকের মাদকাসক্তি ইত্যাদি কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। কর্তৃপক্ষের সুষ্ঠু ও সমন্বিত পদক্ষেপে দেশ যানজট ও দুর্ঘটনামুক্ত হবে এ প্রত্যাশা সকলের। আমরা এ ধরনের করুণ মৃত্যু আর দেখতে চাই না। নতুন বছরে প্রতিটি সড়ক-মহাসড়ক হোক নিরাপদ-এটাই সকলের কাম্য।
এইচআর/জেআইএম
Advertisement