শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সীমানাপ্রাচীর নদীগর্ভে চলে গেছে। একই সঙ্গে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়সহ ১৩টি ভবন ঝুঁকিতে রয়েছে। যেকোনো সময় নদীগর্ভে চলে যাবে ভবনগুলো।
Advertisement
গত এক সপ্তাহে নদী ভাঙনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন ২০০ বছরের পুরাতন মূলফতগঞ্জ বাজারের ২০০ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে কেদারপুর ও পূর্ব নড়িয়া গ্রামের দেড় হাজার পরিবার। দুটি গ্রামের ৩৫০ পরিবার তাদের বসতঘর সরিয়ে নিয়েছেন অন্যত্র।
গতকাল শনিবার দুপুরে কেদারপুর গ্রামের রাম ঠাকুর সেবা মন্দির নদীগর্ভে চলে যায়। রোববার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সীমানাপ্রাচীর নদীগর্ভে চলে যায়। নদী ভাঙনের কারণে ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম।
শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন ডা. খলিলুর রহমান বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে পদ্মার তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। রোববার সকাল ৯টায় নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সীমানাপ্রাচীর নদীগর্ভে চলে যায়। ঝুঁকিতে রয়েছে হাসপাতালের ১২টি ভবন। যেকোনো সময় নদীগর্ভে চলে যাবে ভবনগুলো। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগীদের শরীয়তপুর সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। তবে এখনো বহির্বিভাগ, জরুরি বিভাগ ও অান্তঃবিভাগ চালু রয়েছে। তিনজন চিকিৎসক ও ১৬ জন নার্স দিয়ে সীমিত আকারে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
Advertisement
নড়িয়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের কর্মকর্তা ডা. নাহিদ আল মাসুম বলেন, নদী ভাঙতে ভাঙতে নড়িয়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের ভবনটি কাছে চলে এসেছে। নিরাপত্তার জন্য ভবনের মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ১ সেপ্টেম্বর থেকে নড়িয়া ভূমখাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে অস্থায়ীভাবে কার্যক্রম চলছে।
ইকবাল মাঝিসহ স্থানীয়রা জানান, হাসপাতালটি নিলামে দেখতে চাই না। আমরা চাই নদীভাঙন রক্ষায় দ্রুত বেড়িবাঁধের কাজ শুরু করুক সরকার। তাহলে হাসপাতালসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ফসলি জমি ও বাড়িঘরগুলো রক্ষা পাবে।
কেদারপুর গ্রামের পলাশ বেপারী ও জাহিদ বেপারী বলেন, গত ৭ সেপ্টেম্বর আমাদের বসতবাড়ি নদীগর্ভে চলে যায়। এখন গাছতলাতেই থাকি। এখন পর্যন্ত কোনো সরকারি সহযোগিতা পাইনি।
কেদারপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইমাম হোসেন দেওয়ান বলেন, বসতবাড়ি, ফসলি জমি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিলীন হয়ে গেছে। এলাকার লোক নিঃস্ব হয়ে গেছে। চোখের সামনে সব শেষ হয়ে গেল। এখন আমাদের পথে বসা ছাড়া উপায় নেই।
Advertisement
শরীয়তপুর পাউবোর উপ-প্রকৌশলী মো. তারেক হাসান বলেন, নড়িয়ার কেদারপুর ও পূর্ব নড়িয়ায় ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। যেখানে রয়েছে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। সেটিও ঝুঁকিতে। ভাঙনরোধে জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে।
নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা ইয়াসমিন বলেন, নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি পদ্মার ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। যেকোনো সময় নদীগর্ভে হারিয়ে যাবে। মূলফৎগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ীরা বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছেন। বাজারের প্রায় দেড় হাজার ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দেয়া হবে। ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে শুকনা খাবার ও বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা দেয়া হয়েছে।
মো. ছগির হোসেন/এএম/পিআর