আন্তর্জাতিক

‘মিয়ানমারের বিচারের এখতিয়ার নেই আইসিসির’

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সেনাবাহিনীর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করার এখতিয়ার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) রয়েছে বলে হেগের ওই আদালত যে রায় ঘোষণা করেছে তা প্রত্যাখ্যান করেছে মিয়ানমার সরকার। খবর পার্স ট্যুডের।

Advertisement

আইসিসির তরফ থেকে বলা হয়েছে যে, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার থেকে জোর করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ তদন্ত করার কর্তৃত্ব আদালতের রয়েছে।

কিন্তু শুক্রবার এক বিবৃতিতে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট আইসিসির ওই সিদ্ধান্তকে সন্দেহযুক্ত আইনি ভিত্তি এবং ত্রুটিপূর্ণ প্রক্রিয়ার ফসল হিসেবে অভিহিত করেন।

এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ব্যক্তিগত দুর্দশার বর্ণনার ওপর ভিত্তি করে সেখানে অভিযোগ সাজানো হয়েছে, যার সঙ্গে আইনি যুক্তির কোনো যোগাযোগ নেই বরং আবেগের জায়গা থেকে আদালতের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।

Advertisement

এর আগে, বৃহস্পতিবার নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রি-ট্রায়াল চেম্বারের তিন বিচারকের প্যানেল এক রায়ে বলেছেন, মিয়ানমার আন্তর্জাতিক আদালতের সদস্য না হলেও রোহিঙ্গারা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের কারণে ঘটনার একটি অংশ বাংলাদেশে সংগঠিত হয়েছে। ফলে আইসিসি মনে করছে রোম সনদ অনুযায়ী ঘটনার তদন্ত করার ক্ষমতা এই আদালতের রয়েছে।

চলতি বছরের এপ্রিল মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রধান কৌশলী ফাতোও বেনসুদার আদালতের কাছে জানতে চেয়েছিলেন যে, রোহিঙ্গাদের যেভাবে মিয়ানমার থেকে বিতাড়ন করা হয়েছে সেটির তদন্ত করার এখতিয়ার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রয়েছে কিনা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের বক্তব্য এবং বিভিন্ন অধিকার সংগঠনের যুক্তি শুনে বৃহস্পতিবার সিদ্ধান্ত দেয় আইসিসির তিন বিচারকের প্রি ট্রায়াল প্যানেল।

মিয়ানমার বলে আসছে, তারা যেহেতু আইসিসির সদস্য নয়, সেহেতু ওই আদালতে তাদের বিষয়ে বিচারের প্রশ্নই অবান্তর। এ কারণে বিচারিক এখতিয়ার প্রশ্নে আইসিসির চিঠির জবাবও তারা দেয়নি। এমনিতে কোনো দেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সদস্য না হলে সেই দেশের সীমানায় সংঘটিত কোনো অপরাধের বিচার এ আদালত সরাসরি করতে পারে না।

কিন্তু আইসিসির সদস্য বাংলাদেশ এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আন্তর্জাতিক আদালত বিষয়টিকে আন্তঃসীমান্ত অপরাধ বিবেচনা করছে। আর এর ফলে মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক ওই আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে মামলা ও তদন্ত শুরুর পথ খুলে গেছে।

Advertisement

রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওই দমন-পীড়নের মুখে গত আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওই অভিযানকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে বর্ণনা করে আসছে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা।

এক মাস আগে জাতিসংঘের স্বাধীন তথ্যানুসন্ধান মিশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ‘গণহত্যার অভিপ্রায়’ থেকেই রাখাইনের অভিযানে রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটিয়েছে।

মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য মিয়ানমারের সেনাপ্রধানসহ শীর্ষ কয়েকজনক জেনারেলকে বিচারের মুখোমুখি করার পক্ষে মত দিয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারে বিষয়টি বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে পাঠানো উচিত।

এই অবস্থায় আইসিসির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত একে ‘নতুন পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ’ হিসেবে দেখা। বিশেষ করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের উচিত মিয়ানমারের পরিস্থিতি সম্পর্কে আইসিসিকে জানানো, যাতে রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি কাচিন এবং শান রাজ্যে অন্যান্য সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী যেসব মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, সেসবের অনুসন্ধান করা যায়।

গত ২৭ জুন ‘মিয়ানমার: উই উইল ডেস্ট্রয় এভরিথিং’ শীর্ষক ১৮৬ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংস্থাটি। প্রতিবেদনে নিধনযজ্ঞের জন্য মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে দায়ী করা হয়। মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাংসহ ১৩ জন সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত তারা ৪০০ জনেরও বেশি ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করে অ্যামনেস্টি।

টিটিএন/এমএস