দেশজুড়ে

২০ বছর ধরে স্বেচ্ছায় ট্রাফিক কন্ট্রোল করেন আজাহার

পরনে ট্রাফিক পুলিশের রঙচটা পুরনো পোশাক। মাথায় সেলাই করা ছেড়া ক্যাপ ও পায়ে ছেড়া জুতা। আর বগলে পল্লী বিদ্যুতের দুই হাত লম্বা মোটা তার। লিক লিকে গড়নের ৫৫ বছর বয়সী এ মানুষটির নাম আজাহার আলী মন্ডল। বাড়ি নওগাঁর মান্দা উপজেলার ভালাইন ইউনিয়নের লক্ষ্মীরামপুর গ্রামে।

Advertisement

কথা বলে জানা যায়, আজাহার আলী মন্ডলের টানা-পোড়নের সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে-মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। তাদের আলাদা সংসারও আছে। জীবন জীবিকার তাগিদে এক সময় তিনি ঢাকায় রিকশা চালাতেন। প্রায় ১৬ বছর রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। এরপর এলাকায় চলে আসেন।

জেলার মহাদেবপুর উপজেলা প্রবেশ মুখে ব্রিজের ওপর একটি দুর্ঘটনায় মা-মেয়ে মারা যান। তার বিবেককে নাড়া দেয়। এরপর থেকে স্বেচ্ছায় প্রায় ২০ বছর ধরে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন তিনি।

প্রথমে আজাহার আলী মহাদেবপুর উপজেলায় আট বছর ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করেন। পরে সেখান থেকে আজ অবধি জেলার মান্দা উপজেলার ফেরিঘাটে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পাল করছেন।

Advertisement

প্রথম প্রথম তাকে কেউ মানতে চাইত না। তবে সময়ের প্রেক্ষিতে যখন যানজট বেড়ে যাচ্ছিল তখন সবাই তাকে মানতে শুরু করে। নিয়মমতো সবাই যানজটমুক্ত করে চলাচলের সুযোগ করে দেন। প্রতিদিন ফেরিঘাটে সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত নিরলসভাবে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন আজাহার আলী।

স্বেচ্ছাসেবী আজাহার আলী বলেন, ১৯৯৫ সালে আনছার ভিডিপি থেকে প্রশিক্ষণ নিই। সেখানে ট্রাফিকের কিছু কলাকৌশল শিখানো হয়েছিল। আর সে অভিজ্ঞতা থেকে ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছি। তবে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকা পালন করলেও মন্ত্রী স্যার (বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী মুহাম্মদ ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক), ইউএনও অফিস, থানা ও সার্কেল স্যার আর্থিক কিছু সহযোগিতা করে থাকেন।

তিনি আরো বলেন, অর্থ সঙ্কটে চলি। গরিব মানুষ। পোশাক কিনতে পারি না। মন্ত্রী স্যার পোশাক কেনার জন্য টাকা দিয়েছিলেন। সে টাকা দিয়ে চাল-ডাল কিনে খেয়েছি। এছাড়া অ্যাকশিরা রোগে ভুগছি। ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কিছুটা বেগ পেতে হয়।

সিএনজি চালক ফজলুর এবং ভটভটি চেন মাস্টার জামিনুর রহমান বলেন, এ জায়গাটিতে বিশেষ করে সকাল ও বিকেলে বেশি যানজটের সৃষ্টি হয়। রাস্তা পারাপারে যে যার মতো করে যাওয়ার চেষ্টা করেন। আজাহার আলী চাচা ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকা পালন করে সবাইকে শুশৃঙ্খলভাবে চলাচল করতে বলেন।

Advertisement

মান্দা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসএম হাবিবুল হাসান বলেন, আজাহার আলী একজন স্বেচ্ছাসেবক ট্রাফিক পুলিশ। সাদা মনের ওই মানুষটি বিনা পারিশ্রমিকে মান্দার ফেরিঘাট মোড়ে রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে সারাদিন ডিউটি করেন। উপজেলায় যোগদানের পর তিনি আমার কাছে ছোট একটি আবদার নিয়ে আসেন। রোদ-বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পেতে একটি ছাতা পাওয়া যায় কিনা! শোনামাত্র তার ইচ্ছা পূরণ করেছি। উপহার সামান্য হলেও তার স্বেচ্ছাশ্রমের কাজের আগ্রহটা অনেকগুন বাড়িয়ে দিবে।

নওগাঁ সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (মান্দা সার্কেল) হাফিজুল ইসলাম বলেন, ফেরিঘাট একটি জনগুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম জায়গা। আজাহার আলী স্বেচ্ছায় নিরলস শ্রম দিয়ে ট্রাফিকের যে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন সেটা নিঃসন্দেহ ভালো উদ্যোগ।

আব্বাস আলী/এফএ/এমএস