শিক্ষা

আগামী বছর থেকে এমপিওভুক্তির সুবিধা পাবেন শিক্ষক-কর্মচারীরা

নতুন এমপিওভুক্তি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে সরকারি বেতন-ভাতার সুবিধা প্রদান করা হবে। অনলাইন আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রতিবছর প্রায় ১৫০টির মতো শর্তপূরণ হওয়া প্রতিষ্ঠানকে প্রথম ধাপে এ সুবিধার আওতায় আনা হবে।

Advertisement

পর্যায়ক্রমে যোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিওভুক্তির (মাসিক পেমেন্ট সুবিধা) আওতায় আনা হবে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এমপিওভুক্তির জন্য সারাদেশের প্রায় সাড়ে ছয় হাজার স্কুল-কলেজ থেকে অনলাইন আবেদন জমা পড়ে। একই প্রতিষ্ঠান থেকে একাধিক আবেদন এসেছে।

তার মধ্যে- নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের আবেদন রয়েছে। অন্যদিকে, গত ২৬ আগস্ট থেকে শুরু হয়েছে কারিগরি ও মাদরাসা এমপিওভুক্তির আবেদন কার্যক্রম। আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে এ প্রক্রিয়া।

Advertisement

সূত্র জানায়, আগামী ৮ সেপ্টেম্বরের পর আবেদন করা প্রতিষ্ঠানের যাচাই-বাছাই কাজ শুরু হবে। এরপর খসড়া তালিকা করে মন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হবে। চলতি অর্থবছরে স্কুল-কলেজ এমপিওভুক্তিতে ৪৩২ কোটি দুই লাখ ৭৩ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

গত বছর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) সারাদেশের এমপিওবিহীন সাত হাজার ১৪২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতে বার্ষিক দুই হাজার ১৮৪ কোটি ২৭ লাখ ৫২ হাজার ২৫০ টাকা চাহিদা পাঠিয়েছিল মন্ত্রণালয়ে।

এ হিসাবে বরাদ্দকৃত অর্থে পাঁচ শতাধিক প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা সম্ভব হবে। সংসদীয় আসনপ্রতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয়ের। সেভাবেই সফটওয়ারের মাধ্যমে গ্রের্ডিং করা হয়েছে। এ প্রতিবেদনে সুপারিশটি সেপ্টেম্বরে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেই তালিকায় প্রায় সবস্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য অর্থ বরাদ্দ দিতে সুপারিশ করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এমপিওভুক্তি যাচাই-বাছাই কমিটির আহ্বায়ক ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বেসরকারি) মো. জাবেদ আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, অনলাইন আবেদন কার্যক্রম শেষ হয়েছে। বিভিন্ন স্তরে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার আবেদন জমা হয়েছে। তবে আবেদনকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪ হাজারের মতো হবে। তিনি বলেন, আবেদনের সঙ্গে দেয়া কাগজপত্রগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। যাচাই-বাছাই শেষ হলে যোগ্য সব প্রতিষ্ঠানের তালিকা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন আকারে জমা দেয়া হবে। এরপর সেই প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেই তালিকা থেকে প্রতিবছর যে পরিমাণে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হবে সেই অনুপাতে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করা হবে।

Advertisement

নতুন এমপিওভুক্তি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের কবে থেকে এমপিও সুবিধা দেয়া হবে জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, পুরো বিষয়টিই নির্ভর করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওপর। এমপিওভুক্তির জন্য এখানো কয়েকটি ধাপ অবলম্বন করতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ ছাড় দেয়া হলে আমাদের আর তেমন সময়ের প্রয়োজন হবে না। তবে ডিসেম্বরের আগে অর্থ ছাড় হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই আগামী বছর থেকে নতুন এমপিওভুক্তি শিক্ষক-কর্মচারীরা এ সুবিধা ভোগ করতে পারবে।

এদিকে, এমপিওভুক্তির জন্য স্কুল-কলেজ আবেদন কার্যক্রম শেষ হলেও কারিগরি ও মাদরাসার এমপিওভুক্তির আবেদন প্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি। এমপিও নীতিমালাও জারিতেও বিলম্ব করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ। এ কারণে তাদের আবেদন কার্যক্রম শুরু করতে বিলম্ব হয়েছে।

কারিগরি ও মাদরাসা যাচাই-বাছাই কমিটির আহ্বায়ক এবং কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও উন্নয়ন) এ কে এম জাকির হোসেন ভুইঞা জাগো নিউজকে বলেন, সচিব বিদেশে থাকায় এমপিওভুক্তির আবেদন কার্যক্রম শুরু করতে দেরি হয়েছে। গত ২৬ আগস্ট থেকে আবেদন শুরু হয়েছে। চলবে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

এ পর্যন্ত কি পরিমাণে আবেদন জমা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত ২৬ আগস্ট থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় আড়াই হাজার কারিগরি ও মাদরাসা এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন জমা পড়েছে। এ প্রতিষ্ঠান থেকে একাধিক স্তরের এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন এসেছে। আবেদন কার্যক্রম শেষে খসড়া প্রতিবেদন তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জামা দেয়া হবে।

এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে তা অনুমোদন হলে সেটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যে পরিমাণে অর্থ ছাড় দেবে সেই পরিমাণে প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা। উল্লেখ্য, ২০১০ সালের পর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি বন্ধ রয়েছে। গত ১০ জুন থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এমপিওভুক্তির দাবিতে বেসরকারি নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা অনশনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন।

পরে সরকারের আশ্বাসে তারা বাড়ি ফিরে যান। এর আগে গত বছর ডিসেম্বর মাসেও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আন্দোলন করেছেন। ২০১৩ সাল থেকে শিক্ষকরা দাবি আদায়ে নানা কর্মসূচি পালন করছেন। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই সরকার নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এমএইচএম/এমআরএম/পিআর