প্রধানমন্ত্রীর শপথ গ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গেই ইমরান খান ঘোষণা দিয়েছিলেন পাকিস্তানের ক্রিকেটকে আমূল বদলে দেবেন। তখনকার পকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান নাজম শেঠির সঙ্গে ইমরানের ভালো সম্পর্ক ছিল না। ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগেই বলে আসছিলেন, তিনি ক্ষমতা পেলে নাজম শেঠিকে রাখবেন না।
Advertisement
ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই কিন্তু বসে থাকলেন না ইমরান। পদক্ষেপ নিলেন এবং নাজম শেঠিকে সরিয়ে তার জায়গায় পিসিবির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছেন এহসান মানিকে। আনুষ্ঠানিকভাবে একদিন আগেই পিসিবির চেয়ারে বসলেন আইসিসির সাবেক প্রেসিডেন্ট এহসান মানি।
পিসিবির সংবিধান অনুসারেই দায়িত্ব গ্রহণের এক সপ্তাহের মধ্যে চেয়ারম্যান নিজের পছন্দমত রদবদল ঘটাতে পারবেন। পরিবর্তনের যে পদক্ষেপগুলো নেয়া সম্ভব, সেগুলো নেবেন। বোর্ড অব গভর্নর্সের দায়িত্ব নেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এহসান মানি এশিয়া কাপের স্কোয়াড অনুমোধন করেছেন এবং মিডিয়ার সামনে ঘোষণা দিয়েছেন, নিজের কৌশলগুলোর।
এহসান মানি পিসিবির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন পুরোপুরি ইমরান খানের ইচ্ছায়। ইমরানের চাওয়া মোতাবেকই তাকে চলতে হবে। কাজ করতে হবে। দায়িত্ব নেয়ার পর তিনি যেসব পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছেন, সেগুলো পুরোপুরিই যে ইমরানের কাছ থেকে অর্পিত দায়িত্ব, তা খুব সহজেই বোঝা যায়।
Advertisement
এহসান মানি নিজের কৌশল সম্পর্কে বলতে গিয়ে জানান, ঘরোয়া ক্রিকেটকে কিভাবে আরও বেশি শক্তিশালী করতে চান। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, পিসিবিতে স্বচ্ছতা এবং গ্রহণযোগ্যতা ফিরিয়ে আনার। তবে এহসান মানির মূল এজেন্ডাই হচ্ছে, ভারতের সঙ্গে ক্রিকেট সম্পর্ক ফিরিয়ে আনা।
তৃণমূল পর্যায় থেকে কিভাবে প্রতিভা তুলে এনে পাকিস্তান ক্রিকেটকে কিভাবে আরও বেশি শক্তিশালী করা যায়, সে পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন এহসান মানি। তিনি বলেন, ‘ক্রিকেটার পরিচর্যার মধ্য দিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটকে শক্তিশালী করতে হবে আমাদের। আমরা এ পরিকল্পনাটা বাস্তবায়ন করবো একেবারে স্কুল পর্যায়ের ক্রিকেট থেকে। জেলা পর্যায়ের স্কুল ক্রিকেট থেকে আঞ্চলিক পর্যায়ে এবং সর্বশেষ জাতীয় পর্যায়ে স্কুল ক্রিকেটের আয়োজন করবো।’
ডিপার্টমেন্টাল ক্রিকেট নিয়েও নতুন করে চিন্তা-ভাবনা করছে এহসান মানির পিসিবি। কারণ, পাকিস্তান ক্রিকেটের উন্নয়নের পেছনে ডিপার্টমেন্টাল ক্রিকেটের অনেক অবদান রয়েছে। শুধু তাই নয়, আঞ্চলিক ক্রিকটেকে আরও বেশি শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য মানির। শুধু তাই পিসিবির কাঠামোও ঢেলে সাজানো ঘোষণা দেন এহসান মানি। একই সঙ্গে পিসিবির সংবিধানেও সংশোধনী আনার উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
তবে এহসান মানির সামনে সবচেয়ে বড় দুটি দায়িত্ব হচ্ছে পাকিস্তানের মাটিতে পুরো পিএসএল আয়োজন করা। একই সঙ্গে ভারতের সঙ্গে ক্রিকেট সম্পর্ক নতুন করে স্থাপন করার দিকেও নজর দিতে চান এহসান মানির কমিটি। পিসিবি চেয়ারম্যান বলেন, ‘পাকিস্তানে পিএসএল আয়োজন করতে পারলে এর ব্যান্ড ভ্যালু বাড়বে নিশ্চিত। আগামী পিএসএলে মোট ৮টি ম্যাচ পাকিস্তানের মাটিতে আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে পিসিবির।’
Advertisement
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নতুন করে স্থাপনের বিসয়ে এহসান মানি বলেন, ‘আমি কখনোই বলিনি যে আমি কখনোই বলিনি যে, পাকিস্তানের বিষয়াধি সব সময়ই ভারতের বিপক্ষে। পাকিস্তান সব সময়ই চায় ভারতের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি করতে। আমার সামনে এ জন্য দুটি পথ খোলা। প্রথমটা হলো, দু’পক্ষকেই টেবিলে বসতে হবে এবং সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, আইনি পদক্ষেপ নেয়া। যখন সর্বশেষ ভারত পাকিস্তানের মাটিতে এসে খেলেছিল, ২০০৪ সালে, আমি তখন আইসিসি সভাপতি। আমি তাদের বোর্ডের সঙ্গে কথা বলেছি এবং তাদের পক্ষ থেকে যে বিষয়টা ইস্যু হিসেবে রয়েছে, সেটা অনুধাবন করার চেষ্টা করেছি। তারা আমাকে বলেছিল, এক বছর সময় দিতে, যাতে তারা এই বিষয়গুলো সমাধান করে আসতে পারে। এক বছর পর আমি তাদের কাছে গেলাম এবং তারাও এসেছিল। একটি ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। জগমোহন ডালমিয়ার সময় থেকেই পিসিবি এবং বিসিসিআইয়ের মধ্যে ভালো সম্পর্ক ছিল। পিসিবিতে তখন ছিল তৌকির জিয়া, খালিদ মেহমুদ এবং আরিফ আব্বাসি।’
এহসান মানি ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমি তাদের প্রতি অনুরোধ জানাব যেন তারা আমাদের সঙ্গে খেলতে আসে। নিজ নিজ নীতি হয়তো বিতর্ক তৈরি করছে। কিন্তু আমরা তো বিভিন্ন টুর্নামেন্টে একে অপরের বিপক্ষে খেলছি। এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপের মত টুর্নামেন্টে ওই ম্যাচগুলোর জন্য আমরা সব সময়ই প্রস্তুত থাকি। এ কারণে তাদের অবস্থান এবং পলিসি সম্পর্কে আমি কখনোই কিছু বুঝতে পারি না। তবুও, ভারতের প্রতি আমি আহ্বান জানাবো, তারা যেন আমাদের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ খেলতে আসে।’
আইএইচএস/এমএস