বিদ্যুৎখাতের চেয়ে জ্বালানি খাত কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে বলে স্বীকার করেছেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সপ্তাহ উপলক্ষে বুধবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে সচিব এ কথা বলেন।
Advertisement
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু উপস্থিত ছিলেন।
বৃহস্পতি ও শুক্রবার (৬-৮ সেপ্টেম্বর) বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সপ্তাহ অনুষ্ঠিত হবে।
বিদ্যুৎ খাতের তুলনায় জ্বালানি খাত ততটা এগোয়নি- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জ্বালানি সচিব বলেন, ‘বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন যেভাবে দৃশ্যমান হয়, জ্বালানি খাতের অ্যাক্টিভিটিস (কার্যক্রম) সেভাবে দৃশ্যমান হয়নি। আমরা হয়তো কিছুটা পিছিয়ে আছি এটা ঠিক, স্বীকার করি। কিছুই হয়নি বা কিছুই করতে পারছি না বা করা হচ্ছে না এটা ঠিক নয়। যদি কিছুই না হতো, তবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মূল চালিকা শক্তি কী- জ্বালানি? জ্বালানি সরবরাহ। যদি জ্বালানি সেক্টর একেবারেই চুপচাপ বসে থাকে তবে বিদ্যুৎ কীভাবে এত উন্নতি করেছে?'
Advertisement
তিনি বলেন, ‘জ্বালানি সেক্টরও বসে নেই। আমাদের দেশে জ্বালানি সেক্টরও এগিয়ে গেছে।’
এরপর প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘জ্বালানি সময়মতো না আসলে বিদ্যুৎ বিভাগ এতদূর এগোতে পারত না। জ্বালানির কাজগুলো বড় বড়। ভবিষ্যতে আমাদের বড় বড় কাজ হবে। বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম পাইপলাইন তৈরি হচ্ছে, নতুন রিফাইনারি হচ্ছে। আগামীতে জ্বালানিও বড় একটা জায়গা দখল করবে।’
পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ নিতে ঘুষ দিতে হয়। ট্রান্সফরমার চুরি হয়ে যায়, গ্রাহকদের টাকা পরিশোধ করে সেটা আবার লাগাতে হয়, এই চুরির সঙ্গে আরইবির (পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড) কর্মীরা জড়িত- সাংবাদিকরা এ বিষয়ে জানতে চাইলে আরইবির চেয়ারম্যান মঈন উদ্দিন বলেন, ‘জনগণের ভোগান্তি হচ্ছে এজন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। তবে মাইকিং করি টাকা দেয়ার দরকার নেই। আমরা মানুষকে সচেতন করছি। দালাল তো আসে টাকা পায় বলে।’
তিনি বলেন, ‘যারা দুর্নীতির সাথে জড়িত আমরা তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছি। তাদেরকে চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে কিংবা অন্য ধরনের শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৬ জন জিএম, ডজনখানেক ডিজিএম শাস্তি পেয়েছেন। একটা গ্রুপ আছে যারা এদের সঙ্গে মিলেমিলে অন্যায় করছে।’
Advertisement
ট্রান্সফরমার চুরি বা পুড়ে যাওয়া সন্তোষজনক হারে কমে গেছে বলেও দাবি করেন চেয়ারম্যান।
বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব আহমদ কায়কাউস এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘উত্তরাঞ্চলের বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। এখানকার বিদ্যুৎ বিভ্রাট মূলত পিক আওয়ারে, নরমালি সারাদিনে বেশি হচ্ছে না।’ এ সময় তিনি বলেন, কয়লা পেলেই এই মাসের মাঝামাঝি থেকে বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র পুরোপুরি চালু করতে পারব বলে আমরা বিশ্বাস করি।
‘বিভ্রাট যাতে না হয় সেজন্য কয়লা আমদানি কীভাবে করা যায় আমরা সেটা নিয়েও কাজ করছি। আশা করি এই মাসের পর থেকে উত্তরাঞ্চলের বিদ্যুৎ বিভ্রাট আর থাকবে না’- যোগ করেন সচিব।
উৎপাদনের সাথে সাথে ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশনের কাজ সমানতালে চলছে বলেও জানান বিদ্যুৎ সচিব।
মিটার রিডারদের দৌরাত্ম্য কবে কমবে জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘প্রি-পেইড মিটার পুরোপুরি চালু হলে মিটার রিডারদের আর প্রয়োজন হবে না। সারাদেশে ৩ কোটি ৮ লাখ গ্রাহকের মধ্য থেকে মাসে ৫০০ থেকে ১ হাজারের মতো অভিযোগ আসে। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি এখানে জিরো টলারেন্স আসবে।’
বিদ্যুৎ সচিব বলেন, ‘বিমসটেকে (বঙ্গোপসাগরীয় দেশগুলোর বহুমাত্রিক অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতা জোট) একটি এমওইউ (সমঝোতা স্মারক) স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর মাধ্যমে সাত দেশের মধ্যে আন্তঃদেশীয় গ্রিড স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী (নসরুল হামিদ বিপু) কিছুদিন আগে নেপাল সফর করেছেন, সেখানে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। একইসঙ্গে ভুটানের সঙ্গেও চুক্তি স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া চলছে। আন্তঃদেশীয় ও দ্বিপাক্ষিক বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজ চলছে।’
আরএমএম/এসআর/আরআইপি