বাংলা লোক সঙ্গীতের কিংবদন্তি শিল্পী আব্দুল আলীমের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৭৪ সালের এই দিনে ঢাকায় তৎকালীন পিজি হাসপাতালে মারা যান তিনি।
Advertisement
লোক সঙ্গীতকে অবিশ্বাস্য এক উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন আব্দুল আলীম। পল্লীগীতি, ভাটিয়ালি, দেহতত্ত্ব, মুর্শিদী, ইসলামী আর এসব গানের শিল্পী হিসেবে আজও তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী। কণ্ঠস্বরের অসাধারণ প্রতিভা নিয়ে ১৯৩১ সালের ২৭ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার তালিবপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন দরাজ কণ্ঠের অধিকারী এই শিল্পী।
পেশাগত জীবনে আব্দুল আলীম ছিলেন ঢাকা সঙ্গীত কলেজের লোকগীতি বিভাগের অধ্যাপক। কৈশরেই গায়ক হিসেবে নাম করেছিলেন তিনি। মাত্র ১৩ বছর বয়সে তার গানের প্রথম রেকর্ড হয়।
অর্থনৈতিক অনটনের কারণে কোনো শিক্ষকের কাছে গান শেখার সুযোগ পাননি আবদুল আলীম। অন্যের গান শুনে শিখতেন তিনি। আর বিভিন্ন পালা পার্বণে সেগুলো গাইতেন।
Advertisement
১৯৪২ সালে শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হক যান কলকাতা আলিয়া মাদরাসায়। তখন উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন কেবল শুরু হয়েছে। শেরে বাংলার আগমণ উপলক্ষে সেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বড় ভাই শেখ হাবিব আলী আব্দুল আলীমকে নিয়ে যান সেই অনুষ্ঠানে। তিনি ধীর পায়ে মঞ্চে এসে গাইলেন, ‘সদা মন চাহে মদিনা যাবো।’এ সময় আবদুল আলীমের গান শুনে ‘শেরে বাংলা’ শিশুর মতো কেঁদে ফেলেন। কিশোর আলীমকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। এরপর বাজারে গিয়ে পাজামা, পাঞ্জাবী, জুতা, পুটি, মোজা সব কিনে দেন। আব্দুল আলীমের যেসব গান আজও আমাদের মুগ্ধ করে তারমধ্যে রয়েছে – নাইয়া রে নায়ের বাদাম তুইলা, সর্বনাশা পদ্মা নদী, হলুদিয়া পাখী, মেঘনার কূলে ঘর বাঁধিলাম, এই যে দুনিয়া, দোল দোল দুলনি, দুয়ারে আইসাছে পালকি, কেন বা তারে সঁপে দিলাম দেহ মন প্রাণ, মনে বড় আশা ছিল যাবো মদীনায় ইত্যাদি।
বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’সহ বিভিন্ন বাংলা চলচ্চিত্রের গান করেছেন আব্দুল আলীম। এরমধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ‘লালন ফকির’। সব মিলিয়ে প্রায় ৫০০টির মতো গান রেকর্ড হয়েছিল তার।
যাদুকরী কণ্ঠের অধিকারী আব্দুল আলীম জীবদ্দশায় ও মরণোত্তর বেশ কয়েকটি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। এগুলোর মধ্যে একুশে পদক, পূর্বাণী চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার উল্লেখযোগ্য।
এমএমজেড/পিআর
Advertisement