কাগজের দাম বাড়ায় বাজারে সকল পাঠ্যবইয়ের দাম বেড়েছে। বিশ্ব বাজারে কাগজের দাম বাড়ায় বর্তমানে প্রায় দিগুণ দামে ছাপার কাগজ কিনতে হচ্ছে। ফলে পাঠ্যপুস্তকের দাম বেড়েছে- এমন দাবি মুদ্রণকারীদের।
Advertisement
তবে বিশ্ব বাজারে কাগজের দাম কমলেও বাংলাদেশে এর প্রভাব পড়েনি। অন্যদিকে বাধ্য হয়ে বেশি দামে বই কিনছেন শিক্ষার্থীরা।
রাজধানীর নীলক্ষেত, বাংলাবাজার, মিরপুর, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকার লাইব্রেরি ঘুরে দেখা গেছে, উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক, স্নাতকোত্তরসহ সকল পাঠ্যপুস্তকের দাম বেড়েছে। এছাড়া সরকারি-বেসরকরি চাকরির প্রস্তুতি গাইড, ব্যাংক, বিসিএস প্রস্তুতিসহ সকল ধরনের বই আগের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। হঠাৎ বইয়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই বই কিনতে গিয়ে বিক্রেতাদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ছেন। তবে দাম কম না পেয়ে বাধ্য হয়েই কিনছেন তারা।
তেজগাঁও কলেজে স্নাতকের শিক্ষার্থী ইসমত আরা ইমি তিন বান্ধবী মিলে গত রোববার নীলক্ষেতের বই বাজারে পাঠ্যপুস্তক কিনতে যান। বইয়ের দাম বেশি চাওয়ায় মার্কেটের অনেক দোকান ঘুরে তা যাচাই করেন। কিন্তু কোথাও কম না পাওয়ায় দিগুণ দামেই বইটি সংগ্রহ করেন।
Advertisement
জাগো নিউজকে তিনি বলেন, হঠাৎ করে বইয়ের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। যে বই দুই মাস আগেও ১০০ টাকায় পাওয়া গেছে, এখন তা চাওয়া হচ্ছে ২০০ টাকায়। চারটি বই কিনতে আসলেও বাড়তি দামের কারণে দুটি সংগ্রহ করেছি।
ইমির বান্ধবী স্বপ্না বলেন, দু-তিন মাস পরপরই পাঠ্যবই কিনতে হয়। কিন্তু এক লাফে তা দ্বিগুণ হতে পারে না। কিছুটা দাম বাড়ালে কোনো আপত্তি ছিল না, কিন্তু দ্বিগুণ দাম চাওয়ায় বাসা থেকে বাড়তি টাকাও নিতে পারছি না। অন্তত পাঠ্যপুস্তকের দাম স্বাভাবিক রাখা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নীলক্ষেতের এস কে বুক বিতানের মালিক আলমগীর জাগো নিউজকে জানান, গত দুই মাস ধরে বইয়ের দাম বাড়তি। বেশি দামে কিনতে হচ্ছে বলে বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছে। বাজারে কাগজের দাম বেড়ে যাওয়ায় বইয়ের দাম বেড়েছে।
একই দাবি বিভিন্ন মার্কেটের বই বিক্রেতাদের। তারা জানান, মূলত কাগজের দাম বেড়ে যাওয়ায় সব ধরনের বইয়ের দাম বেড়েছে।
Advertisement
জানা গেছে, দেশের সরকারি কাগজ মিল ছাতক ও পাকশী বন্ধ হয়ে গেছে। একমাত্র সরকারি কাগজ মিল কর্ণফুলী ও বেসরকরি ৫৫টি কাগজ মিল চালু রয়েছে। কর্ণফুলীতে বাজারদরের চাইতে বেশি দামে কাগজ বিক্রি হওয়ায় শুধুমাত্র সরকারি কিছু প্রতিষ্ঠান এ মিল থেকে কাগজ কিনে থাকে। এছাড়া বেসরকরি ৫৫টি প্রতিষ্ঠান থেকেই মূলত কাগজের চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে।
সম্প্রতি এসব প্রতিষ্ঠান পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে কাগজ রফতানি শুরু করায় দেশে কাগজের সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। কাগজের দাম বাড়ার এটিও একটি কারণ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া বর্তমানে বিশ্ব বাজারে কাগজের দাম কমলেও বাংলাদেশে কাগজের দামে সেই প্রভাব পড়েনি। বেশি দামেই তা বিক্রি হচ্ছে।
বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক তোফায়েল আহমেদ এ প্রসঙ্গে জাগো নিউজকে বলেন, বিশ্ববাজারে কাগজের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি টন ৬২০ ডলার বা ৫২ হাজার ৮০ টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা দরে) থেকে বেড়ে ৮২০ ডালারে অর্থাৎ ৬৯ হাজার ৭০০ টাকায় পৌঁছেছে। এছাড়া ডলারের দামও বেড়েছে। বেড়েছে কাগজের মন্ডের দামও। এসব কারণে বাংলাদেশে কাগজের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। খরচ বেড়ে যাওয়ায় পাঠ্যপুস্তকের দামও বাড়ানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আগে প্রিন্টিং কাগজ প্রতি টন ৬৪ হাজার টাকায় কেনা গেলেও বর্তমানে তা এক লাখ টাকার বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। এর মধ্যে সরকারকে ৬১ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। ফলে ১০০ টাকার কাগজের দাম ১৬১ টাকা পড়ছে।
‘পাঠ্যপুস্তকের দাম সহনীয় রাখতে মুদ্রণ শিল্প সমিতির পক্ষ থেকে সরকারি শুল্ক কমানোর দাবি জানালেও তা আমলে নেয়া হচ্ছে না। এ কারণে বইয়ের দাম বেড়েছে’- যোগ করেন তিনি।
এমএইচএম/আরএস/এমএআর/পিআর