জাতীয়

তিন ধাপের পরিকল্পনায় গাড়ি চুরি!

তিন ধাপে সমন্বয় করে গাড়ি চুরির কাজ করে যাচ্ছে চক্রের সদস্যরা। প্রথমে তারা কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে টার্গেট করে। এরপর যাত্রীবেশে গাড়ি ভাড়া করে। পরিকল্পনা মাফিক নির্ধারিত স্থানে আসা মাত্র গাড়ির চালককে অস্ত্রের মুখে কব্জা করে গাড়ি ছিনতাই করে। দ্বিতীয় ধাপে ছিনতাইকৃত গাড়ির বডি ও কালার পরির্তনের (রিকনডিশন) কাজ করে। এরপর নতুন করে ওই গাড়ি বিক্রি করে তারা। গাড়ি ছিনতাই করতে গিয়ে প্রয়োজনে চালককে খুন করতে দ্বিধা করছেন না তারা। রোববার রাতে ঢাকার অদূরে সাভারের আমিনবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে সংঘবদ্ধ গাড়ি চুরি চক্রের ৭ সদস্যকে আটক করে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। আটককৃতরা হলেন মো. জাকির হোসেন (৪০), মোহসীন (৪০), মো. রহমান (৫০), মোমিনুর রহমান (৫৭), মোবারক হোসেন (৪০), মনির হোসেন (৩৭) ও হেলাল(৫২)। এ সময় আটকদের কাছে থেকে দু’টি প্রাইভেটকারও জব্দ করা হয়েছে। আটককৃতরা দীর্ঘদিন যাবৎ রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে গাড়িচুরি করে আসছে বলে জানায় র‍্যাব-৪ ব্যাটালিয়ন। সোমবার দুপুরে র‍্যাব-৪ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-৪ এর অধিনায়ক(সিও) খন্দকার লুৎফুল কবির। শাহাদাত হোসেন নামে এক গাড়ি চালকই মূলত ভুক্তভোগী। নিজের প্রাইভেটকার চালিয়ে রুজি রোজগার করেন। তার করা অভিযোগের ভিত্তিতেই চুরিচক্রের সদস্যরা আটক হন। শাহাদাত হোসেন জানান, গত ৩০ মে করিম ও মনির নামে দুইজন মাদারীপুর যাওয়ার কথা বলে আব্দুল্লাহপুর থেকে তার গাড়ি ভাড়া করে। যাওয়ার পথে সাভার থানা রোডের সামনে থেকে করিম তার স্ত্রী ও সন্তানকে তুলে নেয়। ওই দিন আনুমানিক রাত ৯ টায় মাদারীপুরের টেকেরহাট হাইওয়ের রোডে করিম তার স্ত্রী-সন্তানকে নামিয়ে দিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে। ঢাকার মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর ছানবাড়ির এলাকায় করিম ছুরিকাঘাত করে। পেছনে বসা মনির পিস্তল দিয়ে বুকে আঘাত করলে অজ্ঞান হারাই। পরে সুস্থ হয়ে জানতে পারি আমার গাড়ি নিয়ে পালিয়েছে তারা। তিনি বলেন, ছিনতাইকারীরা গাড়ি ফিরিয়ে দেবে বলে ফোন করে দেড় লাখ টাকা দাবি করে। বিকাশের মাধ্যমে কয়েক ধাপে ৯০ হাজার টাকা দিলেও গাড়ি ফেরত দেয়নি তারা। এ ব্যাপারে শ্রীনগর থানায় একটি মামলা করেও কোনো সমাধান হয়নি। পরে র্যাবকে বিষয়টি জানান তিনি। র‍্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) খন্দকার লুৎফুল কবির বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান শুরু করে র‍্যাব-৪ সদস্যরা। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পেরে রোববার দিবাগত রাত ১টায় সাভারের আমিন বাজার এলাকার খন্দকার হোসেন প্লাজার সামনে থেকে তাদের আটক করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে (ঢাকা মেট্রো-ঘ ০২-২৯৭৩) এ্যাশ কালারের পুরাতন টয়টা গাড়ি জব্দ করা হয়। রোববার ভোর ৪টায় হেমায়েতপুর কাচাবাজারের লালন টাওয়ার থেকে এই চক্রের অপর তিন আসামিকে আটকসহ একটি সাদা রংয়ের টয়োটা (ঢাকা মেট্রো-গ ১৩-৭৭৭৬) গাড়ি জব্দ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে করিম ও মনির জানায়, শাহাদাতের ছিনতাই করা গাড়িটি বেলালের কাছে ৫০ হাজার টাকা দামে বিক্রি করে। এসময় মোহসীন গাড়িটির রং ও আকৃতি পরিবর্তনের জন্য নিয়ে যায়। চক্রটি তিন ধাপে গাড়ি চুরি ও বিক্রির কাজ করে আসছে। প্রথমে যাত্রীবেশে গাড়ি ভাড়া নিয়ে সুবিধাজনক স্থানে গিয়ে অস্ত্রের মুখে গাড়ি ছিনতাই। দ্বিতীয় ধাপে ছিনতাইকৃত গাড়ি রং ও আকৃতি পরিবর্তনের কাজ করে এবং শেষ ধাপে অল্প টাকায় দ্রুত তা বিক্রি করে। এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।জেইউ/এসএইচএস/এমআরআই

Advertisement