সফলতার জন্য বয়স বা সময় কোন ব্যাপার নয়। যে কোন বয়সে, যে কোন সময়ে সফল হওয়া যায়। আর সেটাই প্রমাণ করলেন নানজীবা খান। তিনি একাধারে ট্রেইনি পাইলট, সাংবাদিক, পরিচালক, উপস্থাপকা, লেখক, ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর, বিএনসিসি ক্যাডেট অ্যাম্বাসেডর, ইউনিসেফের তরুণ প্রতিনিধি এবং বিতার্কিক। নানামুখী প্রতিভার অধিকারী এই নারীকে নিয়ে আজকের আয়োজন-
Advertisement
বিদেশ ভ্রমণ: সম্প্রতি তিনি নেপালে বাংলাদেশের একমাত্র তরুণ প্রতিনিধি হিসেবে ইউনিসেফ দক্ষিণ এশিয়া আয়োজিত ‘তরুণ প্রজন্মের উন্নয়ন’ বিষয়ক ৩ দিনের সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর পক্ষ থেকে ইউনেস্কো, জাতিসংঘ, ইউনিসেফসহ বিভিন্ন দেশের সনামধন্য প্রতিনিধিদের সামনে তুলে ধরেন সমস্যা ও সমাধানের পরিকল্পনা। তবে এটিই প্রথম নয়, ২০১৭ সালেও তিনি দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়াকালীন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিএনসিসি ক্যাডেট অ্যাম্বাসেডর হিসেবে ভারতে রাশিয়া, ভারত, সিঙ্গাপুর, কাজাকিস্তান, কিরকিস্তান, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপসহ মোট ১১টি দেশের সামনে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
কর্মকাণ্ড: নানজীবা খান বর্তমানে অ্যারিরাং ফ্লাইং স্কুলে ‘ট্রেইনি পাইলট’ হিসেবে অধ্যয়ন করছেন। এছাড়া একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের ‘হ্যালো’ বিভাগের সাংবাদিক, দুটি টেলিভিশনের নিয়মিত উপস্থাপক, ব্রিটিশ আমেরিকান রিসোর্স সেন্টারের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করছেন। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা হিসেবে পেয়েছেন ইউনিসেফের ‘মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড’।
> আরও পড়ুন- ক্যাপ্টেন এনাম তালুকদারের বিচিত্র জীবন
Advertisement
গবেষণা: দুই বছরের গবেষণা শেষে ২০১৮ সালের বইমেলায় অন্বেষা প্রকাশন থেকে তার লেখা প্রথম বই ‘অটিস্টিক শিশুরা কেমন হয়’ প্রকাশিত হয়। বইটির প্রচ্ছদও করেছেন নানজীবা। বইটির মোড়ক উন্মোচন করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক শাহ আলমগীর, ব্যবসায়ী এম এন এইচ বুলু, ইংল্যান্ডের সাবেক প্রেসমন্ত্রী রাশেদ চৌধুরী।
রংতুলি: নানজীবা শুরুটা করেছিলেন রংতুলি দিয়ে। হাতে কলম ধরার আগেই পাঁচ বছর বয়সে মায়ের হাত ধরে গিয়েছিলেন কিশলয় কচিকাঁচার মেলায় ছবি আঁকা ও আবৃত্তি শিখতে। ২০০৭ সালে জীবনের প্রথম প্রতিযোগিতা ‘জয়নুল-কামরুল ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেন পেন্টিং কম্পিটিশনে’ জীবনের ১ম অর্জনই ছিল আন্তর্জাতিক।
মিডিয়া জীবন: ২য় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বাংলাদেশ টেলিভিশনের ‘কাগজ কেটে ছবি আঁকি’ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মিডিয়া জীবন শুরু করেন। বর্তমানে বিটিভিতে ‘আমরা রঙ্গিন প্রজাপতি’, ‘আমাদের কথা’, ‘আনন্দ ভুবন’ ও ‘শুভ সকাল’ অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করছেন। এছাড়া একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের নিয়মিত অনুষ্ঠান ‘কথাবার্তা’ উপস্থাপনা করছেন।
> আরও পড়ুন- বাঁশির সুরে চলে অন্ধ সুভাষের সংসার
Advertisement
পরিচালনা: ১৩ বছর বয়সে জীবনের প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘কেয়ারলেস’ পরিচালনা করেন। জীবনের প্রথম প্রামাণ্যচিত্র ‘সাদা কালো’ পরিচালনার জন্য ইউনিসেফের ‘মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করেন। এরপর ‘গ্রো আপ’, ‘দি আনস্টিচ পেইন’সহ কিছু প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করেছেন। তার ৭ম শর্টফিল্ম ‘দি আনওয়ান্টেড টুইন’র শুটিং শেষ। এখন এডিটিং ও পোস্ট প্রোডাক্টশনের কাজ চলছে।
সাক্ষাৎকার গ্রহণ: ৮ম শ্রেণিতে পড়াকালীন ঢাকার সাড়ে ৩ হাজার প্রতিযোগীকে টপকে শিশু সাংবাদিক হিসেবে যাত্রা শুরু করেন। জীবনের ১ম সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন সাকিব আল হাসানের। পর্যায়ক্রমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সংস্কৃতিমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, ভূমিমন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রী, বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী, সমাজকল্যাণমন্ত্রী, টেলিযোগাযোগমন্ত্রী, তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী, স্পিকার, মেয়র, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, সেলিনা হোসেন, ইমদাদুল হক মিলন, ফরিদুর রেজা সাগর, জুয়েল আইচ, র্যাব প্রধান, ওয়ার্ল্ড ডিবেট সোসাইটির পরিচালক অ্যালফ্রেড স্নাইডার ও ভারতের রক্ষামন্ত্রীসহ এ পর্যন্ত ৮০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নিয়েছেন।
বিতার্কিক: একাদশ শ্রেণিতে পড়াকালীন দ্বায়িত্ব পালন করেছেন ক্যামরিয়ান ডিবেটিং সোসাইটির ‘ভাইস প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে। স্কুল ও কলেজ জীবনে বিতার্কিক হিসেবে অর্জন করেছেন বেশ কিছু জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পুরস্কার। পেয়েছেন উপস্থিত ইংরেজি বক্তৃতায় বিএনসিসি ও ভারতেশ্বরী হোমসের প্রথম পুরস্কার।
> আরও পড়ুন- সবার কাছে তিনি মানবতার ফেরিওয়ালা
অন্যান্য: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। বিএনসিসি প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে করেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ‘রাইফেল ফায়ারিং’, ‘অ্যাসল্ড কোর্স’, ‘বেয়নেট ফাইটিং’ ও ‘সশস্ত্র সালাম’।
যা বললেন: নানজীবা বলেন, ‘আমার সবকিছুর প্রেরণা আমার ছোটভাই ও আমার মা।’ অল্প বয়সে এমন অর্জন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘কাজ শেখার চেষ্টা করছি। সবার দোয়া থাকলে আশা করি লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব। আমার লক্ষ্য আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশকে তুলে ধরা। আমি চাই- আমার কাজের মাধ্যমে মানুষ বাংলাদেশকে চিনুক।’
এসইউ/জেআইএম