জাতীয়

ইথিওপিয়ান নাগরিকের হাত ধরে ‘এনপিএস’ ব্যবসায় নাজিম

‘গ্রিন টি’ এর আড়ালে বাংলাদেশে অপরিচিত মাদক নিউ সাইকোট্রফিক সাবসটেনসেস (এনপিএস) আমদানি করে আসছিল মো. নাজিম। বাংলাদেশি এ মাদক ব্যবসায়ী বুঝে শুনেই ব্যবসায় নামেন। চাকরি সুবাদে এক সময় দুবাই থাকতেন তিনি। সেখানে আবিদুর ওরফে আবদুর নামে এক ইথিওপিয়ান নাগরিকের সঙ্গে পরিচয় হয় নাজিমের। মূলত ওই ইথিওপিয়ান নাগরিকের হাত ধরেই এনপিএস ব্যবসায় জড়ান তিনি।

Advertisement

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের হাতে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য জানিয়েছেন নাজিম।

সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একটি টিম শুক্রবার দুপুরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অভিযান চালিয়ে ৪শ’ কেজি এনপিএস জব্দ করে। যা চায়ের প্যাকেটের আড়ালে আনা হয়েছিল ক’দিন আগে।

এরপর নির্ভরযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর শান্তিনগরস্থ ‘শান্তিনগর প্লাজা’র দুই তলায় অভিযান চালিয়ে আরও প্রায় সাড়ে চারশ কেজি নতুন এ মাদকের চালান জব্দ করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। ওই সময় নাজিমকে গ্রেফতার করা হয়।

Advertisement

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, নিউ সাইকোট্রফিক সাবসটেনসেস (এনপিএস) নামে উদ্ভিদ জাতীয় এই মাদক স্থানীয়ভাবে ‘খাত’ নামে পরিচিত। দেখতে অবিকল চা-পাতার গুড়ার মতো। দেশে অপ্রচলিত হলেও ‘গ্রিন টি’ এর আড়ালে আমদানি করা হয়েছে এনপিএস।

এনপিএস বা ‘খাত’ ইয়াবার (মেথঅ্যামফিটামিন) মতোই স্টিমুলেন্ট ড্রাগ। যা মূলত চিবিয়ে বা পানিতে গুলিয়ে চায়ের মতো পান করা হয়। এতে ইয়াবার মতোই ক্লান্তি না আসা, ঘুম না হওয়াসহ শারীরিক বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়।

এ ব্যাপারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক (গোয়েন্দা শাখা) নজরুল ইসলাম শিকদার জাগো নিউজকে বলেন, ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবার জিয়াদ মোহাম্মাদ ইউসু্ফের নামে এনপিএসের চালানটি পাঠানো হয়। এ দেশে নওয়াহিন এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নামে চালানটি পাঠানো হয়। চালানটি কয়েক দিন আগে ইথিওপিয়া থেকে কয়েকটি দেশ ঘুরে ঢাকায় আসে।

এরপরই দুই দফার অভিযানে বিমানবন্দর ও শান্তিনগর প্লাজা থেকে মোট ৮৬১ কেজি খাতসহ মো. নাজিমকে গ্রেফতার করা হয়। জব্দকৃত এনপিএস এর আনুমানিক মূল্য ১ কোটি ২৯ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ টাকা।

Advertisement

নজরুল ইসলাম শিকদার বলেন, এক ধরনের গাছ থেকে এনপিএস তৈরি হয়ে থাকে। অধিদফতরের ‘খ’ ক্যাটাগরির এ নয়া মাদক অনেকটা চায়ের পাতার গুঁড়োর মতো দেখতে। পানির সঙ্গে মিশিয়ে তরল করে এনপিএস সেবন করা হয়।

তিনি বলেন, আফ্রিকান দেশগুলোতে এনপিএস অনেকটা স্বীকৃত। সেখান থেকেই আমদানি হওয়া এই মাদক বাংলাদেশের বাজারে উচ্চমূল্যে বিক্রি করছিল একটি চক্র।

তিনি বলেন, এটা বাংলাদেশে উৎপাদন হয় না। কিন্তু বাংলাদেশকে রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিদেশে পাচারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। এটা যাতে বাংলাদেশে প্রসার কিংবা পরিচিতি না পায় সেজন্য নিষিদ্ধের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে।

ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে ২০১৬ সাল থেকে আমদানি হচ্ছে এনপিএস :

নাজিমকে গ্রেফতারের অভিযানে অংশ নেয়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের এক পরিদর্শক জাগো নিউজকে বলেন, নাজিম খুব ধূর্ত প্রকৃতির লোক। এনপিএস এর ভয়াবহতা সম্পর্কে তার না জানা থাকলেও এটা যে অস্বীকৃত ও মাদকদ্রব্য তা জেনেই গ্রিন টি’র আড়ালে বিক্রি করে আসছিল।

তিনি বলেন, যাতে ধরা না পড়ে সেজন্য আমদানির ক্ষেত্রে ভুয়া নাম ব্যবহার করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দিতে চালানের কাগজে ‘নওয়াহিন এন্টারপ্রাইজ’ লেখা ছিল। প্রকৃতপক্ষে তার প্রতিষ্ঠানের নাম নওশিন এন্টারপ্রাইজ। চালানটি গত ৩০ আগস্ট আসা ওই চালানটি আটকের পর জানা যায়, গত ২০১৬ সাল থেকে এনপিএস আমদানি করে আসছে নাজিম।

এনপিএস ব্যবসায় আরও অনেকের নাম জেনেছে অধিদফতর :

খুচরা বাজারে ‘খাত’ বিক্রি করতো না নাজিম। রফতানির উদ্দেশ্যে ‘গ্রিন টি’র প্যাকেজে মোড়কজাত করে পাঠানো হতো ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে। দেশের বাজারে প্রতিকেজি ১৫ হাজার টাকা করে বিক্রি করতেন। তিনি এ পর্যন্ত ৪-৫টি চালান দেশে এনেছেন এবং দু’টি চালান বিদেশে পাঠিয়েছেন। এই ব্যবসায় আরও বেশ ক’জনের নাম জানিয়েছেন নাজিম। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই প্রকাশ করছে না মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর।

জেইউ/এমবিআর/জেআইএম