আওয়ামী লীগ নেতারা দলটির প্রতিষ্ঠাতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করেন না- বিভিন্ন সময়ে এমন অভিযোগ করেন বিএনপি নেতারা। এবার সেই একই অভিযোগে অভিযুক্ত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি!
Advertisement
চার দশক পূর্তিতে গত শনিবার রাজধানীতে জনসভা করে দলটি। এতে প্রায় অর্ধশত নেতার বক্তব্যে দলটির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত জিয়াউর রহমানের নাম শোনা গেলেও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য প্রয়াত মশিউর রহমান যাদু মিয়া, বিচারপতি আব্দুস সাত্তার, শাহ আজিজুর রহমানের নাম মুখে আনেননি কেউ। এমনকি গোটা জনসভাজুড়ে দেখা যায়নি তাদের ছবি সম্বলিত ফেস্টুন কিংবা ব্যানার। বিষয়টি নিয়ে জাগো নিউজের পক্ষে বিএনপি নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। জনসভায় ‘সময় স্বল্পতা’র কারণে তারা প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের নাম উল্লেখ করতে পারেননি বলে জানান।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর জনসভায় অনুপস্থিত ছিলেন কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং লন্ডনে অবস্থানরত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ কারণে জনসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রতিষ্ঠাকালীন ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক ও বর্তমান স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। জনসভায় সভাপতিত্ব করেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মো. কামরুজ্জামান রতন এ বিষয়ে বলেন, ‘সবারই সময়ের সীমাবদ্ধতা ছিল। বক্তব্যের আগে আমাকে বলা হয়, সময় কিন্তু এক মিনিট। পরবর্তী সময়ে এই ভুলটা যেন আর না হয়, খেয়াল রাখা হবে।’
Advertisement
ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘আসলে জনসভায় এতো বক্তা, সবাই সীমিত সময়ের মধ্যে বক্তব্য শেষ করেছেন। সেক্ষেত্রে যাকে ঘিরে অর্থাৎ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা; স্বাভাবিকভাবে তার নাম চলে আসে। এছাড়া দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নামও চলে আসে।’
তিনি বলেন, ‘তবে শাহ আজিজুর রহমানসহ যারা এ দলের প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছেন তাদের কখনই ভুলা সম্ভব নয়। জনসভায় যদি নামগুলো নেয়া যেতো আরও ভালো হতো। সময়ের অভাবে হয়তো সেটা সম্ভব হয়নি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চেয়ারপারসনের একজন উপদেষ্টা বলেন, ‘অপেক্ষাকৃত কনিষ্ঠ নেতারা প্রতিষ্ঠাতাদের স্মরণ না করলেও প্রধান অতিথি বা সভাপতির মুখে এসব নাম উচ্চারণ হলে ভালো হতো। কারণ বেগম খালেদা জিয়া বা তারেক রহমানের পর তারাই দায়িত্বশীল ব্যক্তি। তাদের বক্তব্য শুনতেই লাখ লাখ জনতা জনসভায় এসেছিল।’
এ প্রসঙ্গে জনসভার প্রধান অতিথি ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘যিনি দলের প্রতিষ্ঠাতা, তাকে স্মরণ করা হয়েছে। এরপর যে সব নেতা দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন, পরিশ্রম করেছেন; তাদের। আমাদের এতো নেতা ছিল যে, নাম বলতে লাগতো পাঁচ মিনিট, অথচ আমাকে সময় দেয়া হয়েছিল ১০ মিনিট।’
Advertisement
‘বিভিন্ন সময়ে আপনারাই তো আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে বলেন যে, তারা তাদের প্রতিষ্ঠাতাকে স্মরণ করেন না- এ বিষয়ে মোশাররফ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হলেন মওলানা ভাসানী। তার নাম স্মরণ না করা আর এখানে মশিউর রহমান যাদু মিয়াসহ অন্যদের নাম স্মরণের বিষয়টি এক নয়।’
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে প্রয়াত মশিউর রহমান যাদু মিয়ার নাতি ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল খুব বেশি উদার মনের পরিচয় দিতে পারেননি, বিশেষ করে তাদের প্রতিষ্ঠাতাদের বিষয়ে। যাদু মিয়া সেসময় কেবল জিয়াউর রহমানকে দল গঠনে সহযোগিতা করেননি, সুপরামর্শও দিয়েছেন। এখন তারা যদি স্মরণ না করেন…, তাদের (প্রতিষ্ঠাতা সদস্য) যে অবদান; বর্তমান নেতৃত্ব স্বীকার না করলেও আমার মনে হয় না তারা ইতিহাসে খাটো হবেন। ইতিহাস যেভাবেই হোক তাদের অবদান স্বীকার করবে।’
প্রসঙ্গত, ন্যাপ ভাসানী, জাগদল, মুসলিম লীগ (শাহ আজিজ) ও তফসিলি জাতীয় ফেডারেশন- এই চারটি দল মিলে ১৯৭৮ সালে ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি প্রতিষ্ঠিত হয়। জিয়াউর রহমান হন প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান।
কেএইচ/জেএইচ/এমএআর/এমএস