আহমদ সাবিত। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ১৯৯৯-২০০০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিলেন। ক্যাম্পাস থেকে বিদায় নিয়েছেন এক যুগ আগে। কিন্তু তার হাতে লেখা বেশ কয়েকটি ‘শিট’ (নোট) হাত বদলে এখনও চলছে নতুনদের মাঝে। এসব প্রশ্নের নতুন শিট বা নোট তৈরির মানসিকতা নেই নতুনদের মধ্যে।
Advertisement
আবার অর্থনীতি বিভাগের ২০০৪-০৫ শিক্ষাবর্ষের বেলাল উদ্দিন এবং ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের মতিনুর রহমানের তৈরি অধিকাংশ নোট বা শিট বর্তমান শিক্ষার্থীরা পড়ছে।
একইভাবে আইন বিভাগের ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষের আয়াজ আজাদের, ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের ২০০১-০২ শিক্ষাবর্ষের সোনিয়ার হাতে লেখা শিটও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে চলমান।
এভাবে যুগের পর যুগ চলছে সাবেকদের লেখা নোট। বর্তমান শিক্ষার্থীরা তাদের সৃজনশীলতার পরিচয় দিয়ে নতুন নোট তৈরিতে অনাগ্রহী।
Advertisement
এর কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, বিভাগ সৃষ্টির পর থেকে সকল বিভাগেরই কিছু কিছু বিষয় আছে যা কখনও পরিবর্তন করা হয়নি। ঘুরে ফিরে একই টপিকস শেখানো হয় শিক্ষার্থীদের। যার কারণে সহজেই সাবেকদের তৈরি নোট নতুনদের হাতে আসে। ফলে শিক্ষার্থীরা একটি বিষয়ের ওপর একাধিক রেফারেন্স বই না পড়ে সাবেকদের তৈরি নোট পড়েই ভালো রেজাল্ট নিয়ে ক্যাম্পাস ছাড়ছেন। এতে তারা শুধু একটি সার্টিফিকেটই লাভ করছেন, পরিপূর্ণ জ্ঞানটা আর অর্জন হচ্ছে না তাদের।
বাংলা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ইমন আহমদ বলেন, সাবিত ভায়ের রবীন্দ্রনাথের প্রাচীণ ও লোক সাহিত্যের শিট দুটি চতুর্থ বর্ষে পড়েছি।
নতুন করে নোট তৈরি না করার কারণ সম্পর্কে একবাক্যে বলেন, ‘এত কষ্ট করে নোট তৈরি করে কী লাভ? চলছে তো!’
অর্থনীতি বিভাগের ২০০৪-০৫ শিক্ষাবর্ষের বেলাল বলেন,‘অনেক আগে ক্যাম্পাস ছাড়লেও আমার তৈরি শিট চলছে এটা আমার জন্য গর্বের কিন্তু যারা পড়ছে তাদের জন্য দুর্ভাগ্যের। একটি নোট তৈরি করতে একাধিক রেফারেন্স বই পড়তে হয়েছে। যে আমার তৈরি নোট পড়ছে সে তো শুধু জিস্ট বা মূল অংশটুকুই জানলো। এর বাইরে তার জ্ঞান শূন্য। তাই প্রত্যেক শিক্ষার্থীর উচিত নিজে নিজে নোট তৈরি করা। তাহলে চাকরির পরীক্ষা বা অন্য কোনো পরীক্ষায় সমস্যা হবে না।’
Advertisement
একই মন্তব্য করলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক জহুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, যার মধ্যে কোনো সৃষ্টিশীলতা নেই সে ফাঁপা ঢোল। এই উন্নত পৃথিবীতে বিশ্বায়নের এ যুগে অন্যের নোট ত্যাগ করে নিজেকে সৃষ্টি করতে হবে। নিজের ক্রিয়েটিভিটির পরিচয় দিতে হবে। না হলে হোঁচট খেয়ে পড়তে হবে।
পরীক্ষায় একটি প্রশ্নের একই উত্তর অধিকাংশ শিক্ষার্থী লেখায় খাতা দেখায় বিরক্তি আসে বলে মন্তব্য করেন ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মনিরুজ্জামান।
তিনি বলেন, এতে একটি এভারেজ মার্ক চলে আসে। ছাত্ররা এখন অলস হয়ে গেছে। লাইব্রেরি ও পড়ার টেবিল ছেড়ে ফেসবুকে, আড্ডায় বেশি সময় পার করছে। এটা খুবই হতাশাজনক। এসব থেকে বেরিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়ার টেবিলে বসার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
ফেরদাউসুর রহমান সোহাগ/এফএ/জেআইএম