ফিচার

সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়ের আগে করণীয়

সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় :যেকোনো প্রয়োজনে সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়ের প্রয়োজন পড়ে। সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়ের আগে যে কাজটি সবচেয়ে জরুরী তা সেই সম্পত্তি সম্পর্কে ভালোভাবে খোঁজখবর নেওয়া। যেমন- সম্পত্তির মালিকানা বৈধ কিনা, সম্পত্তির কোনো ওয়ারিশ আছে কিনা, সম্পত্তিটি আগে কারো কাছে বিক্রয় করা হয়েছে কিনা সহ আরও বিভিন্ন দিক।

Advertisement

সম্পত্তি ক্রয়ের আগে :সম্পত্তি ক্রয়ের আগে অবশ্যই সেই সম্পত্তি সম্পর্কে ভালোভাবে খোঁজখবর নিতে হবে। বিক্রেতা যদি ওয়ারিশানসূত্রে সম্পত্তির মালিক হন তাহলে তার পূর্ববর্তী মালিকদের ধারাবাহিক ও বংশানুক্রমিক একটি তালিকা তৈরি করা দরকার। খোঁজ নিয়ে জানতে হবে বর্তমান মালিকের আগে যদি কেউ এই সম্পত্তির মালিক থাকেন তবে এই সম্পত্তির উপর তার বৈধ স্বত্ব ছিল কিনা। যদি থাকে তাহলে সময় প্রবাহে তাদের মালিকানা স্বত্ব খর্ব করা হয়েছে কিনা তাও খোঁজ নিতে হবে। ওয়ারিশানসূত্রে প্রাপ্ত বিক্রেতার সম্পত্তির উপর অন্য কোন ওয়ারিশানের হক আছে কিনা এবং থাকলে ছাহাম বন্টন হয়েছে কিনা।

বিক্রেতা ক্রয়সূত্রে বিক্রয়কৃত সম্পত্তির মালিক হলে, সে যার নিকট হতে সম্পত্তি ক্রয় করেছে তাহার বৈধ মালিকানা-স্বত্ব ছিল কিনা এবং থাকলে সঠিক রেজিষ্ট্রি করে স্বত্বান্তর করা হয়েছে কিনা। বিক্রেতার মালিকানা-স্বত্ব সম্পর্কীয় চেক, পরচা, নকশা ইত্যাদি পরীক্ষার পর সম্পত্তিসম্পর্কীত ইতিপূর্বে সম্পাদিত দলিল দস্তাবেজ যাহাকে ‘বায়া দলিল’ বলে পরীক্ষা করতে হবে। ইতিপূর্বে দলিল দস্তাবেজ বলতে মূল দলিল, বন্টননামা, হেবা-নামা, সালিশী আদালতে হুকুমজারী, ট্রাস্ট দলিল, ওয়াকফনামা, স্বত্ব প্রত্যার্পণ সম্পর্কিত কোন দলিলাদি, উইলের প্রবেট ইত্যাদি বোঝায়। বিক্রেতার স্বত্বের প্রমাণ হিসাবে দেওয়ানী আদালতের রায়ের কপি নামজারীর সইমোহরী কপি, সরকারী বা স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে প্রদত্ত কর বা খাজনার রসিদপত্র ইত্যাদি যাচাই করে দেখা উচিত।

আপনি যে সম্পত্তি ক্রয় করতে চাইছেন সেই সম্পত্তি বর্তমানে কার দখলে আছে। সম্পত্তি যদি অন্য কারও দখলে থাকে তাহলে তারা কেন, কতদিন ও কোন সূত্রে দখল করে আছে এং এতে বিক্রেতার স্বত্ব ক্ষুন্ন হয় কিনা তা যাচাই করতে হবে।

Advertisement

উপরোক্ত সব বিষয় ঠিকঠাক থাকলে আপনি যে সম্পত্তি ক্রয় করতে চাইছেন সেটি যে রেজিষ্ট্রেশন ও রাজস্ব দফতরের অধীন সেখানে গিয়ে এই সম্পত্তির কাগজপত্র ঠিকঠাক আছে কিনা সে বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া।

রাজস্ব দফতরে তল্লাশী:রাজস্ব দফতরে তল্লাশী বলতে কালেক্টরেট, রাজস্ব সার্কেল অফিস, সাব-ডিভিশনাল ম্যানেজার অফিস ও তহশিল অফিসে, যেখানে সম্পত্তিটির খাজনা প্রদত্ত হয় সেখানে অনুসন্ধান করা। এসব স্থান থেকে  খোঁজ নিয়ে এবং সইমোহরী কপি নিয়ে দেখতে হবে সম্পত্তিটি বিক্রেতার নামে আছে কিনা। তবে এই বিষয়টি মনে রাখতে হবে যে রাজস্ব দফতরে রক্ষিত কাগজপত্রেও অনেক সময় ভুলভ্রান্তি থাকে এবং মালিকের নামজারী করিয়াও চেক পরছা পাইতে অনেক সময় দেরী হয়ে  থাকে। এই ভুলভ্রান্তি বা বিলম্ব হেতু মালিকানা-স্বত্ব না লোপ পেয়েছে এরূপ ধারণা করা ঠিক হবে না, যদি পর্যায়ক্রমে মালিকানা-স্বত্ব ও দখল সঠিক বলিয়া গণ্য হয়ে থাকে।

রেজিষ্ট্রেশন অফিসে তল্লাশী :এছাড়া রেজিষ্ট্রেশন অফিসে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে হবে সম্পত্তিটি ইতিপূর্বে একই বিক্রেতা বা অন্য কাহারও দ্বারা বিক্রয় হয়েছে কিনা। রেজিষ্ট্রেশন অফিসে তল্লাশী করার জন্য লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যক্তি থাকে, এসব ব্যক্তিকে ‘সার্ভার’ বলা হয়। দাগ নম্বর বা দলিলদাতার নামের আদ্যক্ষর রেজিষ্ট্রেশন অফিসের ইনডেক্সে থাকে। একজন সার্চার তল্লাশী করে বুঝতে পারে দাগটি বিক্রয় হয়েছে কিনা, হয়ে থাকলে কতবার, কার দ্বারা এবং বর্তমানে কার নামে আছে ইত্যাদি। তল্লাশী ইচ্ছানুযায়ী যে কোন বৎসরের জন্য করা যায়, তবে স্থাবর সম্পত্তির তল্লাশী অনধিক বার বৎসরের জন্য করলে ভাল হয়।

সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়ের মেয়াদ ১ হতে ৩ বছর হলে থানা সাব রেজিষ্ট্রার অফিস এবং এর বেশী হলে জেলা রেজিষ্ট্রার অফিসে অনুসন্ধান করতে হয়। অনুসন্ধান ফি প্রথম বছরের জন্য ১০ (দশ) টাকা এবং পূর্ববর্তী প্রতি বছরের জন্য ১০ (দশ) টাকা হারে অতিরিক্ত ফি প্রদান করতে হয়।

Advertisement