জাতীয়

জবাবদিহি ছাড়া কমবে না সড়ক দুর্ঘটনা

‘দেশব্যাপী নিরাপদ সড়কের দাবিতে সম্প্রতি যে আন্দোলন হলো তা সরকারকে নাড়িয়ে দিয়ে গেছে। এরপর সরকার ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ে পদক্ষেপ নিতেও দেখা যাচ্ছে। কিন্তু বন্ধ হয়নি সড়কে মৃত্যুর মিছিল। সত্যিকার অর্থে জবাবদিহির শাসন যদি না থাকে, আইনের শাসন যদি কার্যকর না থাকে, তবে পদক্ষেপে কাজ হয় না। এবারের ঈদুল আজহার মৃত্যুর মিছিল তাই প্রমাণ করে।’

Advertisement

বলছিলেন, সেইফ রোড অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট এলায়েন্সের আহ্বায়ক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান।

শুক্রবার বেলা ১১টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

ঈদুল আজহায় সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন-২০১৮ প্রকাশ উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতি। এতে ঈদুল আজহায় দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান তুলে ধরেন সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

Advertisement

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঈদুল আজহার আগে ও পরে ১৩ দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ২৫৯ জন, আহত হয়েছেন ৯৬০। গত ঈদুল আজহার তুলনায় এবার সড়কে মৃত্যুর সংখ্যা ১৩ দশমিক ৫০ শতাংশ বেড়েছে।

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর সড়ক পরিবহন আইনের অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এরপর বিআরটিএ (বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ) কার্যালয়ে ভিড় লেগে গেছে। সরকার পদক্ষেপ অবশ্যই নিয়েছে এবং নিচ্ছে। কিন্তু মূল বিষয়ে আমাদের জোড়ালো নজর থাকা দরকার, তাহলো, পদক্ষেপ নেয়াটাই একমাত্র উদ্দেশ্য নয়, ওই আন্দোলন অজানা কোনো জিনিস আমাদের সামনে আনেনি। এই দুর্ঘটনা তো অহরহ ঘটে, যার তথ্য যাত্রীকল্যাণ সমিতি গত ৪ বছর ধরে প্রকাশ করে আসছে। আসলে জবাবদিহি নেই। আমরা জবাবদিহির জায়গায় কোথায়? সেটা দেখার বিষয়।

তিনি বলেন, সরকারের পদক্ষেপগুলো যেন বিশ্বাসযোগ্যতার জায়গা তৈরি করতে পারে, সেজন্য আমাদের জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা কার্যকর করতে হবে। হেভি লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে যোগ্যতা শিথিল করা হয়েছে। আবার বিআরটিএতে ভিড় বাড়লেও যথাযথ প্রক্রিয়ায় ফিটনেস ও লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে না বলেও সংবাদপত্রে উঠে এসেছে।

গত ২৯ আগস্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় এনা পরিবহনের একটি বাস খাদে পড়ে তিনজন নিহত হন

Advertisement

‘সড়ক দুর্ঘটনা সব দেশেই হয়। কিন্তু আমাদের দেশের সড়কের মৃত্যু কেন ব্যথিত করছে? আসলে এ ধরনের দুর্ঘটনায় মৃত্যু কখনো কাম্য নয়। কারণ দুর্ঘটনার পেছনে হেলপার-চালকের স্বেচ্ছাচারিতা, মালিকপক্ষের কারণে চালকদের প্রতিযোগিতা, উদাসীনতা, বেপরোয়া আচরণই দায়ী’,- বলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা।

বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, কোমলমতি শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছে, এমন ঘটনা বিশ্বে বিরল। সেই আন্দোলনের পর আমাদের চোখ মনে হয় বন্ধ হয়ে গেছে। মৃত্যুর মিছিল তাই প্রমাণ করছে। পরিবহন ব্যবস্থাকে বিরাজনীতিকরণ যে কথাগুলো আমরা বলে আসছি, তা কিন্তু হচ্ছে না। দেশের দুজন মন্ত্রী পরিবহন ব্যবস্থার ব্যাপারে নীতি নির্ধারক। তারাই আবার মালিক ও শ্রমিক নেতা। তাহলে যাত্রীর স্বার্থরক্ষা করবে কে?

‘ফাঁক-ফোকর রেখে সড়ক পরিবহন আইন তৈরি করা হয়েছে, যাতে করে মালিক ও শ্রমিক উভয়পক্ষের স্বার্থ রক্ষা করা যায়।এবারই প্রথম সড়কে দুর্ঘটনার তদন্তের জন্য সরকার তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছে। দেশের বড় বড় ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠনের প্রেক্ষাপট দেখেছি। কিন্তু সরকার কর্তৃক গঠিত কোনো কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন কি আমরা দেখেছি? দেখিনি। সড়কের দুর্ঘটনার ব্যাপারে কমিটি গঠন করার উদ্দেশ্যে আমার কাছে মনে হয় মুখ বন্ধ রাখার কৌশল’,- বলেন তিনি।

বিআরটিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আইয়ুবুর রহমান খান বলেন, এতো প্রচেষ্টার পরও সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামছে না। ৫০ থেকে ৬০টি দিক দেখে গাড়ির ফিটনেস দেয়া হয়। চোখে দেখে তা সম্ভব না। কিন্তু আমাদের এখানে চোখে দেখেই ফিটনেস দেয়া হয়, যা পৃথিবীর কোথাও নেই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভেইকেল ইনস্ট্রাক্টর সেন্টার চালু হয়েছে। আমাদের দেশেও তা চালু করা হোক। প্রাইভেট সেক্টরও এখন শক্তিশালী। সেখানেও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সম্ভব।

‘ঢাকায় ফিটনেসবিহীন গাড়ি উঠিয়ে দেবার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। কিন্তু তা আবার মফস্বলে গিয়ে তো একই দুর্ঘটনা ঘটাবে। সব জায়গায় দুর্নীতি হলেও তা সরাসরি মানুষের ওপর প্রভাব পড়ে না। কিন্তু বিআরটিএ ও হাইওয়ে পুলিশ যদি দুর্নীতি করে তার প্রভাব বেশি ফেলে, কারণ এর সঙ্গে মানুষের সরাসরি অংশগ্রহণ রয়েছে।

জেইউ/জেডএ/পিআর