ক্রিকেটে ইতিহাসের বিরলতম ঘটনার একটি হচ্ছে ওভারের ছয় বলে সব ক’টিতেই ছক্কা হাঁকানো অর্থ্যাৎ ছয় বলে ছয় ছক্কা। প্রায় দেড়শ বছরের ক্রিকেট ইতিহাসে এখনো পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাত্র দুইবার হয়েছে এই কীর্তি। তবে স্বীকৃত ক্রিকেটে ছয় বলে ছয় ছক্কার নজির রয়েছে মোট পাঁচটি।
Advertisement
এর মধ্যে সর্বপ্রথম ঘটনাটি ঘটে আজ থেকে ঠিক পঞ্চাশ বছর আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ৯১ বছর কেটে যাওয়ার পর ইংল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি অলরাউন্ডার স্যার গ্যারি সোবার্স ১৯৬৮ সালে নটিংহ্যামশায়ারের হয়ে গ্ল্যামারগনের বিপক্ষে গড়েছিলেন এই কীর্তি।
১৯৬৮ সালে ৩১ আগস্ট তারিখ শনিবারে টসে জিতে আগে ব্যাট করতে নামে নটিংহ্যামশায়ার। একপর্যায়ে ৫ উইকেট হারিয়ে ৩০৮ রান করে ফেলে তারা। তখন শীঘ্রই ইনিংস ঘোষণার লক্ষ্যে দ্রুত রান তোলার পরিকল্পনা করেন উইকেটে থাকা গ্যারি সোবার্স। বোলিংয়ে আসেন বাঁহাতি পেসার ম্যালকম নাশ।
স্বভাবত বাঁহাতি পেসার হলেও অধিনায়কের সাথে পরামর্শ করে সে ওভারে বাঁহাতি অর্থোডক্স স্পিন করার সিদ্ধান্ত নেন নাশ। আর এতেই হয়ে যায় তার সর্বনাশ, হজম করেন ছয় বলে ছয়টি ছক্কা। বনে যায় ছয় বলে ছয় ছক্কা খাওয়া ইতিহাসের প্রথম বোলার।
Advertisement
রাউন্ড দ্যা উইকেটে বোলিং করতে নাশকে প্রথম দুই বলেই মিডউইকেট দিয়ে ছক্কা মারেন সোবার্স। প্রথম ছক্কা চলে যায় মাঠের বাইরে। দুই ছক্কা খেয়ে থতমত হওয়া নাশ পরের বলটা খানিক টেনে অফস্টাম্পের পাশে করেন। এবারের ছক্কাটাও তাই লংঅফের উপর দিয়েই মারেন সোবার্স।
তিন বলে তিন ছক্কা খেয়ে খেই হারিয়ে ফেলা নাশ পরের বলটি করেন লেগস্টাম্পের অনেক বাইরে। সামনের পা সরিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগ বাউন্ডারি দিয়ে আবারো ছক্কা মারেন সোবার্স। রানের নেশায় মত্ত সোবার্স আউট হতে পারতেন পরের বলে। কিন্তু লংঅফ বাউন্ডারিতে থাকা ফিল্ডার ক্যাচ নিয়ে সীমানার ওপারে চলে গেলে ওভারের পঞ্চম ছক্কা পেয়ে যান ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার।
পাঁচ বলে পাঁচটি ছক্কা মেরে তখন ইতিহাসের দ্বারপ্রান্তে সোবার্স। লজ্জার ইতিহাস তখন নাশের সামনেও। লজ্জা এড়ানোর ডেলিভারিটি করতে গিয়ে আবারো ভুল করেন নাশ। চতুর্থ ডেলিভারির মতোই করেন লেগস্টাম্পের অনেক বাইরে। পাঁচ ছক্কা মেরে টগবগ করতে থাকা সোবার্স সুযোগের পূর্ণ ফায়দা লুটেন। আবারো বিশাল ছক্কা হাঁকান ডিপ স্কয়ার লেগ বাউন্ডারি দিয়ে। হয়ে যায় ইতিহাসে প্রথম বারের মতো ছয় বলে ছয় ছক্কার রেকর্ড।
সেই ওভার শেষেই ইনিংস ঘোষণা করে দেয় নটিংহ্যামশায়ার। বীরের মতো মাথা উঁচু করে মাঠ ছাড়েন সোবার্স। পরে ১৯৭৭ সালে আগস্টের ২৯ তারিখে আবারো ৬ বলে ছক্কা খাওয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যান নাশ। তবে ওভারের দ্বিতীয় বলে ছয়ের বদলে চার হওয়ায় সেদিন ওভারে ৩৪ রান দিয়েই থামতে হয় তাকে।
Advertisement
১৯৭৭ সালে না হলেও ১৯৮৫ সালের রঞ্জি ট্রফিতে ছয় বলে ছক্কার দ্বিতীয় নজির স্থাপন করেন ভারতীয় অলরাউন্ডার রবি শাস্ত্রী। স্পিনার তিলাক রাজের ওভারে এই রেকর্ড গড়েন তিনি।
পরে ২০০৭ সালে হয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ছয় বলে ছয় ছক্কার দুইটি নজির। সে বছরের ওয়ানডে বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডের স্পিনার ড্যান ফন বুঙ্গের ওভারে ছয়টি ছক্কার মারেন দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান হার্শেল গিবস। একই বছর বিশ্ব টি-টোয়েন্টিতে ইংলিশ পেসার স্টুয়ার্ট ব্রডের এক ওভার থেকে পূর্ণ ৩৬ রান নেন ভারতীয় অলরাউন্ডার যুবরাজ সিং।
স্বীকৃত ক্রিকেটে এক ওভারে ছয় ছক্কার সবশেষ কীর্তিটি জর্ডান ক্লার্কের। ২০১৩ সালে ল্যাঙ্কাশায়ারের হয়ে ইয়র্কশায়ারের বিপক্ষে এই কীর্তি গড়েন তিনি। মাঝে ২০০৯ সালে বাংলাদেশের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও ৬ বলে ছয় ছক্কা মেরেছিলেন নাঈম ইসলাম। কিন্তু তখন ডিপিএলের লিস্ট ‘এ’ স্বীকৃতি না থাকায় রেকর্ডের পাতায় জায়গা হয়নি নাঈমের নাম।
এসএএস/এমএস