যশোর সরকারি সিটি কলেজ থেকে উদ্ধার হওয়া পলিথিনে মোড়ানো মরদেহটি সাথী আক্তারের (২৬)। সাথী আক্তার যশোরের চৌগাছা উপজেলার নায়ড়া গ্রামের আমজেদ আলীর মেয়ে এবং একই উপজেলার চাঁদপাড়া গ্রামের গোলাম মোস্তফার স্ত্রী। বুধবার মধ্যরাতে কলেজের মসজিদের পাশে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পলিথিনে মোড়ানো মরদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ। অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে উদ্ধার হলেও বৃহস্পতিবার রাতে ওই তরুণীর বাবা আমজেদ আলী তার পরিচয় শনাক্ত করেন।
Advertisement
তিনি জানান, দেড় মাস আগে সাথী স্বামীর বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর আর তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরকীয়া প্রেম নিয়ে স্বামীর সঙ্গে বিরোধের পর তিনি ঘর ছেড়েছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, বুধবার রাতে তারা উৎকট গন্ধ পেয়ে সিটি কলেজ মসজিদের কাছে ডোবার পাশে আসেন। সেখানে একটি ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখে তাদের সন্দেহ বাড়ে। এরপর স্থানীয় শান্তিশৃঙ্খলা কমিটির সদস্যরাও সেখানে আসেন। তারা এসে নিশ্চিত হন মরদেহ পলিথিনে মোড়ানো রয়েছে।
যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অপূর্ব হাসান জানান, স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে বুধবার রাত ১২টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে পলিথিনবন্দি মরদেহ দেখতে পায় পুলিশ।
Advertisement
পরে বৃহস্পতিবার নিহত তরুণীর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। এরপর বিকেল পর্যন্ত কোনো পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় মরদেহটি আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বিকেলেই সংগঠনটি মরদেহের দাফন সম্পন্ন করে।
এদিকে লোকমুখে খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে যশোর কোতোয়ালি থানায় আসেন যশোরের চৌগাছা উপজেলার নায়ড়া গ্রামের আমজেদ আলী। তিনি এসে মেয়ের বর্ণনা দিয়ে জানান, প্রায় দেড় মাস আগে তার মেয়ে স্বামীর বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। এ ঘটনায় স্থানীয় থানায় জিডিও করা হয়েছে। নিহতের বাবা আমজাদ আলী জানিয়েছেন, দশ বছর আগে সাথীকে চাঁদপাড়া গ্রামের গোলাম মোস্তফার সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে দেয়া হয়। তাদের ইয়াসিন নামে ৫ বছর বয়সের এক ছেলে রয়েছে।
সম্প্রতি সাথীর স্বামী গোলাম মোস্তফা অভিযোগ করেন, ডাচ বাংলা ব্যাংকে চাকরিরত এলাকার এক যুবকের সঙ্গে সাথীর পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মতোবিরোধ সৃষ্টি হয়।
এক পর্যায়ে সাথীর স্বামী চৌগাছা থানায় অভিযোগ করেন। ওই থানার এএসআই আব্দুল আলিম বিষয়টি মীমাংসাও করে দেন। কিন্তু মীমাংসার পরদিনই সাথী বাবার বাড়ি যাওয়ার কথা বলে স্বামীর বাড়ি থেকে রওনা হন। এরপর আর তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
Advertisement
এ ব্যাপারে সাথীর বাবা আমজাদ আলী বাদী হয়ে চৌগাছা থানায় একটি সাধারণ ডায়রিও করেছিলেন। কিন্তু দেড় মাসেও সেই সাধারণ ডায়রির কোনো কূল কিনারা করতে পারেনি পুলিশ।
এদিকে বৃহস্পতিবার টেলিভিশনের সংবাদ ও ছবি দেখে তারা কোতোয়ালি মডেল থানায় আসেন। তাদের কাছে থাকা ছবির সঙ্গে পুলিশের তোলা মরদেহের ছবি মিলিয়ে আমজাদ আলী নিশ্চিত হন মৃত তরুণী তার মেয়ে সাথী আক্তার।
এ দিন রাত ৯টার দিকে কোতোয়ালি থানার ওসি অপূর্ব হাসান সাথীর বাবা আমজাদ আলীকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে যান। সেখানেও তিনি মরদেহটি তার মেয়ে সাথীর বলে শনাক্ত করেন।
তবে বৃহস্পতিবার দাফন হওয়া সাথীর মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করে নেয়ার ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করেছেন আমজাদ আলী। এ বিষয়ে তিনি বাদী হয়ে মামলাও করতে রাজি হননি। সে কারণে পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি দিয়ে মামলা দায়ের করা হবে বলে থানা সূত্রে জানা গেছে।
মিলন রহমান/এফএ/এমএস