বিনোদন

ভালোবাসার গভীর অনুসন্ধানে প্রেমছবি

বিনোদনের জন্য বাংলা টিভি নাটক সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি এই টিভি নাটক দর্শকের মনের বাসনা পূরণ করতে পারছে। দর্শক চাহিদা চিন্তা করে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন উপাদানে। বাংলা টিভি নাটকের পাশাপাশি ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত নাটকগুলোও দর্শকপ্রিয়তা পাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। বিজ্ঞাপনের ঝঞ্ঝাটমুক্ত নাটকগুলো এক বসাতেই দেখে ফেলা যায়। ফলে অনেক টিভি নাটকও এখন ইউটিউব ভিত্তিক হয়ে উঠেছে। তেমনই একটি দীর্ঘ নাটক বা টেলিফিল্ম দেখলাম। এর নাম রাখা হয়েছে ‘প্রেমছবি’। নামের সার্থকতা খুঁজে পাওয়া গেল নাটকেই। ভালোবাসার কিছু নিখুঁত ছবি দেখলাম এ নাটকে।

Advertisement

জাফরিন সাদিয়ার কাহিনি, চিত্রনাট্য ও সংলাপে নাটকটি পরিচালনা করেছেন রুবেল হাসান। কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন জিয়াউল ফারুক অপূর্ব ও তানজিন তিশা। গল্পটি গতানুগতিক হলেও বেশ কয়েক জায়গায় গিয়ে বাঁক নিয়েছে। সমকালীন প্রেমের গল্পগুলো থেকে একটু আলাদা ধাচের কাহিনি চোখে পড়ে এতে। তবে সবশেষে সেই ‘প্রেমের জয়’ যা আমাদের দেখতেই হলো। যেহেতু বাঙালি মিলনে বিশ্বাসী। বিরহে কাতর বাঙালির জন্য ‘বড় ছেলে’ বা ‘বুকের বা’পাশে’ নাটকগুলো বেশি ইমোশনাল করতে পারে। সাদিয়ার ‘প্রেমছবি’ ইমোশনাল করলেও মিলনের দিকেই এগিয়ে যায়- এ ক্ষেত্রে সাদিয়া সফল।

নাটকের কাহিনিটা ছিমছাম। বাবার বন্ধুর মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে এগিয়ে যায় গল্প। প্রথমে যেতে চায় না জারিফ। মা-বাবা জোর করে তাকে নিয়ে যায় বিয়ে বাড়ি। সেখানে গিয়ে উদ্ভুত পরিস্থিতি কিছুটা ঘাবড়ে দেয় জারিফকে। কারণ সোমা নামের একটি মেয়েকে আগে থেকেই পছন্দ করেন জারিফের বাবা-মা। বিয়ে বাড়িতে আমন্ত্রিত স্বজনদের শরবত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে আগমন ঘটে সোমার। সেখানে সোমার আচরণ অনেকটা সিনেমাটিক। সোমাও জারিফের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে। এ ক্ষেত্রে পুরো ঘটনাটিই আরোপিত মনে হতে থাকে।

সবকিছু উপেক্ষা করে জারিফ তার পছন্দের মানুষকে আবিষ্কার করে জঙ্গলে। চাকরির পাশাপাশি ফটোগ্রাফির শখ জারিফের। তাই সে বিয়ে বাড়িতে বসে না থেকে চলে যায় পাশের জঙ্গলে। সেখানে ছবি তুলতে তুলতে আবিষ্কার করে ঐশীকে। জারিফের সঙ্গে আগে থেকেই যুক্ত হয় তার বন্ধু। ঐশীকে দেখার পর কাহিনি মোড় নিতে থাকে অন্য দিকে। তবে প্রথমে সবাই ভাববেন, এই মেয়ে হয়তো জারিফের জন্যই। কিন্তু যখন জানবেন, আজকের বিয়ের প্রধান আকর্ষণ বা কনেই হচ্ছে ঐশী; তখন চোখ কপালে তুলতেই পারেন।

Advertisement

ঐশীও ফটোগ্রাফিতে বিশেষ আগ্রহী। তাই তো সে পার্লারে যাওয়ার কথা বলে ছোটভাইকে সঙ্গে নিয়ে হাজির হয়েছে জঙ্গলে। একের পর এক ছবি তুলছে। কারণ সে একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে চায়। জঙ্গলে জারিফের সঙ্গে দেখা হওয়াতে ঐশীর ভালোই লেগেছে। সে জারিফকে দেখেই চিনতে পারে। কারণ তারা একসময় পাশাপাশি বাসায় ভাড়া থাকতো। শৈশবের স্মৃতিও রোমন্থন করে দু’জন। জারিফের বন্ধু জ্বিন-ভূতের ভয়ে ভীত হয়ে চলে যায় বাড়ি। জারিফ থেকে যায় ঐশীর সঙ্গে। ছবি তোলা শেষে ঐশীর গাড়িতে বাড়ি ফেরে তারা।

মূল গল্পটা ভিন্ন দিকে মোড় নেয়। এতক্ষণের ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হতে থাকে। গাড়িতে বসে মন খারাপ হয় জারিফের। এতদিন বাবা-মায়ের পীড়াপীড়িতে বিয়ে করতে রাজি না হওয়া জারিফ আজকের বিবাহের কনেকে পছন্দ করে বসেন। ওকেই মনে হয় এতদিন সে খুঁজছিল। পথ চলতে চলতে হঠাৎ খবর আসে, বরের গাড়ি সড়ক দুর্ঘটনার কারণে সময়মতো আসতে পারছে না। ফলে পরদিন পর্যন্ত বিবাহের আয়োজন স্থগিত করতে হয়। সেই রাতেই জারিফের সঙ্গে কথা হয় ঐশীর। তারা একে অপরকে মনের কথা বলতে পারে। কিন্তু সমাধান তখনো মাথায় আসে না কারোই।

এ পর্যন্ত এসে মনে হচ্ছিল- ঐশীর বিয়েটা আমেরিকা প্রবাসী ছেলের সঙ্গেই হচ্ছে। সবকিছুই ঠিকঠাক এগোচ্ছিল। বরযাত্রীও চলে এসেছে। কাজি সাহেব বিয়ে পড়াবেন এমন মুহূর্তে খবর আসে- ছেলে আমেরিকায় আরেকটি বিবাহ করেছে। সেই মহিলা দূতাবাসে অভিযোগ করেছে। এমন মুহূর্তে সংকটে পড়ে মেয়ের পরিবার। বন্ধুর সংকটাপন্ন অবস্থায় এগিয়ে আসে জারিফের বাবা। তিনি বলেন, ঐশীকে বিয়ে করবে জারিফ। কিন্তু জারিফ ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও মুখে না বলে। ফলে জারিফ ও ঐশীকে একান্তে পাঠানো হয় কথা বলতে। অনেক নাটকীয়তার পর ওরা দু’জন সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, একে অপরকে ভালোবাসে।

জারিফ-ঐশীর ভালোবাসা সফলতার মুখ দেখে। অন্যদিকে সোমা নামের মেয়েটি কষ্ট পায়। কিন্তু কষ্টটি বেশিক্ষণ দেখতে হয়নি। সোমার পরিণতিও অবশ্য নির্ধারণ করে দেয় জারিফ। জারিফের বন্ধুর সঙ্গে সোমার সম্পর্কটা পাকা হয়ে যায়। সবার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। একটি মধুর সমাপ্তির দিকে এগিয়ে যায় গল্প। তবে নাটকের গল্পে বিবাহের আবহ ও আয়োজনে কিছুটা ঘাটতি ছিল বলে মনে হতে পারে। তবে রাতের বেলা গানের আসরটা মন্দ নয়।

Advertisement

সে যা-ই হোক, একঘণ্টা পনেরো মিনিট দৈর্ঘের নাটকটি দর্শককে ধরে রাখতে সক্ষম হবে বলে আমার বিশ্বাস। তবে গল্প বা নির্মাণের কিছু ত্রুটি রয়েছে। যা হয়তো সবার চোখে পড়বে না। কিংবা বলতে পারেন, গল্প বা নির্মাণ হয়তো এভাবেই হয়ে থাকতে পারে। তবে নাটকে সময়, স্থান বা ঘটনার ঐক্যের দিকে আরেকটু নজর দিলে আরো ভালো হতে পারতো।

নাটকের অন্যান্য চরিত্রও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সবার অভিনয়ই ভালো লাগার মতো। নাটকটিতে আরও অভিনয় করেছেন খালেকুজ্জমান, সাবিহা জামান, জিয়াউল হাসান কিসলু, মৌ শিখা, সৈয়দ শাহেদ, তাসনিম তিফা, মাহদি হাসান পিয়াল, তানজিম হাসান অনিক, আতিকুর রহমান শিবলী প্রমুখ। চিত্রগহণ ভালো লেগেছে। এজন্য চিত্রগ্রাহককে ধন্যবাদ দিতে হয়। সবশেষে পরিচালককেও ধন্যবাদ সুন্দর একটি নির্মাণের জন্য। আশা করি তারা আরো ভালো কিছু আমাদের উপহার দিবেন।

নাটকটি দেখতে চাইলে-

এসইউ/এএ/জেআইএম