মানুষ সাধারণত দুঃখ পেলে বিমর্ষ হয়, মন খারাপ করে, হাহুতাশ করে থাকে আবার সুখ বা খুশির সংবাদে আনন্দ প্রকাশ করে। কিন্তু যে দুঃখ ও সুখ মানুষকে অবৈধ কাজের দিকে ধাবিত করে তা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-‘এটা এ জন্য যে, তোমরা যা হারিয়েছ তাতে যেন তোমরা বিমর্ষ না হও এবং যা তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন তার জন্য তোমরা আনন্দিত না হও। গর্বিত ও অহংকারীদেরকে আল্লাহ পছন্দ করেন না।’ (সুরা হাদিদ : আয়াত ২৩)
Advertisement
আল্লাহ তাআলা এ আয়াতে মুমিনদেরকে দুঃখে হাহুতাশ ও আফসোস এবং আনন্দে গৌরব ও অহংকার করা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন।
অনেক সময় মানুষ সুখ ও দুঃখে পড়লে নিজেদের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তাই দুখে পড়লে হায়! হায়! করেন আবর আনন্দের সময় হুররে! হুররে! করে লাফিয়ে ওঠেন। হাদিসে পাকে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন-‘আমাকে দু’টি শব্দ উচ্চারণ থেকে নিষেধ করা হয়েছে। (তার একটি হলো) দুঃখের সময় বোকামিসুলভ (হায়! হায়! শব্দ) আর (অন্যটি হলো আনন্দের অতিমাত্রায়) পাপসুলভ (হুররে! বা হাহ্হা) শব্দ। (আল্লাহর পক্ষ থেকে) নেয়ামত পেলে (পাপ হয় এমন শব্দে) ‘হুররা বা হাহ্হা’ করা। আর বিপদের সময় বোকিামিবশতঃ হায়!, আফসোস করা। অর্থাৎ বড় নিঃশ্বাস ফেলা।’
আরও পড়ুন > আল্লাহর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার কার্যকরী তাসবিহ
Advertisement
অন্য হাদিসে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘অবশ্যই প্রথম আঘাতের সময়ই ধৈর্যের পরিচয় পাওয়া যায়।’
বিপদ ও দুঃখের অনবরত আবেগ মানুষকে অশান্তির মাধ্যমে শেষ করে দিতে পারে। অনেকে এক্ষেত্রে নিজেদের ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে।
আবার কোনো মানুষ অত্যাধিক সুখী হয় কিংবা নেয়ামত লাভ করে; তাহলে সে সুখ ও আনন্দের অতিশয্যে মহান শ্রষ্ঠার নেয়ামতকে ভুলে যায়। অন্যায় ও অহংকারের দিকে ধাবিত হয় শালিনতা ও ন্যায়বোধের সীমা লঙ্ঘন করে বসে।
এ কারণেই আবেগের অনুগামী হয়ে যেমন কাউকে বেশি তোশামোদ বা ভালোবাসা প্রদর্শন ঠিক নয়; তেমনি রাগ-ক্ষোভ ও দুঃখে কাউকে অতিমাত্রায় ঘৃণা করাও ঠিক নয়। সর্বাবস্থায় আল্লাহর ওপর ভরসা ও ধৈর্যের পরিচয় দেয়া আবশ্যক। হাদিসে এসেছে-
Advertisement
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যাকে তুমি ভালোবাসবে, তাকে তুমি সংযত পরিমাণে ভালোবাসবে। কারণ, এমন দিনও আসতে পারে যখন তুমি তাকে ঘৃণা করবে। আবার যাকে তুমি ঘৃণা করবে তাকে তুমি সংযত পরিমাণে ঘৃণা কর; কারণ, এমন দিন আসতে পারে যখন তুমি তাকে ভালোবাসবে।’
আবেগের অতিশয্য থেকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা ও আশ্রয় চাওয়া জরুরি। হাদিসে এসেছে-(اَللَّهُمَّ اِنِّى) اَسْئَالُكَ الْعَدْلَ فِىْ الْغَضَبِ وَ الرِّضَاউচ্চারণ : (আল্লাহুম্মা ইন্নি) আসআলুকাল আদলা ফিল গাদাবি ওয়ার রিদা।’অর্থ : (হে আল্লাহ!) আমি আপনার কাছে ক্রোধ ও সন্তুষ্টি উভয় অবস্থায়ই মধ্যমপন্থা কামনা করি।
কোনো ব্যক্তি যখন নিজেদের আবেগের মুখে লাগাম পরিয়ে দেয়, তখন অতি আনন্দ ও দুঃখের মাঝেও তারা সামঞ্জস্য বজায় রাখতে পারে। সুতরাং বিপদাপদ ও হাসি-খুশি উভয় অবস্থায় আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। কেননা এ দুটি জিনিসই মানুষকে আল্লাহর অবাধ্যতায় পৌছিয়ে দেয়।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুখ-দুঃখ সর্বাবস্থায় আল্লাহর ওপর ভরসা ও ধৈর্য ধারণ করার মাধ্যমে একনিষ্ঠ থাকার তাওফিক দান করুন। দুঃখ ও আনন্দের অতিশয্যে তাঁর অবাধ্যতা থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/আরআইপি