দিন বদলের স্রোতে এগিয়ে যাচ্ছেন সৌদির নারীরা। সংস্কারের পথে হাঁটছে সৌদি। সম্প্রতি দেশটিতে নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয়া হয়েছে। নারীদের ওপর থেকে অনেক ধরনের নিষেধাজ্ঞাই তুলে নেয়া হচ্ছে। তারা সিনেমাহল এবং খেলার মাঠেও পুরুষদের সঙ্গে অংশগ্রহণ করতে পারছেন। এই ধারায় অনেক সৌদি নারীই উদ্যোগী হয়ে উঠেছেন। নিজেদের ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন তারা।
Advertisement
সৌদি আরব থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন ২২ বছর বয়সী রিম দাদ। ইসলামের অন্যতম পবিত্র নগরী মদিনায় ভ্রমণের বিষয়টিকে হজযাত্রী এবং পর্যটকদের জন্য ভার্চুয়ালি উপস্থাপনের জন্য এমন একটি প্লাটফর্ম তৈরি করছেন যা তাদের কাছে একেবারেই বাস্তব বলে মনে হবে। অর্থাৎ এর মাধ্যমে সরাসরি মদিনায় না গিয়েও মদিনার অনেক কিছু সম্পর্কেই অভিজ্ঞতা নিতে পারবেন পর্যটকরা। ফলে তারা মদিনায় ভ্রমণের বিষয়ে আরও আগ্রহী হয়ে উঠবেন।
হেবা জাহিদের বয়স ৩৭ বছর। তিনি গ্রিন ডেজার্টে কাজ করছেন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে গ্রিন ডেজার্টই প্রথম একটি উদ্যোগ যা মানুষকে পুণ:ব্যবহারযোগ্য সংস্কৃতি তৈরিতে সহায়তা করবে। তিনিও সৌদির কঠোর অনুশাসনের মধ্যে বদ হয়েছেন। কিন্তু উদ্যোগী চিন্তা কখনও থেমে থাকেনি তার।
দাদ এবং জাহিদ দু'জনই সম্প্রতি ওয়াশিংটনের হ্যালসিওন হাউসে একটি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন যেখানে তারাসহ কট্টরপন্থী সৌদির মোট ১৪ জন নারী উদ্যোক্তা রয়েছেন। ওয়াশিংটন ভিত্তিক এই কর্মসূচি নারীদের বিভিন্ন ব্যবসায়িক আইডিয়াকে বাস্তবে রূপান্তরের জন্য কাজ করে থাকে।
Advertisement
গত জুনে নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয়ার পরই এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়। সৌদির নারীরা এখন বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে উদ্যোগ এবং ব্যবসা সম্পর্কে ধারণা লাভ করছে। এর ফলে তারা তাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিতে পারছে। এসব উদ্যোগের মাধ্যমে ক্রাউন প্রিন্স সালমান লিঙ্গ সমতার আশা দেখিয়েছেন তাদের। যদিও সম্প্রতি তার নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন নারী অধিকার কর্মীকে আটক করা হয়েছে।
দাদ বলেন, সব কিছুই বদলাতে শুরু করেছে। সব জায়গায় এখন নারীদের স্থান তৈরি হচ্ছে। তিনি যে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রোগ্রামে কাজ করছেন সেটা তাইবাহ ভিআর নামে পরিচিত।
এএফপিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, যদি একজন পুরুষ একটি কোম্পানি বা অন্যকিছু শুরু করতে চায় তবে তাদের একটি প্রক্রিয়া দিয়ে যেতে হয়। ওই একই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আমাদেরও যেতে হয়েছে। তাই আমরা নিজেদের পুরুষদের সমান মনে করতে পারছি।
সৌদি সরকার ভিশন ২০৩০ লক্ষ্য পূরণের উদ্যোগ নিয়েছে। এর আওতায় নারীদের পরিচালিত স্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উন্নতির বিষয়গুলোও অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। এর ফলে পরবর্তী দশ বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ ২২ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
Advertisement
দু'সপ্তাহের ওই কর্মসূচিতে নারীরা তাদের ব্যবসা সমৃদ্ধ করা, কৌশলগত নেটওয়ার্ক তৈরি এবং আলোচনার মাধ্যমে বেতন এবং বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। তারা আমাজন ওয়েব সার্ভিসের মতো বড় বড় কোম্পানির কাছ থেকে অনেক ধরনের পরামর্শ পেয়েছেন।
ওই কর্মসূচির শেষের দিনে নারীরা প্রায় ১৫০ জন বিনিয়োগকারী, উদ্যোক্তা এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দূতাবাসের প্রতিনিধিদের সামনে নিজেদের নতুন নতুন উদ্যোগগুলো তুলে ধরেন।
সৌদিতে নারীরা পুরুষ অভিভাবকদের ছাড়া কোন কিছুই করার অনুমতি পান না। দেশের বাইরে বাইরে ঘুরতে যাওয়া, বিয়ে বা বিচ্ছেদ, কোন চুক্তি সই করার মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে তাদের স্বামী, বাবা অথবা ভাইয়ের অনুমতি নিতে হয়।
তাই এমন একটি কট্টরপন্থি দেশের নারীদের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্য বা কোন ধরনের প্রতিষ্ঠান শুরু করাটা বেশ কঠিন। এই প্রসঙ্গে হ্যালসিওনের নীতি এবং আন্তর্জাতিক কর্মসূচির পরিচালক জোস ম্যানডেল বলেন, সৌদির মতো একটি দেশ যেখানে নারীদের জন্য এ ধরনের সুযোগ সুবিধা নেই। প্রকৃতপক্ষে নারীরা এ ধরনের কাজ করতে আগ্রহী। আমরা আশা করব যেসব নারীরা এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন তারা সৌদিতে ফিরে শুধুমাত্র তাদের দেশের এবং ধর্মীয় ক্ষেত্রে ভবিষ্যত নেতৃত্ব দেবেন না বরং তারা সফলভাবে তাদের উদ্যোগেরও বাস্তবায়ন করবেন।
টিটিএন/আরআইপি