ভেনেজুয়েলা থেকে অব্যাহত মানব-স্রোত সামলাতে সীমান্তে সৈন্য মোতায়েনের আদেশ জারি করেছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট। আদেশে বলা হয়েছে - সীমান্তে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে সৈন্য পাঠানো হচ্ছে।
Advertisement
জাতির উদ্দেশ্যে এক ভাষণে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ভেনেজুয়েলার ট্রাজিক পরিস্থিতি পুরো দক্ষিণ আমেরিকার শান্তি ও স্থিতিশীলতা হুমকিতে ফেলেছে।
'ভেনেজুয়েলার সমস্যা এখন আর তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বিষয় নয়, এই সঙ্কট এখন পুরো মহাদেশের শান্তির জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে।'
ভেনেজুয়েলায় গত বেশ কিছুদিন ধরে জিনিসপত্রের দাম প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। বিশেষ করে খাবার এবং ওষুধের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় লাখ লাখ মানুষ স্রোতের মতো আশপাশের দেশগুলোতে ঢুকছে।
Advertisement
সম্প্রতি স্থানীয়দের সাথে এই অভিবাসীদের সম্পর্কে উত্তেজনা, সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। ব্রাজিলের সীমান্তে বেশ কিছু সংঘর্ষ হয়েছে। ভেনেজুয়েলার সাথে সীমান্তে পাসারাইমা শহরে এ ধরনের সংঘর্ষের পর পরিস্থিতি সামাল দিতে সৈন্য পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় মানুষজন গত সপ্তাহে সেখানে অভিবাসীদের অস্থায়ী শিবিরগুলোতে হামলা চালায়, অনেক শিবিরে আগুন ধরিয়ে দেয়। মঙ্গলবার ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট মাইকেল টেমার ভেনেজুয়েলার সাথে পুরো সীমান্তজুড়ে সৈন্য মোতায়েনের এক আদেশ জারি করেন ।
ভেনেজুয়েলার আরেকটি প্রতিবেশী দেশ পেরু তাদের উত্তরের সীমান্তবর্তী দুটো প্রদেশে দুই মাসের জন্য স্বাস্থ্যখাতে জরুরি অবস্থা জারি করেছে। সেখানকার স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ আশঙ্কা করছেন, ভেনেজুয়েলা থেকে পালিয়ে আসা মানুষজন রোগ ছড়াতে পারে।
কী হচ্ছে ভেনেজুয়েলায়?
Advertisement
২০১৪ সালে বিশ্বের জ্বালানি তেলের বাজারে ধস নামার পর যে সঙ্কটে পড়ে যায় ভেনেজুয়েলা, তা গত চার বছর ধরে দিন দিন বাড়ছে। প্রতি পাঁচজনের চারজনই এখন দারিদ্রের ভেতর বসবাস করছেন। খাবারের জন্য মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন দিতে হয়। ওষুধের অভাবে বহু মানুষ মারা যাচ্ছে।
নজিরবিহীন মুদ্রাস্ফীতি সামাল দিতে প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো এ মাসে দেশের মুদ্রা পরিবর্তন করেন, কিন্তু তাতে হিতে বিপরীত হয়।
২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ২৩ লাখ মানুষ ভেনেজুয়েলা ছেড়ে পাশের দেশগুলোতে ঢুকেছে, যেটাকে লাতিন আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ অভিবাসন সঙ্কট বলে বর্ণনা করা হচ্ছে।
২০১৫ সালে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইউরোপে অভিবাসীর যে ঢল নেমেছিল, ভেনেজুয়েলার পরিস্থিতিকে তার সাথে তুলনা করেছে জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা।
প্রতিবেশীরা কী করছে?
কলম্বিয়াতে এখন ভেনেজুয়েলানের সংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি। ইকুয়েডরে পাঁচ লাখের বেশি, পেরুতে কমপক্ষে চার লাখ। ব্রাজিলে ৬০ হাজার।
কয়েকটি সীমান্ত শহরে ভেনেজুয়েলানদের সাথে সংঘর্ষের ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে ব্রাজিলের সরকার। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সৈন্য মোতায়েনের বিরল সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এ মাস থেকে সীমান্তে কড়াকড়ি শুরু করেছে পেরু। জাতীয় পরিচয়পত্রের বদলে এখন থেকে পাসপোর্ট চাওয়া হচ্ছে। তবে হাজার হাজার মানুষ পাসপোর্ট ছাড়াই অবৈধভাবে ঢুকছে।
ইকুয়েডরও একই নিয়ম চালু করলে, সেদেশের আদালত তা আটকে দেয়। ব্রাজিল তাদের উত্তরের রোরাইমা সীমান্ত বন্ধ করে দিতে চাইলে আদালতের কারণে তা পারেনি।
ইকুয়েডর, পেরু, কলম্বিয়া এবং ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা আগামী সপ্তাহে এক জরুরি বৈঠকে বসছেন।
ভেনেজুয়েলা কী বলছে?
অনেকেই এই পরিস্থিতির জন্য ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো এবং তার সোশ্যালিস্ট সরকারকে দায়ী করছে। কিন্তু মাদুরো দায়ী করছেন পশ্চিমা দেশগুলোকে। তিনি বলেছেন, সাম্রাজ্যবাদীরা ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্র- ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক যুদ্ধ শুরু করেছে, তার সরকারের বহু সদস্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
ভেনেজুয়েলার সংসদের স্পিকার বলেছেন, সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে ইচ্ছা করে বর্তমানের এই অভিবাসন সমস্যা সৃষ্টি করা হয়েছে।
ডিওসডাডো কাবেলোকে উদ্ধৃত করে ভেনেজুয়েলার স্থানীয় মিডিয়া বলছে, পেরুর রাস্তার পাশ দিয়ে, ইকুয়েডর কলম্বিয়ার রাস্তা ধরে সারি বেঁধে মানুষজন হাঁটছে, এই ছবি দেখে আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগে না? লাইট, ক্যামেরা আর অ্যাকশনের পাতানো খেলা। আমাদের দেশের বিরুদ্ধে প্রচারণা চলছে।
এসআইএস/এমএস