দেশজুড়ে

হাতের কারুতেই জীবনের স্বপ্ন বুনেন ননী দাস

মাস কয়েক হলো বয়স পঞ্চাশের কোটা পেরিয়েছে। জীবনের বেশিরভাগ সময়ই প্রতিমা তৈরির কাজে কাটিয়ে দিয়েছেন। ছোটবেলা শখই ধীরে ধীরে বেঁচে থাকার অবলম্বনে পরিণত হয়েছে। দিন-রাত বসে, দাঁড়িয়ে দু’হাতের নৈপুন্য প্রদর্শনের কাজ চলেছে তার।

Advertisement

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী পাঠানটেক গ্রামের মৃত কুলক চন্দ্র দাসের ছেলে ননী চন্দ্র দাস। তিনি দীর্ঘ পয়ত্রিশ বছর ধরে সনাতন ধর্মের লোকদের দুর্গাপূজা অর্চনার জন্য প্রতিমা তৈরি করে যাচ্ছেন। তবে নিজে দারিদ্র্যতার কাছে হার মানলেও অসহায় লোকদের ধর্মীয় উৎসবে প্রায় প্রতিবারেই বিনামূল্যে প্রতিমা দিয়ে থাকেন। তার কাছে ধর্মীয় কাজ করাটাই মুখ্য বিষয়।

গত ২৭ আগস্ট সোমবার বিকেলে বরমী বাজারের সড়কের পাশেই দেখা যায় একটি ঘরে কাজে ব্যস্ত প্রতিমা শিল্পি ননী দাস। আর তাকে বিভিন্ন কাজে সহযোগীতা করছিলেন তার স্ত্রী কামনা দাস।

ননী দাসের মতে, খুব ছোটবেলা যেখানেই যেতেন খেলার ছলে মাটি দিয়ে ছোট ছোট প্রতিমা তৈরি করতেন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার শখের কাজও পরিণত হতে থাকে। একটা সময় এই কাজই হয়ে উঠে বেঁচে থাকার অবলম্বনে। এক ছেলে দুই মেয়ের বাবা তিনি। বড় ছেলে এইচএসসি পরীক্ষার্থী, মেয়ে স্থানীয় একটি বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিবে, ছোট মেয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ে। হতদরিদ্র পরিবারে বেড়ে উঠা ননীদাসের সহায় সম্বল বলতে শুধু বসভিটাই আছে। তবে তার প্রধান সম্বল হচ্ছে তার দুটি হাত। যার মাধ্যমে সারা বছরের দিন-রাত ধরে নান্দনিক দুর্গার অববয় ফুঁটিয়ে তুলেন।

Advertisement

তিনি কারো কাছ থেকে এ কাজের শিক্ষা নেননি, তেমনি আবার পরিবারের কেউ এ কাজে কখনও জড়িত ছিল না। শুধু নিজের শখ ও ধর্মীয় বিশ্বাসে দীর্ঘ সময় ধরে প্রতিমা তৈরি করে যাচ্ছেন। মাটির উপকরণে হাতের নৈপুণ্যে প্রতিবারের মত এবারও তিনি ১২টি প্রতিমা তৈরি করেছেন। এসব প্রতিমার নির্দিষ্ট কোনো দরদাম নেই। বিভিন্ন এলাকার পূজা কমিটি তার কাছ থেকে প্রতিমা সংগ্রহ করে খুশি হয়ে যে টাকা দেন তাতেই সংসার চলে।

ননী দাস জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে ধর্মীয় এ কাজ করে যাচ্ছেন। তার পরিশ্রম করে প্রতিমা থেকে যে টাকা আসে তাতেই তিনি খুঁশি। তবে তার স্বপ্ন সন্তানরা লেখাপড়া করে মনুষ্যত্ব অর্জনের মাধ্যমে তাদের সংসারে আলো ফুটাবে। এছাড়াও অনেক এলাকার সনাতন ধর্মের দরিদ্র লোকজনের কথা ভেবে প্রতিবারেই তিনি বিনামূল্যে কয়েকটি প্রতিমা পূজা-অর্চনার জন্য দিয়ে আসছেন।

ননীদাসের স্ত্রী কামনা দাসের মতে, তার স্বামী থাকার ঘরের সঙ্গে লাগানো একটি ঘর দিনরাত অতিবাহিত করেন। এখানে তিনি প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন। ওই ঘরেই তাকে খাবার পৌঁছে দিতে হয়। সংসারের কাজ সামলিয়ে মাঝে মধ্যে তিনি স্বামীকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেন। এ কাজে নিজেদের ভাগ্যের উন্নয়ন না হলেও তাদের আক্ষেপ নেই। কারণ ধর্মীয় আদর্শ ও বিশ্বাসটাই তাদের কাছে বড়।

বরমী পূজা উদযাপণ কমিটির সভাপতি শ্রী ফনিভূসন সাহা জানান, ননী দাস দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে প্রতিমা তৈরি করছেন। প্রতিমাকেই ঘিরে তার দিন রাতের সময় অতিবাহিত হয়। এটাই তার বেঁচে থাকার অবলম্বন। নিজে পরিশ্রম করে সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তাকে নিয়ে আমরা গর্ব করি।

Advertisement

শিহাব খান/আরএ/আরআইপি