ফিচার

একটি মাছের বিষে মারা যেতে পারে ৩০ জন

বিষাক্ত মাছ পটকা। দেশের সব জায়গায় এ মাছ পাওয়া যায়। পটকা মাছ খেয়ে মানুষ মারা যাওয়ারও খবর পাওয়া যায়। ২০১৫ সালে সিলেটের জৈন্তায় একই পরিবারের ছয়জন পটকা মাছের বিষক্রিয়ায় মারা গিয়েছিল। এ মাছ এতই বিষাক্ত যে একটি মাছ খেয়ে মারা যেতে পারে অন্তত ৩০ জন। জাপানে পটকা মাছ খুবই জনপ্রিয়। তবে তারা রান্না করার আগে এ মাছ থেকে বিশেষভাবে বিষ আলাদা করে নেয়। তবে সে প্রযুক্তি এখনো আসেনি বাংলাদেশে। তাই এ মাছের বিষক্রিয়া থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়, তা না খাওয়া।

Advertisement

পটকা মাছ নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। সরকারি পর্যায়ে ২০১৫ সালের ওই ঘটনার পর ব্যাপক কাজ করেছে মৎস্য বিভাগ। মৎস্য বিভাগের গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য জাগো নিউজকে জানিয়েছেন মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ। তিনি জানান, মানুষ এ মাছ সম্পর্কে জানে না বলেই খায়। আর সে কারণেই মারা যায়।

জানা যায়, পটকা মাছ বা Puffer Fish জাপানে ফুগো মাছ বলে পরিচিত। এটি আসলে বিষাক্ত জলজ প্রাণী বা মাছ। এ মাছে রয়েছে ক্ষতিকারক টিটিএক্স (TTX) বা টেট্রোডোটোক্সিন (Tetrodotoxin) বিষ। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি যে পটকা মাছের প্রজাতি পাওয়া যায়, তার বৈজ্ঞানিক নাম Tetraodon Cutcutia, ইংরেজিতে এ প্রজাতিকে Ocellated Pufferfish বলে। মাছটিকে স্থানীয়ভাবে টেপা বা ফোটকা মাছও বলা হয়। তবে যে নামেই ডাকা হোক না কেন তার বিষাক্ততা কোন অংশে কমে যায় না। বিষাক্ত পটকার চামড়া, যকৃত এবং ডিম্বাশয়ে সবচেয়ে বেশি বিষ থাকে। পটকার বিষ পটাশিয়াম সায়ানাইডের চেয়েও অনেক বেশি বিষাক্ত। প্রায় ১ হাজার ২০০ গুণ বেশি বিষাক্ত। একটি পটকা মাছের বিষে ৩০ জনের মৃত্যুও হতে পারে।

> আরও পড়ুন- ১৫ বছরে একবার ফোটে ‘মৃত্যুর ফুল’

Advertisement

গবেষণায় দেখা গেছে, কোনো কোনো সামুদ্রিক পটকা প্রতি গ্রামে ৪০০০ এমইউ পর্যন্ত বিষ বহন করে। একজন সুস্থ-সবল ব্যক্তি এমন বিষাক্ত পটকার তিন গ্রাম খেলেই বিষাক্রান্ত হয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে মারা যাবে। অনেকের ধারণা, পটকা মাছ রান্না করলে এর বিষ নষ্ট হয়ে যায়। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। অত্যধিক তাপে বিষের উপাদান এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় রূপান্তর হতে পারে। এতে বিষাক্ততার খুব একটা তারতম্য হয় না।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, সাধারণত প্রজনন ঋতুতে বা বর্ষাকালে এ মাছটি বেশি বিষাক্ত হয়ে পড়ে। তবে অন্যান্য সময়েও মাছটি কমবেশি বিষাক্ত থাকে।

লক্ষণ: পটকা মাছের বিষক্রিয়া সবার ক্ষেত্রে সমানভাবে হয় না। কারও প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকতে পারে আবার কারও কম থাকতে পারে। সে হিসেবে পটকা মাছ খাওয়ার ২০ মিনিট থেকে ৩ ঘণ্টার মধ্যে বিষক্রিয়া শুরু হতে পারে। পটকা মাছ খাওয়ার পর পর নিচের উপসর্গগুলো দেখে বোঝা যাবে যে, তিনি বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন কিনা-

১. পটকা মাছ খেয়ে কিছুক্ষণ পর বিষক্রিয়ায় বমি হতে পারে বা বমি বমি ভাব হতে পারে।২. মাথা ঘোরানো, মাথাব্যথা ও আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা বেড়ে যাবে।৩. তলপেটে ব্যথা ও ডায়েরিয়া হতে পারে।৪. শরীর অসাড় হয়ে পড়া, হাত ও পায়ের পেশি দুর্বল হয়ে নিষ্ক্রীয় হয়ে যেতে পারে।৫. হাটা-চলার অক্ষমতা ও স্বাভাবিক চিন্তা প্রকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।৬. কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে অস্রাব্য ভাষায় গালাগাল করতে পারে।

Advertisement

> আরও পড়ুন- মোটরযান আইনে কোন অপরাধে কি শাস্তি

প্রতিরোধ বা প্রতিকার: সাধারণত এ মাছ খাওয়া বর্জন করাই সবার জন্য মঙ্গলজনক। তবে যদি কোন কারণে কেউ মাছটি খেয়ে ফেলে এবং তার বিষক্রিয়া শুরু হয়, তাহলে কী করবেন? নিম্নোক্ত উপায়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে পারেন-

১. যে কোন উপায়ে চেষ্টা করতে হবে বমি করানোর জন্য। এ ক্ষেত্রে গ্রামের অনেক মানুষ গোবর গুলিয়ে সে পানি রোগীকে খাইয়ে থাকেন। যাতে বমি আসে আর ভক্ষণ করা মাছ বা বিষ বেরিয়ে আসে।২. কাঠ কয়লা গুড়ো করে সরাসরি অথবা পানির সাথে গুলে খাওয়াতে হবে। কাঠ কয়লা গুড়ো আর্ন্তজাতিক স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক বিষক্রিয়া নিরাময়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ্য হিসেবে স্বীকৃত।৩. প্রচুর পরিমাণ পানি খাওয়াতে হবে, যাতে বিষক্রিয়ার ফলাফল কমে আসে।৪. চেষ্টা করতে হবে সজ্ঞান রাখার, কারণ জ্ঞান হারালে মস্তিষ্ক তার প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।৫. যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে ভর্তি করে চিকিৎসা দিতে হবে এবং অবশ্যই ডাক্তারকে বলতে হবে লাইফ সাপোর্টে রাখতে।

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশে এত মাছ থাকতে পটকা মাছ না খেলেই হয়। তবে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে এ ব্যাপারে সচেতন করা জরুরি।

এসইউ/পিআর