সুইজারল্যান্ডের প্রত্যন্ত এক গ্রামে মার্কাস লুডিয়াস তার খামারের শস্যের পরিচিতি তুলে ধরছিলেন। মার্কাস লুডিয়াসের এই খামার কিন্তু সাধারণ শস্য খামারের মতো নয়। উঁচু পাচিল ঘেরা খামারে বিশেষ ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ খামার পরিচালনা করেন তিনি। আর এই খামারের শস্যও কিন্তু ভিন্ন। বিশাল খামারে ভিন্ন ধরনের মাটিতে ১৫টি প্রজাতির গাঁজা চাষ করেন তিনি।
Advertisement
লুডিয়াস বলেন, ‘আমি একজন রসায়নবিদ এবং আমার এই খামারে ২০০৮ সাল থেকে বিভিন্ন ধরনের গাঁজা চাষ করছি।’
গাঁজা বৈধ করা হবে কি না তা নিয়ে প্রায় ২৫ বছর ধরে বিতর্ক চলছে সুইজারল্যান্ডে। পৃথিবীর অনেক দেশের মতো সুইজারল্যন্ডেও চিকিৎসাকাজে গাঁজার ব্যবহার বৈধ, তবে গাঁজা চাষ এবং বিক্রি করা এখনও সেখানে আইনগতভাবে অবৈধ। তাই বিশেষ অনুমতি বাদে খামারীরা এখানে গাঁজা চাষ করতে পারে না।
লুডিয়াস জানান তার খামারের গাঁজা সরাসরি সেবনের জন্য বিক্রি করা হয় না।
Advertisement
তিনি বলেন, ‘সুইজারল্যান্ডের স্বাস্থ্যবিষয়ক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বিশেষ একটি অনুমতি নিয়ে আমরা এখানে গাঁজা চাষ করি। সরকারি অনুমোদন পাওয়া ফার্মাসিস্টরা গাঁজাকে তরল অবস্থায় নিয়ে আসেন। তারপর শুধু ডাক্তার অনুমোদিত ব্যক্তিরা কিনতে পারেন তা।’
সেরকম একজন সরকার অনুমোদিত ফার্মাসিস্ট ড্যানিয়েলা আইগামেন জানান, ওষুধ হিসেবে গাঁজা ব্যবহারের শুরু হাজার বছর আগে থেকে।
‘ওষুধ হিসেবে গাঁজা ব্যবহার শুরুর প্রথম প্রমাণ পাওয়া যায় খৃষ্টের জন্মের ২৭০০ বছর আগে চীনে। চীনের একজন সম্রাট চেন-নুং ম্যালেরিয়া ও বাত সংক্রান্ত রোগ নিরাময়ে গাঁজা ব্যবহার করেছিলেন’,- বলেন আইগামেন।
আইগামেনের কাছ থেকে ওষুধ হিসেবে গাঁজা কেনেন সুইজারল্যান্ডের কয়েকশ’ মানুষ। তাদেরই একজন বার্নাডিক্ট নিকলাউস, যিনি গাঁজা ব্যবহার করেন শরীরের ব্যথা উপশমের জন্য।
Advertisement
নিকলাউস বলেন, ‘স্কলিওসিস রোগের কারণে ছোটকাল থেকেই আমার পিঠে ও কোমড়ে তীব্র ব্যথা হতো। ব্যথা উপশমের জন্য সবধরনের ওষুধ আমাকে দিয়েছে ডাক্তাররা, এমনকি মরফিনও। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। একসময় মনে হতো এই ব্যাথা না কমলে জীবনই আর রাখবো না।
নিকলাউস জানান, গাঁজা ব্যবহার করার পর থেকে তার ব্যথা অনেক সহনীয় পর্যায়ে এসেছে।
সুইজারল্যান্ডে তার মতো অনেকেই নানা ধরনের রোগের প্রতিকার পেয়েছেন গাঁজা ব্যবহার করে। এসব কারণে বিশ্বের অনেক দেশই চিকিৎসা কাজে গাঁজার ব্যবহার বৈধ করেছে। সুইজারল্যান্ডে এরকম ব্যবহার বৈধ হলেও এ বিষয়ে আরও গবেষণা চালানোর তাগিদ দিচ্ছে সরকার।
সুইজারল্যান্ডে গাঁজাকে বৈধতা দেয়ার পক্ষের মানুষ বলছে, গাঁজা বৈধ হলে চিকিৎসাকাজে ব্যবহারের পাশাপাশি অর্থনৈতিক দিক থেকেও লাভবান হবে দেশ।
আর বিপক্ষের লোকজনের বক্তব্য এটিকে এখনো বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই মাদক হিসেবে মনে করা হয়। আর চিকিৎসক ও রসায়নবিদদের মতে, আর্তমানবতার খাতিরে অন্তত চিকিৎসাকাজে গাঁজাকে বৈধতা দেয়া উচিত।
সূত্র : বিবিসি বাংলা
জেডএ/পিআর