হুম! বুঝলাম, উপায় একটাই! উপরের নির্দেশকসমূহ দেখ আর হাটো। যেখানে গিয়ে আর পথ দেখা যাবে না, ওখানেই শেষ! এত বিশাল, ভাবতে লাগলাম আদৌ শেষ করতে পারবো তো কেনাকাটা! লিস্টটাও বেশ বড়। সময় ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট। দৌড় শুরু করলাম। এটা রেসের দৌড় না, মারসিয়ার কাছে নিয়মানুবর্তিতার পরীক্ষা! প্রথমে তো জিনিসপত্র নেওয়ার জন্য যে ক্যারিয়ারগুলো থাকে সেগুলো ছাড়াই চলে গেলাম। পরে ফেরত এসে খুঁজে নিয়ে আবার শুরু!
Advertisement
একে একে মোটামুটি সবকিছুই পাচ্ছিলাম। কিন্তুু স্নো-বুট নিয়ে সমস্যায় পড়লাম। কোনটা ছেড়ে কোনটা নিই? আর কেউ নাই যে, একটু ধারণা দেবে- কী ধরনের জুতো বেশি টেকসই বা মানানসই? ঠান্ডায় কোনটা বেশি কার্যকারী? নাকি একটা নিলেই হলো? এখানে অবশ্য সব ব্যাপারেই এরকম। যা করার সবকিছুতেই ‘একলা চলো রে’! অবশেষে একটা পছন্দ হলো- সেটাই নিলাম। বেশ ভারি। কিভাবে যে পরে হাটবো বুঝতে পারছি না। দেখা যাক কী হয়?
চাল, আলু, মরিচ, পেঁয়াজ, তেল, রসুন, গাজর, ডিম নেওয়ার পাশাপাশি একটি চার্জার কিনতে হলো, যেটাকে আমেরিকান চার্জার বলা যায়। আমি ল্যাপটপের যে চার্জার এনেছিলাম, ওটা আর ফোনেরটাও কোন কাজে এলো না। অগত্যা ডলার গচ্ছা গেল। শুরুর দিন থেকেই মনে হচ্ছিল- ভাগ্যদেবী ধীরে ধীরে আমার সঙ্গ ছাড়ছেন। পরবর্তীতে ব্যাপারটা আরও প্রকট আকার ধারণ করলো।
> আরও পড়ুন- শুভ্রতার স্পর্শে : প্রবাসীদের বিশ্বস্ততা
Advertisement
ওয়ালমার্টের ভেতরের দিকে একটি দরজা আছে। কেনাকাটা মোটামুটি সেরে ওখানে অপেক্ষা করতে লাগলাম। দু’টি দরজা আছে- একটি বাহির থেকে, এরপর ওটা পার হয়ে এলে আরেকটা। মূলত দ্বিতীয় দরজা থেকেই এখানে রুম গরম রাখার যে হিটারগুলো থাকে, সেগুলোর কার্যকারিতা শুরু হয়।
সময়ের প্রতি নিষ্ঠা কী, দেখলাম! মারসিয়া ঠিক ১০টা ২২ মিনিটে হাজির হুনদাই গাড়ি নিয়ে। উঠে পড়লাম জিনিসপত্র নিয়ে। আবার সেই শুভ্রতার রাজ্যে হারিয়ে যাওয়া!
উনি জানতে চাইলেন বাংলাদেশ সম্পর্কে। আমি ১৯৫২ থেকে শুরু করে ১৯৭১, বঙ্গবন্ধু এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা বললাম। পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র দেশ, যারা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছিল ১৯৫২ সালে! দেশের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কেও জিজ্ঞেস করলেন। উনি কিছুটা অবাক হলেন, আবার খুশিও হলেন- ‘একজন ভদ্রমহিলা দেশের প্রধানমন্ত্রী।’ আমি যোগ করলাম, ‘শুধু প্রধানমন্ত্রীই নন, স্পীকার এবং বিরোধী দলীয় নেত্রীও নারী।’ উনি তো খুব পূলকিত! সব দেশের নারীর যেন কর্মক্ষেত্রে এমন পদচারণা অব্যাহত থাকে- এ শুভ কামনা জানালেন।
> আরও পড়ুন- শুভ্রতার স্পর্শে : পর্ব ০২
Advertisement
নিজের শহর চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সম্পর্কে বললাম। আরও বললাম যে, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্রসৈকত (১২০ কি.মি)। সুন্দরবনের কথাও জানালাম। এরপর ব্যবসা-বাণিজ্যের কথা এলে উল্লেখ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলাম। পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটিও আমার দেশের- ব্র্যাক। সবকিছু শুনে কিছুটা বিব্রত বোধ করলেন যে, উনি এসবের কিছুই জানেন না। বললেন, ‘আমাকে সব পরবর্তীতে বলো।’ তবে আশ্চর্যজনকভাবে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিষয়ে বললেন, ‘এমন নিষ্ঠুরতা মানুষ কিভাবে, কেন করছে?’
বাসায় ফিরে এসেছি। জিনিসপত্র নিয়ে রান্নাঘরে গেলাম। উনি ওখান থেকে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেলেন। নিচে ওয়াশিং মেশিন, ড্রাইং মেশিন, জিনিসপত্র রাখার জন্য তাক, একটি বিশাল রেফ্রিজারেটর, উপরে আরেকটি আছে যেটা ওনাদের ব্যবহারের জন্য। কিন্তুু দু’টো ফ্রিজই ব্যবহারের অনুমতি ছিল। নিচের তলার আরেকটি ঘরে বাকি সব ঘরের জন্য ব্যবহারের সামগ্রী রাখা আছে। আমি এক এক করে জিনিসপত্র রাখতে লাগলাম তার নির্দেশনা অনুযায়ী।
এখন রান্নাবান্নাও করতে হবে, না হলে দুপুরে খাব কী? সবচেয়ে সহজ পাচ্য খাবার বেছে নিলাম- ভাত, আলুভাজি। ওখানে এত খুঁজেও ডাল পেলাম না। মারসিয়া শিখিয়ে দিলেন, কিভাবে চুলা জ্বালাতে হবে? কোথায় কী কী বাসন-কোসন আছে? চুলার সাথে এক ধরনের ফ্যান থাকে, যেটাকে অ্যাডজাস্ট ফ্যান বলে। যেহেতু এখানকার অধিকাংশ ঘর অত্যাধিক ঠান্ডার কারণে বদ্ধ অবস্থায় থাকে, তাই রান্নাঘরের ধোঁয়া বের করার জন্য এ ব্যবস্থা।
> আরও পড়ুন- শুভ্রতার স্পর্শে : পর্ব ০১
শুরু করলাম রান্না। অনেক সময় নিয়েই রান্না চললো। তারপর ঘরে চলে গেলাম স্নান সেরে নিতে। প্রথমবারের মত কানাডিয়ান ওয়াশরুম ব্যবহার করতে গিয়ে কিছুটা অসুবিধা হয়েছিল। পরে সামলে নিয়েছি। দুপুরের খাবার খেতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি যে জিনিসের কথা মনে পড়লো, সেটা নিঃসন্দেহে ডাল! শুকনো ভাত, আলুভাজি গোগ্রাসে গিললাম! ক্ষুধা বেশ, তাই মোটামুটি স্বাদ হলেও অবস্থার প্রেক্ষিতে সবই চলল।
চলবে...
এসইউ/পিআর