সৌদিতে বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা বাড়ছে। সম্প্রতি আইন মন্ত্রণালয়ের শাওয়াল মাসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক মাসে দেশটিতে ১০ হাজার বিয়ের বিপরীতে প্রায় পাঁচ হাজার বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে। অর্থাৎ ঘণ্টায় ছয়টির বেশি বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে সৌদিতে। খবর মিডেল ইস্ট মনিটর।
Advertisement
এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিবাহবিচ্ছেদের পেছনে বেশ কিছু কারণ দায়ী। আল হায়াত পত্রিকার এক খবরে বলা হয়েছে, এটা একটি গুরুতর এবং জটিল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবারগুলো।
পরিবারবিষয়ক প্রশিক্ষক এবং পরামর্শক মোহাম্মদ ধাইফুল্লাহ আল-কুরানি জানান, বিবাহবিচ্ছেদের হার বেড়ে যাওয়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিয়ের অবমূল্যায়ন, সত্যিকার সম্পর্ক ও দায়িত্বের প্রতি অবহেলা এবং স্বামীর রাতে দেরি করে বাড়িতে ফেরা।
তিনি আরও বলেন, যখন থেকেই নারীরা মুখ খুলতে শুরু করেছে, তারা যখন-তখন নিজেদের ইচ্ছামতো বাইরে যেতে ও আসতে পারছে, নিজেদের বাড়ির কাজকর্ম, স্বামী, সন্তান ও পরিবারে তাদের যে দায়-দায়িত্ব সেগুলো বাদ দিয়ে তারা মোবাইল ফোনের পেছনেই বেশি সময় ব্যয় করছে। আর এসব কারণেই বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা বাড়তে শুরু করেছে। এছাড়াও একটি দম্পতির ব্যক্তিগত জীবনে তাদের আত্মীয়স্বজন এবং আশপাশের মানুষের হস্তক্ষেপের কারণেও বিচ্ছেদ বাড়ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
Advertisement
অপরদিকে, আল-ইমাম মুহাম্মদ ইবনে সৌদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান ও সমাজসেবা অনুষদের সদস্য খালেদ আল-নাকিয়াহ সৌদি আরবে বিচ্ছেদের উচ্চ হারের কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, বিচ্ছেদের হার মোট বিয়ের মাত্র ২৯ থেকে ৩৫ শতাংশ। বিবাহবিচ্ছেদের যে আশঙ্কাজনক হারের কথা বলা হচ্ছে তা সৌদি সমাজকে অসম্মানিত করছে এবং ক্ষতিসাধনের চেষ্টা করছে।
আল নাকিয়াহ বলেন, এ বিষয়ে আমাদের সম্প্রদায়কে সচেতন হতে হবে এবং যারা বিয়ে করতে ইচ্ছুক তাদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। বর ও কনের মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতা প্রয়োজন। জোর করে কাউকে বিয়ে দেওয়া উচিত না। একই সঙ্গে নতুন দম্পতিদের জীবনে পরিবারের লোকজনের হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।
আল নাকিয়াহ বিবাহবিচ্ছেদের পেছনে দম্পতির অপরিণত মন মানসিকতা এবং বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর ওপর যেসব দায়-দায়িত্ব রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে অজ্ঞতাকে দায়ি করেছেন। একই সঙ্গে দু'জনের মন মানসিকতায় পার্থক্যও বিবাহবিচ্ছেদের জন্য দায়ি বলে মনে করেন তিনি। বিভিন্ন সময়ে পুরুষদের তুলনায় নারীরাই বেশি বিবাহবিচ্ছেদ চান বলেও উল্লেখ করেছেন আল নাকিয়াহ।
তিনি বলেন, আমাদের এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, সামাজিক মাধ্যমে বেশি সময় ব্যয় করে স্বামী বা স্ত্রীকে কম গুরুত্ব দেয়া দু'জনের মধ্যে অনেক ধরনের সমস্যা তৈরি করে এবং এর ফলেও বিবাহবিচ্ছেদ হচ্ছে। তিনি বলেন, শারীরিক এবং মানসিক বিকাশ নিশ্চিত হওয়ার পরই ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দেয়া উচিত। এটাই পারিবারিক সুখ এবং পরিবারের স্থায়িত্বের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
Advertisement
টিটিএন/পিআর