সোমবার, বেলা ১২টা। মক্কার মেসফালা এলাকার রাস্তাঘাট অনেকটাই ফাঁকা। মাঝে মাঝে সজোরে আওয়াজ তুলে দ্রুতগতিতে ছুটে যাচ্ছে দামি লিমুজিন কার। রাস্তাঘাট ফাঁকা হওয়ার কারণ কাঠফাটা রোদ। তাপমাত্রা ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাস্তায় বের হলেই মনে হয় পিচঢালা পথ থেকে যেনো আগুনের ফুলকি বের হচ্ছে। ছাতা মাথায়ও স্বস্তি নেই। প্রচণ্ড রোদে গায়ের চামড়া পুড়ে যাওয়ার অবস্থা।
Advertisement
এমন অসহ্য গরমের মধ্যে একটি সুউচ্চ ভবনের সামনের রাস্তায় থরে থরে সাজানো ইটের স্তূপ থেকে ট্রাক্টরজাতীয় গাড়িতে ইট তুলে দেয়া ও ময়লা সরানোর কাজ করছিলেন আনুমানিক ৪০ বছর বয়সি এক ব্যক্তি। তার পরনে হলুদ রংয়ের ফুল হাতা শার্ট, কালো প্যান্ট, হাতে গ্লাবস ও মাথায় গামছাজাতীয় কাপড় বাঁধা।
এ প্রতিবেদক কৌতূহলবশত এগিয়ে গিয়ে নাম পরিচয় জানতে চাইলে তিনি জানান, তার নাম আলেক শাহ। বাড়ি বাংলাদেশের আশুগঞ্জের সদরে। পেশায় ক্রেন অপারেটর। চার বছর আগে স্থানীয় আল মুজবা কোম্পানিতে ট্রেড ভিসায় এখানে আসেন। তাকে প্রতিদিন কমপক্ষে ১২ ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে কাজ করতে হয়।
আলেক শাহ বলেন ‘প্রথম প্রথম রাস্তায় দাঁড়িয়ে দুই-এক ঘণ্টা কাজ করতেই হাঁপিয়ে যেতাম। কাজ ফেলে বিশ্রাম নেয়ায় বকুনি খেতাম। কিন্তু দেশে থাকা বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ের কথা মনে করে গরমে কাজ করার আভ্যাস গড়ে তুলি। এখন গরমে কাজ করতে খারাপ লাগলেও গা সইয়ে গেছে।’
Advertisement
তিনি জানান, সারাটা মাস কষ্টে কাটলেও মাস শেষে ৫০ হাজার টাকার সমপরিমাণ রিয়েল হাতে পেলে বারবার গোনেন। এখানে কষ্টের কাজ হলেও টাকা আছে। দেশে চাকরি করে এত টাকা রোজগার কিছুতেই পারতেন না।
মক্কার বিভিন্ন রাস্তায় আলেক শাহের মতো হাজার হাজার বাংলাদেশি তরুণকে দেখা যায়। তাদের বেশিরভাগই ক্লিনার।
সরেজমিনে দেখা গেছে, অসংখ্য বাংলাদেশি যুবক রোদে পুড়ে ক্লিনারের কাজ করছেন। কারও মুখে হাসি নেই, যেন সময়ের সঙ্গে তারা কুলিয়ে ওঠতে পারছেন না।
কাবা শরিফের পাশে কবুতর চত্বরে করমরত বাংলাদেশি এক ক্লিনার বলেন, ‘কোম্পানি থেকে রোদে কাজ করতে বিশেষ ধরনের পোশাক দেয়া হয়। কিন্তু তাতেও রোদ মানে না। শুধু দেশে থাকা ফ্যামিলির মুখের দিকে তাকিয়ে রোদে পুড়ে আয় করি।’
Advertisement
এমইউ/জেডএ/পিআর