ক্রিকইনফোতে দেয়া মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের প্রোফাইলে দেখা যাচ্ছে তার জন্ম ১০ ডিসেম্বর, ১৯৯৫ সালে, ময়মনসিংহে। বর্তমান বয়স, ২২ বছর। কাবিননামায় দেখা যাচ্ছে তিনি বিয়ে করেছেন ২০১২ সালের ২৮ অক্টোবর। অর্থাৎ, মাত্র ১৬ বছর বয়সেই সামিয়া শারমিনের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন বর্তমান জাতীয় দলের ক্রিকেটার মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত।
Advertisement
কিভাবে সম্ভব? এটা তো রীতিমতো বাল্য বিবাহ! তার বিরুদ্ধে ময়মনসিংহের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ নং আমলি আদালতে স্ত্রীর মামলা করার পর বেরিয়ে আসছে নানা তথ্য। জানা গেছে, ২০১২ সালে মোসাদ্দেক যখন বিয়ে করছিলেন, তখন তিনি বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সদস্য। তবে বিয়ের কাবিন নামায় বয়স নিয়ে কিছুটা জালিয়তির আশ্রয় নেয়া হয়। ওই সময় তার বয়স লিখা হয় ২২ বছর।
জানা গেছে, বিয়ের পর মোসাদ্দেক হোসেন খবরটি দীর্ঘদিন গোপন রাখেন। নিজের শশুরবাড়ির লোকজনকেও এই বলে বোঝান যে, বিসিবি এত অল্প বয়সে বিবাহিতদের দলে নেয় না। সুতরাং, বিয়ের খবর যেন তারা গোপন রাখে।
এরই মধ্যে খেলতে খেলতে সৈকত নিজের অসাধারণ প্রতিভা দেখিয়ে জাতীয় দলে জায়গা করে নেয় এবং রাতারাতি তারকাখ্যাতি পেয়ে যায়। এই খ্যাতিই তার পারিবারিক জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ায়। খ্যাতির মোহে মোসাদ্দেক জড়িয়ে পড়েন নানা সম্পর্কে। এই অভিযোগ করেন মোসাদ্দেকের স্ত্রী সামিয়া শারমিনের বড় ভাই মোজাম্মেল কবির।
Advertisement
জানা গেছে, মোসাদ্দেক তার স্ত্রীকে ঢাকায় রাখতে রাজি নন। ময়মনসিংহেই রেখে আসেন তাকে। তবে ধীরে ধীরে তার স্ত্রী মোসাদ্দেকের গোপন কার্যকলাপ জেনে যায় এবং এর প্রতিবাদ করে। ফলে তার ওপর নেমে আসে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। একই সঙ্গে বাসায় বসে মদও পান করেন জাতীয় দলের এই ক্রিকেটার। এর প্রতিবাদ করায়ও শারীরিক নির্যাতনের স্বীকার হন সামিয়া শারমিন।
মোসাদ্দেকের স্ত্রীর বড় ভাই মোজাম্মেল কবির নিজেই অভিযোগের বিষয়গুলো জাগো নিউজকে জানান। আজ সন্ধ্যায় মুঠোফোনে জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘ছয় বছর আগেই মোসাদ্দেক এবং সামিয়ার বিয়ে হয়। বিয়ের পর কয়েক বছর ভালো কাটলেও যখনই মোসাদ্দেক সৈকত জাতীয় দলে নিয়মিতভাবে সুযোগ পাওয়ার পর থেকেই তার নৈতিক স্থলন ঘটতে শুরু করে।’
মোজাম্মেল অভিযোগ করে বলেন, ‘সে (মোসাদ্দেক) ঘরে বসে বন্ধুদের নিয়ে মদপান করতে শুরু করে। অন্য নারীতে আকৃষ্ট হওয়া, তথা নানা অসামাজিক কার্যক্রমে লিপ্ত হতে থাকে। আমার বোন তাকে ওইসব অসামাজিক কার্যক্রম বন্ধের কথা বলতেই সে তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে। তা থেকেই শুরু হয় বিবাদ ও দূরত্ব। আমরা বুঝতে পারি তারকা খ্যাতি, নাম-ডাক ও অর্থ তাকে বদলে দিয়েছে।’
সৈকতের স্ত্রী বিষয়টা জাতীয় দলের ম্যানেজার সুজনকে জানিয়েছেন বলেও জানান মোজাম্মেল। তিনি বলেন, ‘দিনকে দিন সৈকতের আচরণে অতিষ্ঠ আমার ছোট বোন বিষয়টি জাতীয় দলের সাবেক ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজনের কাছে জানান। সুজন সাহেব তার কথা শুনে আশ্বস্ত করে বলেন, ঠিক আছে, মোসাদ্দেক ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর আমেরিকা সফর শেষে দেশে ফিরে আসুক তারপর কথা বলে একটা আপোষ রফা করে দেবেন। সেই অনুযায়ী ১৫ আগস্ট সুজন সাহেবের সঙ্গে আমার বোন ও সৈকতের দেখা করার কথা ছিল।’
Advertisement
এরপরের ঘটনা সম্পর্কে মোজাম্মেল বলেন, ‘এদিকে সৈকত ওয়েস্ট ইন্ডিজ যাবার আগে আমি ছোট বোন সামিয়া শারমিনকে আমার বাসায় এনে রাখি। সৈকত সুজন সাহেবের সঙ্গে বসার কথা বলে গত ১৪ আগস্ট আমার বোনকে তার বাসায় নিয়ে যায়। এরপর তার বাসায় নিয়ে বোনের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালায়। তাকে শারীরিকভাবে আঘাতের পাশাপাশি হুমকিও দেয়। সৈকতের নির্মম নির্যাতন ও হুমকিতে আজ আমার ছোট বোন তার বিপক্ষে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা করতে বাধ্য হয়েছে।’
জানা গেছে, গত এপ্রিলে মোসাদ্দেকের স্ত্রী সামিয়া সন্তান সম্ভবা হয়। এর কিছুদিন পর সৈকত স্ত্রীকে মায়ের কাছে রেখে ঢাকা চলে আসে। গত ২৯ মে সৈকত ভারত সফরে খেলতে গেলে সামিয়া গর্ভবতী অবস্থায় মারাত্মক অসুস্থ হয়ে যায়। তখন ডাক্তার তাকে পূর্ণ বিশ্রামের পরামর্শ দেয়। তার স্ত্রীর অভিযোগ, সৈকতের মা পারুল বেগম পুত্রবধূকে বিশ্রামের সুযোগ না দিয়ে নানারকম ভারী কাজ করায় এবং খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারেরও যথেষ্ট অবহেলা করে।
বিশ্রাম এবং সুষম খাদ্যের অভাবে সামিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে সৈকতের মাসহ পরিবারের লোকজন হাসিঠাট্টা করে। পর্যায়ক্রমে সামিয়ার শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি হলে এবং প্রচণ্ড পেটের ব্যথায় চিৎকার করতে থাকলে সৈকতের ছোট ভাই সান অবস্থা বেগতিক দেখে ডাক্তারের চেম্বারে নিয়ে যায়। ডাক্তারের চেম্বারেই গর্ভপাত ঘটে যায় সৈকতের স্ত্রীর। এরপরও সামিয়ার ভালো চিকিৎসা করানো হয়নি কিংবা ডাক্তারের কাছেও নেয়নি তার পরিবার। সৈকত ভারত থেকে ফিরে অসুস্থ স্ত্রীকে সহানুভূতি না দেখিয়ে নানা রকম মানসিক নির্যাতন করতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে সামিয়া নিশ্চিত হয় সৈকত এবং তার মা চাইছিল না সন্তানটি ভূমিষ্ঠ হোক এবং সন্তানটি নষ্ট করা তাদের পূর্ব পরিকল্পনারই অংশ। আবার যেন সন্তান পেটে না আসে, এ কারণে কৌশলে সৈকতের মা সামিয়াকে কিছুদিনের জন্য বাপের বাড়ি থেকে আসতে বলে। এরপর ১৩ জুলাই সৈকত ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আমেরিকা সফরে চলে যায়।
আমেরিকার ফ্লোরিডায় টি-টোয়েন্টি খেলা শেষে দেশে ফিরে এসে সৈকত ময়মনসিংহে গিয়ে ১৪ আগস্ট রাতে স্ত্রীকে বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে নেয়ার পর সামিয়াকে মানসিক নির্যাতন করে। পরদিন দুপুরে সৈকত সামিয়াকে শারীরিকভাবেও প্রহার করে। হাতাহাতির এক পর্যায়ে ঘরের এলইডি টিভি ভেঙে যায়।
সামিয়া আত্মরক্ষার জন্য তার হাতে থাকা মোবাইল ফোনে নিজের বাসায় খবর দিতে চাইলে সৈকত সামিয়ার হাত থেকে স্মার্টফোনটি কেড়ে নিয়ে আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেলে। ঘরে এমন অবস্থা চলছে জানিয়ে সৈকতের মা তার আত্মীয়-স্বজনকে ফোনে বিষয়টি জানায়।
এরপরই সামিয়ার পরিবার ঘটনা জানতে পারে। খবর পেয়ে পরদিন ১৫ আগস্ট দুপুরে সামিয়ার ভাই সুমন তার বোনকে সৈকতের বাসা থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে এবং ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে নিয়ে চিকিৎসা করান। ওইদিনই ময়মনসিংহের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ নং আমলি আদালতে মামলা করেন সৈকতের স্ত্রী সামিয়া শারমিন।
এআরবি/আইএইচএস/আরআইপি