আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রায় ১০ বছর কাটিয়েও জাতীয় দলের নিয়মিত মুখ হতে পারেননি বাঁহাতি টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েস। তার সমসাময়িক তামিম ইকবাল কিংবা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ দায়িত্ব নিয়ে নিজেদের পরিণত করেছেন ‘পঞ্চপাণ্ডব’ এর অবিচ্ছেদ্য অংশে। সে তুলনায় নিজের সম্ভাবনার অর্ধেকও বাস্তবায়ন করতে পারেননি ইমরুল।
Advertisement
২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখা ইমরুল এখনো পর্যন্ত খেলেছেন ৩৪টি টেস্ট, ৭০টি ওয়ানডে ও ১৪টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। দীর্ঘ দশ বছরে ইমরুলের এই অল্পসংখ্যক ম্যাচ খেলার প্রধান কারণ তার অধারাবাহিকতা। তবু অভিষেকের পর থেকে ২০১২-১৩ সাল পর্যন্ত তামিম ইকবালের সাথে ইনিংসের সূচনা করে বাংলাদেশের হয়ে নানান কীর্তি রয়েছে ইমরুলের নামের পাশে।
২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২৯৬ রানের লিডের বোঝা মাথায় নিয়েও তামিমের সাথে গড়েছিলেন ৩১২ রানের রেকর্ড উদ্বোধনী জুটি। ক্যারিয়ারের সিংহভাগ ম্যাচেই ইনিংস সূচনা করতে নেমে ইমরুল সঙ্গী হিসেবে অপরপ্রান্তে দেখেছেন তামিমকে। ফর্মের কারণে ইমরুল এখন দলে অনিয়মিত হয়ে পড়লেও তামিম নিজেকে পরিণত করেছেন দেশসেরা ব্যাটসম্যানে।
সেপ্টেম্বরে আসন্ন এশিয়া কাপকে সামনে রেখে আগামীকাল (সোমবার) শুরু হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ দলের আনুষ্ঠানিক অনুশীলন। তবে রোববার নিজ গরজেই শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে হালকা অনুশীলন করেছেন ইমরুল। কথা বলেছেন সংবাদ মাধ্যমের সাথেও। সেখানে তিনি জানিয়েছেন তামিমের সাথে খেলতেই সবচেয়ে বেশি সাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
Advertisement
ইমরুল বলেন, ‘তামিমের সাথে সবসময় খেলতে ভালো লাগে। কারণ আমাদের পার্টনারশিপটা খুব ভালো হয়। আমরা ভাগ্যবান যে আমাদের পার্টনারশিপটা খুব ভালো হয়েছে এবং আমরা একসাথে অনেক বড় বড় রান করেছি। যদি আবার সুযোগ হয় তাহলে আবার সেই জুটির পারফরম্যান্স ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করব। একটানা যদি একটা পজিশনে খেলা যায়, তাহলে সেই পজিশনের জন্য নিজেকে মানিয়ে নেয়া যায়। একটু নড়াচড়া হলে আবার নতুন করে শুরু করতে হয়, ফলে একটু সমস্যা তো হয়ই। খারাপ খেলবে ভালো খেলবে, এইসব নিয়েই ক্রিকেটারের ক্যারিয়ার। সবাই একই ধারায় থাকে না। হয়তো আমার ক্ষেত্রে একটু ভিন্ন হয়। আমি চেষ্টা করছি সব সময় নিজেকে প্রস্তুত রাখতে। যতদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার ইচ্ছা আছে ততদিন নিজেকে ফিট রাখার চেষ্টা করব।’
সীমিত ওভারের ক্রিকেটের তুলনায় সাদা পোশাকের টেস্ট ক্রিকেটটাই ভালো খেলেন ইমরুল। তার রয়ে-সয়ে খেলার ধরণটাও মানানসই অভিজাত টেস্ট ক্রিকেটের জন্য। তবে এখনো সে অর্থে টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের প্রমাণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। তবু ইমরুল মনে করেন লাল বলের ক্রিকেটে খুব বেশি কমতি নেই বাংলাদেশ দলের।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টেস্ট সিরিজের ব্যর্থতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, বাংলাদেশে টেস্ট ক্রিকেটে খুব বেশি কমতি নেই। আমরা আমাদের দেশের কন্ডিশনে একরকম খেলা খেলি, আর অন্য দেশের কন্ডিশনে ভিন্ন রকম। বাইরে খেলতে গেলে একটা প্রস্তুতির ব্যাপার থাকে। হুট করেই ভিন্ন কন্ডিশনে মানিয়ে নেয়া সহজ হয় না। যদি উইন্ডিজে ট্রু উইকেট থাকত তাহলে আমাদের ব্যাটসম্যানরা ভালো ব্যাটিং করত।’
আধুনিক যুগের ক্রিকেটে বড় দলগুলোর ভালো করার পেছনে বড় কারণ থাকে আগেই প্রতিপক্ষের সম্পর্কে খুঁটিনাটি জেনে রাখা। বাংলাদেশ দলের সে তুলনায় হোমওয়ার্কটা বেশ কমই থাকে। অথবা হোমওয়ার্ক করা থাকলেও খেলার মাঠে তার ছাপ থাকে না বললেই চলে।
Advertisement
এ ব্যাপারে ইমরুলের মন্তব্য, ‘টিম ম্যানেজম্যান্ট প্রতিপক্ষ নিয়ে পড়াশোনা কম করছে না। এই দিক থেকে কোন ত্রুটি নেই। হাথুরুসিংহে যখন ছিলেন তখনও প্রতিপক্ষ নিয়ে অনেক পড়াশোনা করা হত। আমরা অনেক অনেক বোলারের ভিডিও দেখেছি। প্রায় প্রতিটা দলের বিপক্ষেই একটি করে সিরিজ খেলে ফেলেছি। সেই হিসেবে সবাই সবাইর দুর্বলতা জানে। আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের আগে হয়তো মানসিকভাবে কিছুটা পিছিয়ে ছিলাম। তবে ওয়ানডে ও টি-টুয়েন্টিতে দল যেভাবে ফিরেছে, তাতে আমি খুশি। সিরিজ জয় করাটা অবিশ্বাস্য ছিল।’
এসএএস/জেআইএম