টাঙ্গাইলে গত কয়েক বছরের মতো এবারও কোরবানির পশুর চামড়ার বাজারে মন্দাভাব বিরাজ করছে। এক প্রকার পানির দামে বিক্রি হচ্ছে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়ার চামড়া। ফরিয়ারা বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা থেকে কম দামে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করলেও পাইকার ও আড়তদারদের কাছে সেই দামেও বিক্রি করতে পারছেন না। ফলে লোকশান গুণতে গিয়ে পথে বসার অবস্থা হয়েছে তাদের।
Advertisement
জানা গেছে, টাঙ্গাইল শহরে ১৫টি, কালিহাতী উপজেলার বল্লায় ১৪টি, এলেঙ্গায় ৬টি চামড়ার আড়ত রয়েছে। টাঙ্গাইলে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি পশুর সবচেয়ে বড় হাট ঘাটাইলের পাকুটিয়া। প্রতি রোববার ভোর ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সারা বছর সেখানে চামড়ার হাট বসে। এ হাটে টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার ব্যবসায়ীরা চামড়া বিকিকিনি করেন।
সরেজমিনে রোববার পাকুটিয়া চামড়ার হাটে দেখা যায়, জেলার বৃহত্তর এ হাটে ঋষি, ফরিয়া ও ছোট ব্যবসায়ীদের মধ্যে চামড়া বেচাকেনা চলছে। হাটে আড়তদার ও ট্যানারির কোনো প্রতিনিধিকে দেখা যায়নি। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন খুচরা বিক্রেতারা।
জানা যায়, এবার সরকারিভাবে কোরবানির গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ঢাকায় ৫০ থেকে ৫৫ টাকা ও ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া সারাদেশে খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ২০ থেকে ২২ টাকা ও বকরির চামড়া ১৫ থেকে ১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
Advertisement
জেলার মৌসুমী (ফরিয়া) ব্যবসায়ীরা জানায়, এক লাখ থেকে উপরে কেনা দামের ষাঁড়ের চামড়া গ্রাম-পাড়া ও মহল্লা থেকে সর্বোচ্চ ৯০০ টাকা দিয়ে কিনেছেন। আর এর কমে কেনা ষাঁড়ের চামড়া কিনেছেন প্রতি পিস ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। ছাগলের চামড়া প্রতি পিস ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ টাকা দামে কিনেছেন।
এলেঙ্গার চামড়া ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির জানান, তিনি ৪০০ পিস গরু ও ৫৫০ পিস ছাগলের চামড়া কিনে লবন মেখে হাটে এনেছেন। কিন্তু বড় কোনো পাইকার ক্রেতা তার চামড়া দেখতে আসেনি। বিক্রি না হলে আবারও লবণ মেখে রোদে শুকিয়ে প্রাথমিক প্রক্রিয়াজাত করে মাস খানেক পর আড়তদার বা ঢাকায় ট্যানারিতে বিক্রি করবেন।
টাঙ্গাইল শহরের মো. জালাল মিয়া জানান, তিনি এবার ৪০টি গরুর চামড়া ও ৩০টি ছাগলের চামড়া কিনে বিক্রি করে কোনো রকমে চালান তুলেছেন। শেরপুরের ঝিনাইগাতির শুভাষ ঋষি ও নালিতাবাড়ীর রবি ঋষি জানান, তারা যৌথভাবে এলাকা থেকে ২৩০ পিস ষাঁড়ের চামড়া কিনেছেন। লবন মেখে বিক্রি করতে হাটে এনেছেন। ছোট ছোট ত্রুটিযুক্ত (বাদ) ১০০টি চামড়া মূলধনে বিক্রি করেছেন। বাকি ভালো ও বড় চামড়াগুলো ২-১ জন ক্রেতা খুব কম দাম বলায় বিক্রি করেননি।
বল্লার ব্যবসায়ী আবুল হাসেম জানান, সরকার চামড়া ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ। তিনি ৪০০ গরুর চামড়া কিনেছেন, দাম কম হওয়ায় বিক্রি করতে পারছেন না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ই ক্ষুদে চামড়া ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
Advertisement
টাঙ্গাইল শহরের কান্দাপাড়ার চামড়া ব্যবসায়ী আক্তার হোসেন, পাইকারি ব্যবসায়ী মো. শাহজাদা, বল্লার আড়তদার নুর এলাহী, আবুল হাশেম, এলেঙ্গার শামছু মেম্বার, বেল্লাল মোল্লা, চান মোহন ঋষি জানান, ট্যানারি মালিকরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম কমালে বেশি দামে চামড়া বিক্রি করার কোনো সুযোগ নেই। আগে যে চামড়া সাড়ে তিন হাজার টাকা বিক্রি হতো, সেই চামড়া এখন সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা বিক্রি করতে হয়।
তারা আরও জানান, ট্যানারি ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে তারা চামড়া পানির দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। পাইকারী চামড়া ব্যবসায়ীরা ট্যানারি মালিকদের কাছে লাখ লাখ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। সরকার ট্যানারি মালিকদের ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। অথচ ট্যানারি মালিকরা নানা অজুহাতে বাকিতে চামড়া কিনে টাকা পরিশোধের কথা মনেই রাখেন না। এভাবে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা যায় না।
আরিফ উর রহমান টগর/এমএএস/জেআইএম