দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া খনি থেকে প্রায় দেড় লাখ টন কয়লা গায়েবের ঘটনায় দুটি তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলেও জড়িতদের বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাচ্ছে না বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু।
Advertisement
ঈদের ছুটি শেষে প্রথম কর্মদিবসে রোববার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় প্রতিমন্ত্রী প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান।
কয়লা গায়েবের তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দুটি তদন্ত রিপোর্ট আমরা পেয়েছি। কারা কারা জড়িত, কীভাবে হয়েছে? সেই অনুপাতে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আমরা তো আগেও বলেছি কোন ধরনের দুর্নীতি প্রশ্রয় দেব না। সেই অনুপাতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
কতজনকে দোষী পেয়েছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যেহেতু মামলা করেছি, মামলার তদন্তের ওপর এখন নির্ভর করছে। এই তদন্তগুলো হয়ত সাপোর্টিভ হবে মামলার জন্য। আর দুদকও যেহেতু মামলা করছে, আর আমি প্রকাশ্যে এভাবে বলতে চাই না। কারণ, এগুলো মামলাকে আরও বেশি অন্যদিকে নিয়ে যাবে।’
Advertisement
নসরুল হামিদ বলেন, ‘যেহেতু দুদক করছে, মামলার তদন্ত পুলিশ করবে, আমাদের ইনিশিয়াল একটা তদন্ত আছে মন্ত্রণালয়ের। এই বিষয়গুলো ওই অবস্থায় থাকলে আরও বেটার হবে তারা যদি আরও ডিটেইলে যায়।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আশা করছি সেপ্টেম্বর নাগাদ বড় পুকুরিয়া অল্প পরিসরে চালু করতে পারব যেভাবে কয়লা উঠছে। আমরা কিছু কয়লা দিয়ে কিন্তু চালু করেছিলাম একটা প্ল্যান্ট। গত পাঁচদিন যাবত ওখানে কিন্তু একটা প্ল্যান্ট চালু ছিল। আমরা ইতোমধ্যে সেটাকে কাভার করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। একটা স্টক বিল্ডআপ করার জন্য। বাকিটা ওখানকার কয়লা দিয়ে হবে।’
জরুরি প্রয়োজন মেটাতে ১ লাখ টন কয়লা আমদানি
কয়লা আমদানির বিষয়ে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘টেন্ডারে আমরা চলে গেছি, স্টক বিল্ডআপ করার জন্য একটা সার্টেন পরিমাণ আমরা আমদানি করব। এটা রেগুলার ভিত্তিতে হবে না, একটা স্টক আমাদের হাতে রাখা দরকার। যেকোনো ইমার্জেন্সি হতে পারে। সেই ইমার্জেন্সি সময়ের জন্য আমরা একটা স্টক বিল্ডআপ করা দরকার বলে কিছু ইমপোর্ট করতে যাচ্ছি।’
Advertisement
কী পরিমাণ ইমপোর্ট করা হবে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘লাখ খানেক টনের মতো হবে। এই ইমপোর্ট করার জন্য সবচেয় বড় চ্যালেঞ্জ হলো ক্যারিং করা, চিটাগাং পোর্ট থেকে বা মোংলা পোর্ট থেকে বড় পুকুরিয়াতে নিয়ে আসাটা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’
কোন দেশ থেকে আনা হবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা এখনও ঠিক হয়নি। টেন্ডার দেয়া হয়েছে। যারা পার্টিসিপেট করবে, তারা প্রস্তাব দেবে।’
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে কয়লা গায়েব হয়ে যাওয়ার পর জ্বালানি সংকটে বন্ধ হয়ে যায় খনির পাশের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি।
বড়পুকুরিয়ায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি কবে নাগাদ পুরো মাত্রায় উৎপাদন শুরু হবে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আশা করছি, অক্টোবর নাগাদ পুরো মাত্রায় যেতে পারব। এখন যে কয়লা উঠছে আস্তে আস্তে বিল্ডআপ হচ্ছে। প্রতিদিন হয়ত তিন হাজার টন দিতে পারবে। হয়ত সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে আমরা পুরোপুরি কয়লা পাব।’
তেল-বিদ্যুতের দামে আমরা ‘কমফোর্ট’ দিতে চাই
নির্বাচন সামনে রেখে তেল বা বিদ্যুতের দাম কমানোর কোনো পরিকল্পনা আছে কি না- জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের পরিকল্পনার ব্যাপারে বলতে পারি না। আমরা যা দিয়েছি বহু আগে, ছয় মাস আগে দিয়ে ফেলেছি বার্কে (বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন)। বার্কের ওপর ডিপেন্ড করে প্রাইস কী হবে।’
‘আমাদের বিষয়টা হলো, আমরা এই জায়গাটায় কমফোর্ট দিতে চাই। যাতে এ রকম কিছু না হোক, যেটা অস্বাভাবিক যাতে কিছু না হয়। এটা আমাদের দেখার বিষয়। আমরা আশা করি দামটা যাতে সহনীয় পর্যায়ে থাকে।’
এলএনজি বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এলএনজি পাইপলাইনে শুরু হয়ে গেছে, আমরা আস্তে আস্তে এটা বিল্ডআপ করব। আমরা দেখছি যে কীভাবে শুরু হচ্ছে। আমরা শিকলবাহা পাওয়ার প্ল্যান্টটা বন্ধ ছিল, সেটা এলএনজি দিয়ে গ্যাসের মাধ্যমে শুরু করে ফেলেছি। এখানে রাউজান শিকলবাহা পাওয়ার প্ল্যান্টে আস্তে আস্তে শুরু করব। ওখানে চিটাগাংয়ে গ্যাসের পরিমাণ ২০০/২৫০ এমএমসিএফ গ্যাস তো, আমরা মনে করছি যে এটা সাড়ে ৩০০-৪০০ এমএমসিএফের মতো দাঁড়াবে। আশা করছি অক্টোবরের মধ্যে আমাদের যে পরিমাণ নেয়ার কথা, আমরা সেটা বিল্ডআপ করতে পারব এলএনজিতে।’
‘এখন আমাদের ৭৫ থেকে ১০০ এমএমসিএফ নেয়ার মতো ক্যাপাসিটি বিল্ডআপ হয়ে গেছে পাইপলাইনে এবং সেটা যাচ্ছে।’
এলএনজির জন্য কী পরিমাণ ভর্তুকি লাগবে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ভর্তুকি এখানে খুব বেশি লাগবে না, আমাদের যে পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো ডুয়েল ফুয়েল অর্থাৎ যেগুলো তেলে চলছিল, যেগুলো আমরা গ্যাসে চালাতে পারি, সেগুলোকে আমরা শিফট করে ফেলব। তেলটাকে বন্ধ করে দিয়ে আমরা গ্যাসে চালাব। সুতরাং বিদ্যুতের ক্ষেত্রে আমরা কমফোর্ট থাকব। এখানে আমাদের কোনো রকম অতিরিক্ত টাকার প্রয়োজন হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেকটা বিষয় হচ্ছে, খুব বেশি ভর্তুকি আমরা এসব জায়গায় যাব না, কারণ গ্যাস যেটা আসছে, সেটা আমাদের ন্যাচারাল গ্যাসের সঙ্গে মিক্সড করে আমরা দিচ্ছি।’
আরএমএম/এমআরএম/জেআইএম