জাতীয়

সৌদিতে দ্বিগুণ হচ্ছে গৃহকর্মীদের বেতন

>> বেতন দ্বিগুণ করতে সৌদি সরকারের কাছে অনুরোধ>> ২০১৫ সালের পর দুই লাখ নারী শ্রমিক সৌদি গেছেন>> নির্যাতনের মুখে দেশে ফিরেছেন ৫ হাজারের বেশি নারী

Advertisement

সৌদি আরবে কর্মরত গৃহকর্মীদের কপাল খুলছে। তাদের বেতন-ভাতা দ্বিগুণ করা হচ্ছে। গতকাল শনিবার (২৫ আগস্ট) সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বাংলাদেশ হজ মিশন অফিসে জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে রাষ্ট্রদূত জানান, বর্তমানে সৌদি আরবে কর্মরত গৃহকর্মীদের ন্যূনতম মাসিক বেতন বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৬ হাজার টাকা। তবে তাদের বেতন দ্বিগুণ করতে দূতাবাসের মাধ্যমে সৌদি সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

আরও পড়ুন >> ‘বেতন ছাড়া কাজ করলে কর, নইলে বাড়ি যা’

Advertisement

খুব শিগগিরই গৃহকর্মীদের বেতন দ্বিগুণ হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

জানা গেছে, বর্তমানে সৌদি আরবে সাত লাখেরও বেশি গৃহকর্মী কর্মরত রয়েছে। তারা ন্যূনতম ১৬ হাজার টাকা বেতন পাচ্ছেন। তবে গৃহভেদে গৃহকর্মীর বেতন ৩০ হাজার টাকাও আছে। জীবনযাত্রার সার্বিক দিক বিবেচনা করে ন্যূনতম বেতন দ্বিগুণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা থেকে রিয়াদে গৃহকর্মী নেয়ার ব্যাপারে সৌদির বেসরকারি এজেন্সির সঙ্গে বাংলাদেশের সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ফলে ৬০ হাজারেরও বেশি নারী গৃহকর্মীর জন্য সৌদি আরবের দুয়ার খুলে যায়।

চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়, গৃহকর্মীদের সর্বোচ্চ বেতন ১২০০ রিয়াল (বাংলাদেশি টাকায় ২৬ হাজার) ও সর্বনিম্ন ১০০০ রিয়াল (২২ হাজার)। এর ব্যত্যয় হতে পারবে না। তবে নারী গৃহকর্মীদের অনেকের অভিযোগ, ৮০০ রিয়ালের (১৭ হাজার) বেশি তাদের বেতন দেয়া হয় না।

Advertisement

আরও পড়ুন >> দুই কূলই হারাচ্ছেন সৌদি ফেরত নারীকর্মীরা

সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী, গৃহকর্মীদের একাধারে প্রতিদিন কমপক্ষে ৯ ঘণ্টা বিশ্রাম, সপ্তাহে একদিন ছুটি, পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যসম্মত থাকার জায়গা, ভালো খাবার, কাপড় এবং প্রয়োজনীয় দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসপত্র দিতে হবে।

পাশাপাশি গ্রহণযোগ্য অসুস্থতার কারণে গৃহকর্মীকে সবেতনে ছুটি দেয়া এবং তার যাবতীয় চিকিৎসার ব্যয়ভার নিয়োগকর্তার বহন করতে হবে।

চুক্তির মেয়াদ (দুই বছর) শেষ হওয়ার পর উভয় পক্ষ তা বৃদ্ধি করতে চাইলে গৃহকর্মী নিয়োগকর্তার খরচে পূর্বের চুক্তি অনুযায়ী ৩০ দিনের সবেতন ছুটিতে দেশে ফিরে যাবেন। যদি কোনো অজ্ঞাত কারণে গৃহকর্মী কাজে অনুপস্থিত থাকে তাহলে নিয়োগকর্তাকে সৌদির রিক্রুটিং এজেন্সিকে জানাতে হবে। পরে রিক্রুটিং এজেন্সি তা বাংলাদেশ দূতাবাসকে অবহিত করবে।

আরও পড়ুন >> থামছে না ওদের চোখের পানি

নিয়ম অনুযায়ী, স্বাধীনভাবে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেয়ার বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। তবে অনেক গৃহকর্মীর অভিযোগ, পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে চাইলে তাদেরকে মারধর করা হয়। এছাড়া ছোটখাট কারণে তাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতও করা হয়।

এসব কারণে গত ১৯ মে সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরেন ৬৬ গৃহকর্মী। বিমানবন্দরের প্রবাস কল্যাণ ডেস্ক থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ৩ মে ৩৫ জন, ১২ মে ২৭ জন, ১৯ মে ৬৬ জন, ২৩ মে ২১ জন, ২৭ মে ৪০ জন এবং ৩ জুন ২৯ নারী শ্রমিক দেশে ফিরে আসেন।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে অভিবাসী নারীর সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ১৯ হাজার ৯২৫ জন। যা মোট অভিবাসন সংখ্যার ১৩ শতাংশ।

১৯৯১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত অভিবাসনপ্রত্যাশী নারী শ্রমিককে অভিবাসনে বাধা দেয়া হলেও পরবর্তী সময়ে ২০০৩ ও ২০০৬ সালে তা কিছুটা শিথিল করা হয়। ২০০৪ সালের পর থেকে ২০১৩ পর্যন্ত নারী শ্রমিকের অভিবাসন হার ক্রমাগত বাড়তে থাকে।

২০১৫ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে দুই লাখ নারী শ্রমিক সৌদিতে গেছেন। এর মধ্যে নির্যাতনের মুখে পাঁচ হাজারের বেশি নারী দেশে ফেরত এসেছেন। তাদের বেশির ভাগই সৌদি আরবের সফর জেলসহ বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে থেকে দূতাবাসের সহায়তায় দেশে ফেরত আসেন।

এমইউ/এসআর/এমএআর/আরআইপি