আন্তর্জাতিক

বাবা চা বিক্রেতা, বাড়ি ছাড়ল মেয়ে

বাবা পেশায় চা বিক্রেতা। ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে রাত বারোটা পর্যন্ত একটি হাসপাতালের সামনে চা বিক্রিতে সময় কাটে তার। টানাটানির সংসারে তিনিই একমাত্র আয়ের উৎস। তার স্বপ্ন- চায়ের দোকান চালিয়েই দুই মেয়ের এক জনকে ডাক্তার বানাবেন, অন্য জনকে উকিল। তবে হঠাৎ স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে ওই ব্যক্তির। বড় মেয়ে জানিয়ে দিয়েছে- চা বিক্রেতা বাবার পরিচয় নিয়ে পরিবারের সঙ্গে থাকতে চায় না সে। ঘটনাটি ভারতের।

Advertisement

পুলিশ বলছে, তারকেশ্বর যাবে বলে গত ১৮ আগস্ট বাড়ি ছাড়ে ওই কিশোরী। ওই রাতেই তার ফিরে আসার কথা ছিল। কিন্তু গোটা রাত মেয়ের খোঁজ না পেয়ে একের পর এক ফোন করতে থাকেন বাড়ির লোকজন। পরদিন সকালে কিশোরী নিজেই বাড়িতে ফোন করে জানায়- সে আর ফিরবে না। সে বলে- ‘মুম্বাই চললাম। মডেলিং করব। চা বিক্রেতার মেয়ে হিসেবে এখানে কিছুই হবে না।’সে আরও জানায়, রাজা নামের ওই যুবক তার সঙ্গে রয়েছে।

কিশোরীর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নামে পুলিশ। ১৯ আগস্ট রাজা ফোন করে কিশোরীর মা আর বোনকে একটি শপিং মলে দেখা করতে বলে। সঙ্গে ছিল ওই কিশোরী। অভিযোগ, বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য মা জোর করলে সেখানেই ফিনাইল খেয়ে আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে ওই যুবকের সঙ্গে পালায় একাদশ শ্রেণির ছাত্রী ওই কিশোরী।

দুদিন কোনো খোঁজ না পেয়ে পুলিশ রাজার পরিবারের লোকজনকে আটক করে। চাপে পড়ে ধরা দেয় রাজা আর ওই কিশোরী। প্রথমে পুলিশের মনে হয়, রাজা বিয়ে করবে বলে কিশোরীকে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু পুলিশের সামনে দুজনই বিষয়টি অস্বীকার করে।

Advertisement

কিশোরী বলে, প্রেম বা বিয়ে নয়, মডেল হতে সে রাজার সাথে পালিয়েছে। ‘স্বপ্ন’ পূরণে রাজা সাহায্য করছে মাত্র।

পুলিশের অনুমান, রাজাই ওই কিশোরীকে মুম্বাইয়ে মডেলিংয়ের লোভ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। এই চক্রে আরও অনেকে জড়িত থাকতে পারে। গ্রেফতার করে রাজাকে গত ২৩ তার ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। কিশোরীকে হোমে রেখে মেডিকেল পরীক্ষারও নির্দেশ দেয়া হয়। শুক্রবারই কিশোরীর গোপন জবানবন্দি নেয়া হয়েছে আদালতে।

রবীন্দ্র সরণিতে ওই কিশোরীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শরিকি বাড়ির চারতলার ছোট ঘরে বাবা-মা আর বোনের সঙ্গে থাকত সে। একটা ছোট খাট ছাড়া আর কোনো আসবাব নেই সেই ঘরে। তারই মধ্যে দেয়াল জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে মেয়ের মডেল হওয়ার স্বপ্ন। রকমারি আধুনিক পোশাক, নানা ধরনের সাজে তার ছবি ঝুঁলছে ঘর জুড়ে।

কিশোরীর মা বলেন, ‘চায়ের দোকানের রোজগারে কোনোমতে আমাদের সংসার চলে। তাতেই দুই মেয়ের পড়াশোনা। মাধ্যমিক দেয়ার পরেই ওর মাথায় যে কী ভূত চাপল, মডেলিং মডেলিং করে লাফাতে শুরু করল! গত এক মাস অনেক রাত করে বাড়ি ফিরত। প্রায়ই নতুন পোশাক কিনছিল। এত টাকা কোথা থেকে পাচ্ছে, তা জানতে চাইলে উত্তর দিত না।’

Advertisement

মেয়ে কোথায় গিয়েছে?-চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন শুনেই কেঁদে ফেলেন কিশোরীর বাবা। বলেন, ‘আমি তো চা বিক্রেতা। আমার কথা বললে না কি ওর বন্ধুরা মেলামেশা বন্ধ করে দেয়। মডেলিং তো এখানে থেকেও করা যায়। আসলে আমার মেয়ে আমাকেই আর সহ্য করতে পারছে না।’

মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, এই সমস্যা অনেক গভীরে। ওই কিশোরীর ভাবনা-চিন্তায় প্রভাব ফেলছে সমাজে সম্মান না পাওয়ার আশঙ্কা। তা তৈরি হয়েছে বেড়ে ওঠার সময়ে চারপাশের নানা আচরণ ও অভিজ্ঞতা থেকেই।

সূত্র: আনন্দবাজার

এসআর/পিআর