জাতীয়

মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফেরা বৃদ্ধা শহিদার গল্প

শনিবার, দুপুর ১টা। মক্কার মিসফালাহর বাংলাদেশ হজ মেডিকেল সেন্টার ক্লিনিকের অভ্যর্থনা কক্ষের সোফার ওপর সটান হয়ে শুয়ে আছেন এক বৃদ্ধা। বয়স আনুমানিক ৬৫ বছর। বৃদ্ধার শিয়রে বসে পা টিপছেন মধ্যবয়সী এক নারী। বৃদ্ধার দুচোখের নিচে শুকিয়ে যাওয়া রক্তের কালচে দাগ।

Advertisement

অনেকটা সময় অপেক্ষা করে বৃদ্ধাকে চোখ খুলতে না দেখে এ প্রতিবেদক নারীর কাছে বৃদ্ধার পরিচয় জানতে চান। দিনাজপুরের চেহেলগাজি কলেজের প্রভাষক শামীমা আক্তার রুমি জানান, ৯ জিলহজ তার মা শহিদা বেগম মক্কা থেকে আরাফাতের ময়দানে যান। সেখানে বাস থেকে নামার সময় চালকের অসতর্কতায় রাস্তায় পড়ে গিয়ে মাথায় মারাত্মক আঘাত পান। তাঁবুতে পৌঁছে ঘনঘন বমি করতে থাকেন। পাগলের মতো ছোটাছুটি করে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে সৌদির হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে।

রুমির স্বামী দিনাজপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম বলেন, তার শাশুড়ির শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে আরাফাতের হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ২০ কিলোমিটার দূরের অন্য একটি হাসপাতালে নেয়া হয়। মায়ের কাছে মোবাইল ফোন না থাকায় এবং খুব দ্রুত রেফার করায় তারা ভেবে নেন যে, শহিদা বেগম হয়তো আর বেঁচে নেই। লাশ দাফনের জন্য নিয়ে গেছে।

রুমি জানান, তিনি, তার স্বামী, ছেলে, ভাই-বোন ও মাসহ ছয়জন হজে আসেন। মার সন্ধান না পেয়ে সবাই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। এমন মানসিক অবস্থা নিয়ে তারা আরাফা, মুজদালিফা ও মিনায় পাথর নিক্ষেপ করে মক্কায় ফিরে আসেন।

Advertisement

কান্নাজড়িত কণ্ঠে রুমি আরও জানান, মাকে হারিয়ে তিন রাত দু’দিন পরিবারের প্রতিটি সদস্যের ওপর দিয়ে কেমন মানসিক যন্ত্রণা বয়ে গেছে তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। বুকে যেন কেউ পাথর চাপা দিয়ে রেখেছিল। কাঁদতে চাইলেও পারিনি। তিনদিন নিবিড় চিকিৎসার পর সৌদি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ হজ মিশনের কাছে শহিদাকে হস্তান্তর করে।

এমইউ/এমএআর/এমবিআর