সড়ক-মহাসড়কে যাত্রীদের কাছে এখন এক আতঙ্কের নাম শ্যামলী পরিবহন। যাত্রা শুরুর পর প্রায় তিন যুগ পেরুলেও এ পরিবহন এখনও যাত্রীদের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। দূরপাল্লার এ পরিবহন কখনও নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, কখনও অনিয়ন্ত্রিত গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে চাকার নিচে পড়ে, আবার কখনও মুখোমুখি সংঘর্ষের কারণে দীর্ঘ এ সময়ে যাত্রী-পথচারীর প্রাণহানিসহ পঙ্গুত্ববরণ করার মতো অনেক ঘটনা ঘটেছে।
Advertisement
এক সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম-নোয়াখালী সড়কে যাত্রীসেবা নামের পরিবহনটি ছিল এক আতঙ্কের নাম। বেপরোয়া গতিতে চালানো যাত্রীসেবা পরিবহন যাত্রীদের কাছে যাত্রী হত্যার পরিবহন হিসেবে চিহ্নিত হয়। সাম্প্রতিক সময়ে শ্যামলী পরিবহন এখন দেশব্যাপী এক প্রাণঘাতি পরিবহন হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। প্রতিদিন দেশের কোনো না কোনো স্থানে এই পরিবহনটির বেপরোয়া গতির কারণে প্রাণ হারানোসহ পঙ্গুত্ববরণ করছে যাত্রীরা।
সর্বশেষ গত ২ দিনে (শুক্র ও শনি) ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি ও ফেনীতে শ্যামলী পরিবহনের দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৮ যাত্রী এবং আহত হয়েছেন বিভিন্ন বয়সের অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষ।
জানা যায়, ১৯৭৮ সাল থেকে পাবনার সন্তান গণেষ চন্দ্র ঘোষ মাত্র একটি বাস নিয়ে শুরু করেন শ্যামলী পরিবহনের ব্যবসা। বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, সিলেট, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়াসহ দেশের ৪০ জেলায় ৬ শতাধিক এসি ও নন-এসি বাস চলাচলের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সড়কে ঢাকা-কলকাতা, আগরতলা-শিলিগুড়ি সড়কে এ পরিবহনের বাস সার্ভিস চালু রয়েছে।
Advertisement
যাত্রীদের অভিযোগ, চালকদের বেপরোয়া গতির কারণেই শ্যামলী পরিবহন নামের এ সার্ভিসটি এখন সড়কে এক ভয়ঙ্কর আতঙ্ক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। ভুক্তভোগী যাত্রীদের মতে, শ্যামলী যেন রাস্তায় মৃত্যু দূত। প্রতিদিনই এ সার্ভিসের গাড়ি বিভিন্ন জেলায় সড়কে-মহাসড়কে দুর্ঘটনায় কবলে পড়ছে।
গত শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর লেমুয়া এলাকায় শ্যামলী পরিবহনের বাস চাপায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ৫ যাত্রী নিহত হয়। সর্বশেষ শনিবার ভোরে একই মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দির জিংলাতলী এবং রায়পুর এলাকায় শ্যামলী পরিবহনের দুটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে খাদে পড়ে ২ জন নিহত এবং প্রায় অর্ধশত যাত্রী আহত হয়। এদের মধ্যে ১০ জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
ওই দুর্ঘটনায় আহতরা জানান, চালকের চোখে ঘুম এবং বেপরোয়া গতির কারণেই দুটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। আবু তাহের নামের আহত এক যাত্রী জানান, চালককে বার বার নিষেধ করা পরও গাড়ির গতি এমন ছিল যে পেছনের আসনে বসা অনেক যাত্রী চিৎকার করেও গাড়ির গতি কমাতে পারেনি। এ সময় গাড়ির হেলপার উল্টো যাত্রীদের সঙ্গে অশালীন আচরন করেন। যাত্রীরা ঘটনাস্থলে হাইওয়ে পুলিশকে গাড়ির চালক ও হেলপারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করলেও ততক্ষণে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় বাস দুটির চালক ও হেলপার।
এদিকে এক অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে ১০৪ কিলোমিটার এলাকায় প্রায় প্রতি সপ্তাহেই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এসব দুর্ঘটনার অধিকাংশ বাসের বেপরোয়া গতির কারণে ঘটছে বলে জানা গেছে। এ সড়কে চলাচলকারী দূরপাল্লার পরিবহনের মধ্যে বেপরোয়া গতি ও দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে শ্যামলী পরিবহন-এমন অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী যাত্রীরা।
Advertisement
হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. নজরুল ইসলাম জানান, সড়ক-মহাসড়কে যে সব দুর্ঘটনা ঘটে অধিকাংশই চালকদের বেপরোয়া গতির কারণে ঘটছে। এছাড়াও কিছু কিছু সড়কে অবৈধভাবে ফিটনেসবিহীন গাড়ি, সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও লেগুনার কারণে দুর্ঘটনা ঘটে।
তিনি আরও বলেন, গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দিনের বেলায় স্পিডগান ব্যবহারের মাধ্যমে অতিমাত্রার গতিতে থাকা যানবাহনকে জরিমানা করা হচ্ছে। মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমাতে এ পদ্ধতি ব্যবহার অব্যাহত রাখা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
এমএএস/জেআইএম