ঈদুল আজহায় ফাঁকা হয়ে গেছে রাজধানী। তিন ঘণ্টার রাস্তা যাওয়া যাচ্ছে মাত্র আধা ঘণ্টায়। ঈদের আমেজের মধ্যে আজ শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন। এমন দিনে বিনোদনপ্রেমীদের ঢল নেমেছে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে। বাদ যায়নি রাজধানীর শ্যামলীতে অবস্থিত শিশুমেলা। যা এখন `ডিএনসিসি ওয়ান্ডারল্যান্ড’ নামে পরিচিতি। ঈদের তৃতীয় দিনে পরিবার, আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে নিয়ে শিশুরা এসেছে শিশুমেলায়।
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি ঈদেই ভিড় জমে শিশুমেলায়। বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে ঘুরতে শিশুদের প্রিয় স্থানগুলোর মধ্যে জনপ্রিয় শিশুমেলা। শিশুদের বিনোদনের জন্য সব ব্যবস্থা করে রেখেছে ওয়ান্ডারল্যান্ড কর্তৃপক্ষ। ঈদ উপলক্ষে ঘষামাজা আর রংতুলিতে বিনোদনকেন্দ্রটির সৌন্দর্য আরও বাড়ানো হয়েছে।
শুক্রবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, লাইনে দাঁড়িয়ে বিনোদনপ্রেমীরা টিকিট কিনছেন। বাইরে থেকে ভেতরের ভিড় আন্দাজ করার উপায় নেই। বাইরে শান্ত পরিবেশ থাকলেও ভেতরে শিশুদের আনন্দ, চিৎকার, আর খুনসুটিতে পুরোদমে মজেছে ওয়ান্ডারল্যান্ড।
ঈদের তৃতীয় দিনে শুধু স্থানীয়রা নয়, ঘর ছেড়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে এ বিনোদনকেন্দ্রে এসেছেন বিনোদনপ্রেমীরা। ছোট-বড় সকলের উপস্থিতিতে এক বর্ণিল পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে জায়গাটিতে।
Advertisement
শিশুদের আনন্দময় ব্যস্ততার কেন্দ্র ‘কিডি রাইডস গেম’, ‘মেরী গো রাউন্ড’, ‘চুক চুক ট্রেন’, ‘হ্যানি সুইং’, ‘সোয়ান অ্যাডভেঞ্চার’, ‘প্যারাট্রুপার’, ‘মিনি ট্রেন’, ‘টোয়িস্ট’, ‘ব্যাটারি কার’, ‘ক্রেজি ড্যান্স’, ‘ভিডিও গেমস’, ‘হেলিকপ্টার কর্নার’, ‘বাউন্সি ক্যাসল’, ‘থ্রি-ডি গ্যালারি’, ‘ভাইকিং বোট’, ‘বাম্পার কার’, ‘ড্রাগন রোলার কেস্টার’, ‘স্পেইস শাটল’, ‘ওয়ান্ডার হুইল’ ও ‘থ্রি-ডি অ্যাডভেঞ্চার’।
ওয়ান্ডারল্যান্ডে রাজধানীর মহাখালী থেকে ছেলে নিরবকে নিয়ে ঘুরতে এসেছেন মা পান্না বেগম। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এই প্রথম ওকে নিয়ে শিশুমেলায় আসা। বাইরে ঘুরতে ওর খুব ভালো লাগে। তাই নিয়ে এসেছি। এখানে এসে ওর খুশি আর ধরে না! খুব মজা পাচ্ছে। যেন সব কিছুতেই উঠবে। ছেলের আনন্দ দেখে আমারও খুব ভালো লাগছে।’ ঘরের কাছেই এমন বিনোদনকেন্দ্র থাকায় বেশ সুবিধা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
গাজীপুর থেকে সপরিবারে ঢাকার মোহাম্মদপুরে আত্মীয়ের বাসায় ঘুরতে এসেছেন জসিম উদ্দিন নামে স্থানীয় ব্যবসায়ী। শুক্রবার দুপুরে ছেলে ইয়াসিন ও ভাগ্নি প্রিয়াকে নিয়ে ওয়ান্ডারল্যান্ডে আসেন।
তিনি বাউন্সি ক্যাসলে ছেলেকে বসিয়ে দোল দিতে দিতে বলেন, ‘আমরা ছোট বেলায় এত মজার মজার স্থান পাইনি। থাকলেও সুযোগ মেলেনি। এখনতো বিনোদনকেন্দ্রগুলো শিশুদের ঘোরার প্রিয় জায়গা। এখানে আসার পর অনেক বেশি মজায় মজেছে ছেলে। ওর আনন্দ দেখে ভীষণ ভালো লাগছে।’
Advertisement
পুরো ওয়ান্ডারল্যান্ড যেন শিশুদের দখলে। বাবা-মা কিংবা সঙ্গে আসা আত্মীয়রা পাশে দাঁড়িয়ে থেকে শিশুদের সহযোগিতা করছেন। সহযোগিতায় ওয়ান্ডারল্যান্ড কর্মীরাও। কেউ ‘কিডি রাইডস গেমসে’ ব্যস্ত। কেউ বা ‘মেরী গো রাউন্ড’, ‘চুক চুক ট্রেন’, ‘হ্যানি সুইং’, ‘প্যারাট্রুপার’, ‘মিনি ট্রেন’ ও ‘হেলিকপ্টার কর্নারে উঠে চিৎকার করে উঠছে, ভয়ে চোখ বন্ধ করছে, কখনও ভয়ে বাবাকে ডাকছে।
টিকিট বিক্রেতা সাকলাইন কাজী বলেন, ‘এখানে প্রবেশ টিকিট ৫০ টাকা। আর ভেতরে আলাদা আলাদা ২০টি রাইডস আছে। প্রত্যেকটির জন্য ৪০ টাকা করে টিকিটের ব্যবস্থা রয়েছে। কাউন্টার থেকে টিকিট নিয়ে সবকিছুই দেখা যাচ্ছে।
ডিএনসিসি ওয়ান্ডারল্যান্ডের ম্যানেজার নুরুল হুদা জাগো নিউজকে বলেন, ‘শ্যামলীর এ বিনোদনকেন্দ্রটির নিয়ন্ত্রণ সিটি কর্পোরেশনের অধীনে আসার পর কোনো সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়াই সপ্তাহের সাতদিনই সকাল ৯টা থেকে থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকছে। স্বাভাবিক দিনগুলোর চাইতে ঈদের সময় ভিড় বেশি থাকে। তার মধ্যে আজ শুক্রবার হওয়ায় ভিড় জমেছে বেশ।’
তিনি বলেন, শিশুদের বিনোদনের কথা মাথায় রেখে সবকিছু সাজানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, রাজধানীর শ্যামলীতে মিরপুর রোড এবং আগারগাঁওমুখী সড়কের সংযোগস্থলে শিশুপার্ক নির্মাণ করে পরিচালনার জন্য পূর্ত মন্ত্রণালয় তৎকালীন ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের কাছে ১৯৮৫ সালের ১৫ অক্টোবর ১ দশমিক ৪০ একর জমি হস্তান্তর করে।
২০০২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ‘ভায়া মিডিয়া বিজনেস সার্ভিসেস’ এর কাছে নিজ খরচে আধুনিক খেলার যন্ত্রাংশ স্থাপনের শর্তে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৭৫৬ টাকা মূল্যে ৩ বছরের জন্য ইজারা দেয়।
তবে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে গত বছর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ‘ডিএনসিসি ওয়ান্ডারল্যান্ড’ নামে পরিবর্তন হয় শ্যামলী শিশুমেলা।
জেইউ/এসআর/পিআর