প্রয়োজন ১৫৭। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৯ ওভারেই ৮০ রান তুলে ফেলেছেন গ্লেন ফিলিপস আর জনসন চার্লস। জয় তখন পুরোই হাতের মুঠোয়। এ সময় বার্বাডোজ ট্রাইডেন্টসের অধিনায়ক জ্যাসন হোল্ডার দারুণ এক সিদ্ধান্ত নিলেন। বল তুলে দিলেন একজন স্পিনারের হাতে। সেই স্পিনার যখন বল করতে এলেন, তখন গ্যালারিতে উপস্থিত দর্শকদের চোখে ধুলো পড়ার অবস্থা। সবাই চোখ মুচে ভালো করে তাকিয়ে দেখতে চাইলেন, ‘আরে! পাকিস্তানের শহিদ আফ্রিদি এলেন কোথা থেকে? তিনি তো এই লিগে কোনো দলেই নেই!’
Advertisement
দর্শকদের চোখে ধুলো দিয়ে যে স্পিনার বল করতে এলেন, তিনি আর কেউ নন, বল টেম্পারিংয়ের দায়ে নিষিদ্ধ, অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ। পুরোপুরি আফ্রিদিকে নকল করে তিনি বোলিং শুরু করলেন। ফলাফল?
অভাবনীয়! ৯ ওভারে যে জুটিতে ভাঙন ধরাতে পারেনি আগের ৫জন বোলার, সেই ফিলিপস আর জনসনকে মাত্র ৫ বলের ব্যবধানে প্যাভিলিয়নের পথ দেখিয়ে দিলেন স্মিথ। নিজস্ব স্টাইল থেকে বেরিয়ে এসে পুরোপুরি আফ্রিদিকে নকল করলেন সাবেক অসি অধিনায়ক এবং দারুণ সফল তিনি। দুই ইনফর্ম চার্লস আর ফিলিপকে ফিরিয়ে দিয়ে যে শেষ পর্যন্ত বার্বাডোজের জয়ই নিশ্চিত করে দিয়েছেন তিনি!
স্মিথের হাতে ২৪ বলে ৩৬ রান করে গ্লেন ফিলিপস উইকেটের পেছনে নিকোলাস পুরানের হাতে ক্যাচ দেন। এরপর চার্লস জনসনকে ৩২ বলে ৪২ রানে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন মার্টিন গাপটিলের হাতে। এরপর জ্যামাইকা তালাওয়াহসের উইকেট পড়েছে মাত্র একটি; কিন্তু তাতে লাভের লাভ কিছুই হয়নি। স্মিথের বলে যে ধাক্কা লেগেছে, সেখান থেকে আর বের হতেই পারেনি জ্যামাইকা। রানের গতি হয়ে পড়ে মন্থর।
Advertisement
শেষ পর্যন্ত বার্বাডোজ ট্রাইডেন্টসের কাছে মাত্র ২ রানের থ্রিলারে হেরে যায় জ্যামাইকা তালাওয়াহস। স্মিথ ৩ ওভারে ১৯ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। এরপর একটিমাত্র উইকেট পড়েছে, কেনার লুইসের। সেটি পেয়েছেন মোহাম্মদ ইরফান।
বল টেম্পারিংয়ের অপরাধে নিজ দেশের ক্রিকেটে নিষিদ্ধ স্টিভেন স্মিথ। জাতীয় দলের হয়ে আন্তর্জাতিকের কোনো চাপ নেই। এরই মধ্যে সুযোগ পেয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়া বাকি সব কিছুতে অংশ নেয়ার। সে কারণেই স্টিভেন স্মিথ অংশ নিতে পারলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজে চলমান ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট লিগে (সিপিএল)। শুধু তাই নয়, চাপহীন এই সুযোগটা ভালোই কাজে লাগাচ্ছেন তিনি। শিখছেন নানা নতুন বিষয়।
এই যেমন পাকিস্থানের বুম বুম অলরাউন্ডার শহিদ আফ্রিদির বোলিং স্টাইলটা রপ্ত করার চেষ্টা করছেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক এই অধিনায়ক এবং তিনি সফলও হচ্ছেন, নতুন এই শিক্ষা থেকে।
শুধু বল হাতে ওই দুটি ম্যাজিক ডেলিভারিই নয়, স্টিভেন স্মিথের ব্যাটও যেন এদিন ছিল খোলা তরবারি। জ্যামাইকার বোলারদের নির্দয়ভাবে পিটিয়ে ৪৪ বলে তিনি করেন ৬৩ রান। ৫টি বাউন্ডারির সঙ্গে ৩টি ছক্কার মার ছিল তার ব্যাটে। এছাড়া শাই হোপ ৩৫ বলে করেন ৪৩ রান। তিনিও ৩টি ছক্কার মার মারেন। সঙ্গে ছিল ২টি বাউন্ডারি। শেষ পর্যন্ত বার্বাডোজ ট্রাইডেন্টসের স্কোর দাঁড়ায় ৬ উইকেট হারিয়ে ১৫৬।
Advertisement
জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৭ উইকেট হাতে ধরে রাখলেও জ্যামাইকা তালাওয়াহস থেমে যায় ১৫৪ রানে। ফলে মাত্র ২ রানের ব্যবধানে পরাজয় মেনে নিতে বাধ্য হলো আন্দ্রে রাসেলের দল। জ্যামাইকা এই নিয়ে টানা তিন ম্যাচ হারলো। এই ম্যাচ জিততে পারলে হয়তো টেবিলের শীর্ষে উঠে যেতে পারতো তারা; কিন্তু ২ রানে হারের ফলে তিন নম্বরেই রয়ে গেলো তারা।
আইএইচএস/পিআর