মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ডি.এম তালেবুন নবী ষাটের দশকে পূর্বদেশ পত্রিকার মাধ্যমে সাংবাদিকতা শুরু করেন। পরবর্তীতে দীর্ঘ সময় কাজ করেছেন দৈনিক বাংলায়। বর্তমানে তিনি একজন পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে নিজস্ব প্রতিবেদকের দায়িত্ব পালন করছেন দৈনিক জনকণ্ঠে। এছাড়াও তিনি দীর্ঘ সময় কাজ করেছেন বাংলাদেশ টেলিভিশনে।
Advertisement
কলেজ পড়ুয়া তালেবুন নবীর সাংবাদিকতা ষাটের দশকে শুরু হলেও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন শুরু হয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধ। ক্যাম্পে আটকা থেকে তিনি দীর্ঘ সময় ধরে পাক হানাদার বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হন। তালেবুন নবী খুব কাছ থেকে ৬৫ পাক ভারত যুদ্ধ, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, পরবর্তীতে সময়ের শাসন, ৭৫ এর বঙ্গবন্ধু হত্যা, জিয়া ও এরশাদের শাসন থেকে আজ পর্যন্ত রাজনীতির চড়াই উৎরাই প্রত্যক্ষ করেছেন। তিনি একাধিক জাতীয় নেতার জানাজায় শরীক হয়েছেন।
তিনি কানসাট আন্দোলন ঘনিষ্টভাবে ষ্পটে থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন। জেলার প্রতিটি উপজেলা ও ইউনিয়নে প্রত্যক্ষভাবে ঘুরে দেখেছেন। জেলার নানান ধরনের সমস্যা সম্পর্কে তার প্রত্যক্ষ ধারণা রয়েছে। বিশেষ করে চোরাচালান, জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদসহ ছোট বড় মিলিয়ে নানান ধরনের অভিজ্ঞতা রয়েছে।
তালেবুন নবী শিক্ষক পরিবারের সন্তান। ১৯৫০ সালে বর্তমান চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার দ্বারিয়াপুর মহল্লায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বাবা ওয়াইজুদ্দীন আহম্মেদ ‘তেনু মিঞা’ রাজশাহীর গোদাগাড়ি উপজেলার কাশিমপুর একে ফজলুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার রাজারামপুর হামিদুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। পরে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে অবসরে যান। সাংবাদিক তালেবুন নবীর এক ছেলে ও এক মেয়ে। পরিবার নিয়ে তিনি শহরের মিস্ত্রীপাড়ার নিজ বাড়িতে বসবাস করছেন। ছেলে কপোত নবী বাবার হাত ধরেই স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকায় সাংবাদিকতা করছেন এবং একমাত্র মেয়ে শাফিয়াতুস সায়েরা বিশাল রাজশাহী কলেজে মাস্টার্স করছেন।
Advertisement
তার প্রধান শখ হচ্ছে যে কোনো পেশার লোকের সঙ্গে পরিচয় হবার পর তার ভাল-মন্দ বায়োডাটা সংগ্রহ করে রাখা। যার কারণে যে কোনো লোক বা ব্যক্তি সম্পর্কে জানার ইচ্ছা প্রকাশ করলে তিনি তা বলে দিতে পরেন। তালেবুন নবী সাহিত্য চর্চাসহ একজন কবি হিসেবেও পরিচিত। সম্প্রতি জাগো নিউজের কথা হয় তার। উঠে আসে জীবনের নানান কাহিনী।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রবীন সাংবাদিক জোবদুল হক বলেন, ডি এম তালেবুন নবী সাংবাদিকদের একজন অভিভাবক। যখনই সাংবাদিকরা কোনো বিপদে বা সমস্যায় পড়েছে তিনি সেটা শোনামাত্রই এগিয়ে এসেছেন এবং সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন। তাছাড়া তার নিউজ লেখার মান খুবই ভালো। প্রত্যন্ত এলাকায় যদি কোনো ঘটনা ঘটে তবে এ বৃদ্ধ বয়সেও তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে সেটাকে তুলে এনে নিউজ করেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের সমস্যা ও উন্নয়ন নিয়ে অনেক নিউজ করেছেন তিনি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল হুদা অলক প্রবীণ এই সাংবাদিক সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাংবাদিকতার ইতিহাস সুদীর্ঘ সময়ের। সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রয়োজন এবং মানুষের কল্যাণে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাংবাদিকতার প্রারম্ভিককালে সাংবাদিকতার মহান পেশায় যারা যুক্ত হয়েছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম ডিএম তলেবুন নবী। দীর্ঘ সময়ের সাংবাদিকতা জীবনে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জকে নিয়ে অনেক প্রতিবেদন জাতীয় গণমাধ্যমে তুলে ধরেছেন। করেছেন বেশ কিছু অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা। প্রবীন এই সাংবাদিক সাংবাদিকতার উৎকর্ষ সাধন ও সাংবাদিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষে ৬০ এর দশকে প্রতিষ্ঠিত চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহ্যবাহিী সংগঠন চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রেসক্লাবের নেতৃত্বও দিয়েছেন সফলতার সঙ্গে। তিনি জাতীয় মাধ্যমে কাজ করার পাশাপাশি সাপ্তাহিক চাঁপাই সংবাদ নমে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করতেন। এখানেই চাঁপাইনবাবগঞ্জের বেশ কিছু সাংবাদিকের হাতেখড়ি হয়েছে। সাংবাদিকতার পাশাপাশি ডিএম তালেবুন নবী চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিক্ষা বিস্তারেও কাজ করেছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় অবদান রেখেছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শাহনেয়ামতুল্লাহ ডিগ্রি কলেজ ও গ্রীণ ভিউ স্কুল প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সাংবাদিক অলক বলেন, আমাদের অগ্রজ ষাটোর্ধ ডিএম তালেবুন নবী এখনও সাংবাদিকতা চালিয়ে যাচ্ছেন সমান তালে। সাংবাদিক ডিএম তালেবুন নবী সম্পর্কে ষাটোর্ধ পত্রিকা পাঠক মসিউর রহমান বলেন, তালেব ভাইয়ের মতো অনেক সাংবাদিক লিখতে পারেন না। বিশেষ করে মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তার লেখা খুবই সাহসিকতার পরিচয় দেয়। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন ঘটনা খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠে তার লেখায়।
মোহাঃ আব্দুল্লাহ/এমএএস/এমএস
Advertisement