এ কথা চির সত্য যে, সকল আনন্দের মূলে রয়েছে দৈহিক সুস্থতা এবং মানসিক পরিতৃপ্তি। এর কোনো একটির ঘাটতি হলেই সকল আনন্দ আপনা আপনিই ফিকে হয়ে যায়। এমনকি তা নিরানন্দে পরিণত হতে পারে। ঈদ আনন্দ পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করতে হলে তাই সুস্থ থাকাটা ভীষণ জরুরি নিজের এবং পরিবারের প্রয়োজনেই। আর এর জন্য দরকার শুধু একটু সতর্কতা। এর বেশি কিছু নয় কিন্তু।
Advertisement
সতর্কতার প্রথম ধাপটিই হচ্ছে খাবার গ্রহণে এ সময়ে কিছুটা লাগাম টেনে রাখা। যারা হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন অথবা রক্তে চর্বির পরিমাণ বেশি তারা অবশ্যই এ সময়ে খাবার গ্রহণে সতর্ক থাকবেন অন্য সময়ের মতোই। কেন বলছি একথা সেটা নিশ্চয় বুঝতে পারছেন।
তবুও আবার বলছি। যেহেতু এ সময়ে সামর্থবান প্রত্যেকে কোরবানি দিয়ে থাকেন ফলে বাড়িতে মাংসের আধিক্য থাকে। দেখা যায় প্রতিবার খাবারের সময়ই হয়ত মাংস খাচ্ছেন। আর এ মাংস হয় ছাগল, গরু, ভেড়া অথবা মহিষের। প্রশ্ন করতে পারেন তাতে কি হলো? কোরবানির মাংস তো এসব পশুরই হবে। ফলে খেলে তো এসব মাংসই খেতে হবে। এতে আবার সমস্যা কীসের?
এর উত্তর হচ্ছে, আপনি হয়ত জানেন এসব মাংসকে বলে রেড মিট বা লাল মাংস। আর রেড মিটে কিন্তু কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি থাকে। ফলে যত বেশি এ মাংস খাবেন রক্তে খারাপ চর্বির পরিমাণ কিন্তু ততটাই বাড়বে। তার উপর যদি কলিজা এবং মগজ খান তাহলে তো কথাই নেই। কারণ বলা হয়ে থাকে, ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে থাকে ১২২ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল। আর সম পরিমাণ খাসির মাংসে কোলেস্টেরল থাকে প্রায় ১০০ মিলিগ্রাম।
Advertisement
অন্যদিকে ১০০ গ্রাম গরুর কলিজাতে এ কোলেস্টেরল থাকে ৪০০ মিলিগ্রাম এবং একই পরিমাণ মগজে থাকে প্রায় এর ছয় গুণ বেশি অর্থাৎ ২৫০০ মিলিগ্রাম। ফলে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন অথবা রক্তে চর্বির পরিমাণ বেশি তারা কি ইচ্ছেমতো এ রেড মিট, মগজ, কলিজা, ভুঁড়ি, তেল, মসলা জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে পারবেন? নিশ্চয় পারবেন না। তাই বলছি এসব খাবার খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
তবে, মাংসে চর্বির পরিমাণ কমানোর জন্য রান্নার আগে সম্ভব হলে মাংস আগে সিদ্ধ করুন এবং পানিতে ভেসে থাকা চর্বি বাদ দিন। এছাড়া মাংস প্রক্রিয়া করার সময় যতদূর সম্ভব মাংস থেকে চর্বি কেটে বাদ দিন।আর রান্নার সময়ে টক দই, লেবুর রস, সিরকা ব্যবহার করতে পারেন।
তাহলে হজমের পরে কোলেস্টেরল এর শোষণের পরিমাণ কমে যাবে। এ তো গেলো একটা দিক। অন্য দিক হচ্ছে, এ সময়ে সব্জি, সালাদ, ফলমূল খেতে ভুলবেন না কিন্তু। স্বাভাবিক সময়ের মতোই এ সকল খাবার খান। আর সবসময়ের মতো চিনি, মিষ্টিজাতীয় খাবার, ড্রিংক্স –এসব এড়িয়ে চলুন।
এ সময়ে অধিকাংশ মানুষ গ্রামে থাকেন। তাই মুক্ত বাতাসে হাঁটাচলা বাড়িয়ে দিন। ১/২ কিমি দূরত্বে যাওয়ার জন্য ভ্যান, ইজিবাইক, নসিমন, করিমন এসবে না উঠে হেঁটেই যান। তাহলে কায়িক পরিশ্রম টা হয়ে যাবে। এতে রক্তে সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। শরীরের ফ্যাটও ক্ষয় হবে।
Advertisement
একই সাথে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগের ওষুধ কোরবানির ব্যস্ততার কারণে খেতে একদমই ভুলবেন না। অনেকে ঈদের আনন্দে বা ব্যস্ততায় ওষুধ খেতে ভুলে যান অথবা মনে থাকলেও ভাবেন ২/১ বার ওষুধ না খেলে কী আর এমন ক্ষতি হবে! মনে রাখবেন আপনার এতটুকু অসাবধানতাই কিন্তু ঈদের আনন্দ পণ্ড করে দিতে পারে। কারণ ক্ষতিটা বলে কয়ে কিন্তু আসবে না। তাই সেটা যাতে না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
তবে যারা এসব রোগ থেকে মুক্ত আছেন তারা খাবার গ্রহণে ততটা বাছবিচার না করলেও চলবে। কিন্তু আপনার বয়স যদি ৩৫ বছরের উপরে হয়ে থাকে তাহলে চর্বি এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার গ্রহণ নিয়ন্ত্রিত হলেই ভালো হয়। তাহলে পরবর্তীতে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগের হাত থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন।
ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানে আনন্দ। ঈদের সময় তাই আনন্দে থাকুন। খুশিতে মতে উঠুন। নিজে ভালো থাকুন। সতর্ক থাকুন। অন্যদেরকেও ভালো রাখুন। সকলে মিলে ঈদের খুশি উপভোগ করুন—সেটাই হোক আমার, আপনার, আমাদের চাওয়া। ঈদ মোবারক।
লেখক : চিকিৎসক ও শিক্ষক। সহযোগী অধ্যাপক, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ, এনাম মেডিকেল কলেজ।
এইচআর/এমএস