দেশজুড়ে

কক্সবাজারে দ্বিতীয় সুন্দরবন

দু’দিকে বঙ্গোপসাগর। একদিকে বাঁকখালী নদীর মোহনা। এর মাঝে প্রায় ৬০০ হেক্টর জমিতে বাইন, কেওড়াসহ নানা প্রজাতির শ্বাসমূলী উদ্ভিদের (ম্যানগ্রোভ) বন। গাছের মাথা ছুঁয়ে উড়ে যাওয়া বকের সারি, পরিযায়ী পাখি কিংবা বন্য শূকর দেখে মনে হবে, এ বুঝি আরেক সুন্দরবন। এ বনকে পর্যটকদের কাছে আকৃষ্ট করতে বনের পাশে নির্মাণ করা হয়েছে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার ও বিনোদন কেন্দ্র। কক্সবাজার, মহেশখালী-কুতুবদিয়া ও সোনাদিয়া উপকূলে যাওয়ার পথে বাঁকখালী নদীর মোহনায় দেখা মেলে এ বনের। রোববার পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড.কামাল উদ্দিন আহমদ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে এ বন পর্যটনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে কক্সবাজারে। উদ্বোধনকালে ড.কামাল উদ্দিন আহমদ বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা পর্যটন স্পটগুলোকে পরিকল্পিত উন্নয়নের মধ্য দিয়ে দেশি-বিদেশি পর্যটক আকৃষ্ট করতে হবে। তাই অনেকটা সুন্দরবনের আদলে গড়ে উঠা কক্সবাজারের এ সুন্দরবনকে রক্ষার মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন জীববৈচিত্র্য সংরক্ষিত হবে, অপরদিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য পর্যটনের একটি নতুন স্পট যোগ হয়েছে। এসময় বক্তব্য রাখেন, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক রইসুল আলম মণ্ডল, বিভাগীয় পরিচালক মকবুল হোসেন, কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম। বক্তারা মনে করেন, এ ঘোষণার পর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্যটকের ঢল নামবে এ বনে।পরিবেশ অধিদফতর কক্সবাজার কার্যালয় সূত্র জানায়, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশ ধ্বংসের কারণে গত কয়েক বছরে বহু প্রজাতির প্রাণি বিলুপ্ত হয়েছে। এ কারণে এমন বন সৃজনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দু-তিন বছর পর গাছের উচ্চতা আরো বাড়লে সুন্দরবনের রূপ ও সৌন্দর্যও বাড়বে। আরো জানা যায়, প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে সাড়ে ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে বনের পাশে একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণ করেছে পরিবেশ অধিদফতর। পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে এ বনে নির্মাণ করা হবে কয়েকটি ছোট ছোট বিনোদন কেন্দ্র। সূত্র মতে, বনের আয় দিয়ে যাতে পরে এ বনকে রক্ষা করা যায়, দ্বিতীয় এ সুন্দরবন যেন উজ্জীবিত থাকে সেজন্য এখানে আসা পর্যটকদের কাছ থেকে নামমাত্র টিকিটের মূল্য নেয়া হবে। কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, এ নব সৃজিত প্যারাবনে ২০৬ প্রজাতির পাখির বিচরণ রয়েছে। এর মধ্যে দেশি ১৪৯ ও ৫৭ প্রজাতির অতিথি পাখি রয়েছে। বিশ্বের বিলুপ্তপ্রায় অনেক পাখিও সোনাদিয়ায় দেখা যায়।সংশ্লিষ্টরা জানান, পরিবেশ অধিদফতরের উদ্যোগে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের কবল থেকে উপকূলীয় এলাকার মানুষকে রক্ষার জন্যই মূলত এ বন গড়ে তোলা হয়েছে।  রিবেশ অধিদফতরের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সমাজভিত্তিক জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন নামের প্রকল্পের আওতায় একটি বেসরকারি সংস্থা কক্সবাজার উপকূলে শ্বাসমূলী উদ্ভিদের বন সৃষ্টির কাজ করেছে।কক্সবাজার শহর থেকে লঞ্চ অথবা স্পিডবোটে যাওয়া যায় এ বনে। প্রায় সাড়ে সাত হাজার একর বিশিষ্ট এ বনে কেওড়া, বাইনসহ নানা প্রজাতির গাছ রয়েছে। সামুদ্রিক কাছিম, কাঁকড়াসহ নানা জাতের বন্যপ্রাণির দেখা মিলবে এ বনে।  বনের এ এলাকা থেকে স্পিডবোটে উত্তর দিকে আরো পাঁচ মিনিট গেলে নজরে পড়ে সোনাদিয়ার সবুজ প্যারাবন।পরিবেশ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এ বনে (প্যারাবন) ১২ হাজারেরও বেশি প্রাণি ও উদ্ভিদের প্রজাতি রয়েছে।  এর মধ্যে উদ্ভিদ রয়েছে ৫৬৭ প্রজাতির। শামুক-ঝিনুক রয়েছে ১৬২ প্রজাতির, কাঁকড়া ২১, চিংড়ি ১৯, লবস্টার দুই, মাছ ২০৭, উভচর ১২ ও ১৯ প্রজাতির সরীসৃপ। এমজেড/এমআরআই

Advertisement