মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি নিজে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে তেমন কথা বলেন না। রোহিঙ্গা শব্দটিও তিনি উচ্চারণ করেন না।কিন্তু সিঙ্গাপুরে এক সফরে গিয়ে এক বক্তৃতায় শান্তিতে নোবেল বিজয়ী এই নেত্রী রাখাইন অঞ্চলে তার সরকারের কর্মকাণ্ডের সমর্থনে কথা বলেছেন।
Advertisement
গত বছর অাগস্টের শেষ সপ্তাহে রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর হত্যা-নির্যাতনের মুখে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে। এক বছরেও তাদের প্রত্যাবাসন শুরু না হওয়ার জন্য কার্যত বাংলাদেশকেই দায়ী করেছেন অং সান সু চি।
তিনি বলেন, মিয়ানমার শরণার্থীদের নিতে প্রস্তুত, তাদের পুনর্বাসনের জন্য জায়গাও ঠিক হয়ে গেছে। কিন্তু তাদের পাঠানোর দায়িত্ব মূলত বাংলাদেশের। তাদেরকে ফেরত পাঠাতে হবে বাংলাদেশকে, আমরা শুধু তাদের সীমান্তে স্বাগত জানাবো। কত দ্রুত এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে তা নির্ভর করছে বাংলাদেশের ওপর।
মিয়ানমারের নেত্রীর এই বক্তব্যে তীব্র ক্ষোভ এবং বিস্ময় প্রকাশ করেছেন রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন বিষয়ক কমিশনার আবুল কালাম। সু চির বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আবুল কালাম বলেন, তার মত একজন নেত্রীর মুখ থেকে এ ধরণের বক্তব্য শুনে আমি বিস্মিত। প্রত্যাবাসনে বিলম্ব হওয়ার জন্য বাংলাদেশকে দায়ী করা সত্যের আরেকটি অপলাপ।
Advertisement
আবুল কালাম বলেন, গত বছর নভেম্বরে প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের যে চুক্তি হয়েছে তাতে বেশ কিছু ‘অবশ্য করণীয়’ শর্ত রয়েছে। যেমন চুক্তিতে বলা আছে, রোহিঙ্গারা যে গ্রাম বা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে এসেছে, তাদেরকে সেখানেই জায়গা করে দিতে হবে, একান্তই তা সম্ভব না হলে নিকটবর্তী জায়গায় বা তাদের পছন্দমত কোন জায়গায় তাদের থাকার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। ফেলে আসা জমিজমা, বাড়ি, সম্পদ ফেরত দিতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা পূর্ণ নিরাপত্তা নিয়ে তাদের মনে ভরসা তৈরি করতে হবে। কিন্তু এগুলোর কিছুই এখনও করা হয়নি।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে যে প্রতিনিধিদল চলতি মাসে রাখাইন সফরে গিয়েছিল, সে দলে ছিলেন আবুল কালাম।তিনি জানান, দু’টি অভ্যর্থনা ক্যাম্প এবং একটি ট্রানজিট ক্যাম্প তৈরি ছাড়া এখনো কিছুই করা হয়নি। রোহিঙ্গারা তো এখানে ক্যাম্পেই রয়েছে, তারা তো তাদের দেশে গিয়ে ক্যাম্পে থাকতে চায়না।
আবুল কালাম জানান মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ তাদের জানিয়েছে, শরণার্থীদের জায়গা দিতে মংড়ুতে ৩১টি এবং বুড়িচঙে ১১টি সহ মোট ৪২টি গ্রাম চিহ্নিত করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত শুধু চিহ্নিত করার কথাই তারা বলছে। প্রত্যাবাসন ঝুলিয়ে রাখার কোনো প্রশ্নই আসেনা। বাংলাদেশ বরং গভীর উদ্বেগে তাকিয়ে রয়েছে কবে তা শুরু হবে।
রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে একটি কথাও উচ্চারণ করেননি সু চি। বরং তিনি বলেছেন, রাখাইনের সমস্যার মূলে রয়েছে সন্ত্রাসবাদ। তিনি বলেন, রাখাইনে সন্ত্রাস এখনও বিদ্যমান এবং পুরো অঞ্চলের জন্য তা মারাত্মক পরিণতি তৈরি করবে। সন্ত্রাসী তৎপরতার কারণেই রাখাইনে মানবিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে এবং সন্ত্রাসের সেই ঝুঁকি এখনও সমানভাবে রয়ে গেছে।
Advertisement
আসলে সু চির বক্তৃতা আগে থেকেই তৈরি করা ছিল। আর তাকে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছিল সিঙ্গাপুরে তিনি সহানুভূতিশীল শ্রোতাই পাবেন।
টিটিএন/পিআর