বিশেষ প্রতিবেদন

ময়লা পরিষ্কার করতে জোটে এসেছি, গায়ে তো লাগবেই

রাশেদ খান মেনন। সভাপতি, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি। মন্ত্রী, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে সম্প্রতি মুখোমুখি হন জাগো নিউজ-এর। দীর্ঘ আলোচনায় কোটা সংস্কার আন্দোলন, সরকারের অবস্থান, নির্বাচনসহ দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মতামত ব্যক্ত করেন।

Advertisement

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অরাজনৈতিক হলেও বিশেষ মহল এই আন্দোলন থেকে সুবিধা নিতে চাইছে বলে অভিযোগ তোলেন। কোটা ব্যবস্থার পক্ষেও মত দেন তিনি। আগামী নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হবে বলেও জানান বামপন্থী এই নেতা।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, সায়েম সাবু। তিন পর্বের আজই থাকছে শেষটি

জাগো নিউজ : এ বছরেই সংসদ নির্বাচন। কী দেখছেন, নির্বাচনী পরিস্থিতি?

Advertisement

রাশেদ খান মেনন : সংবিধানের বাইরে কোনো কাঠামো নেই। সংবিধানে যেভাবে বলা আছে, সেভাবেই হবে সামনের নির্বাচন।

জাগো নিউজ : ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনও সংবিধান অনুসারে হয়েছিল। রাজনৈতিক সংকট তীব্র করেছিল। এবারও সেই কাঠামো?

রাশেদ খান মেনন : ২০১৪ সালের নির্বাচন পরিস্থিতি বদলে গিয়েছিল বিএনপি জোট না আসার কারণে। তারা নির্বাচন প্রতিহত করতে যে পরিমাণ সহিংসতা করেছিল, তার কারণেই সংকট তৈরি হয়েছিল কিছুটা।

তবে এবার সেই ভুল করবে না বিএনপি। সামাজিক মাধ্যমেই নির্বাচনের খবর আসে। স্বচ্ছ ব্যালটবক্স বিএনপি তৈরি করেছিল। তাহলে ভয় কিসের?

Advertisement

জাগো নিউজ : অভিযোগ ভোটারই কেন্দ্রে যেতে পারছে না, স্বচ্ছ ব্যালট বক্সে লাভ কী?

রাশেদ খান মেনন : কোথায় ভোটার যেতে পারছে না? কোথায়? এজেন্ট যেতে পারছে না, সে অভিযোগ আছে এবং এটি অনেক পুরনো অভিযোগ। ভোটাররা তো কোনো অভিযোগ করছে না।

আরও পড়ুন>> স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ হলেই তা রাজনীতির বিপক্ষে নয়

জাগো নিউজ : কিন্তু ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তো ব্যাপক। উপর্যুপরি সিল মারা, ব্যালট ছিনতাই, জাল ভোট, এজেন্ট বের করে দেয়ার হাজারো ঘটনা তো সম্প্রতি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও মিললো।

রাশেদ খান মেনন : হাজার হাজার অভিযোগ না। একটি ঘটনাই হয়তো বারবার ঘুরিয়ে দেখানো হচ্ছে। এমন অভিযোগ অন্য সরকারের নির্বাচনের বেলাতেও হয়েছে। নির্বাচনী ট্র্যাডিশনে এমন অভিযোগ আছেই।

জাগো নিউজ : আপনারা তো আন্দোলন করছেন এই ট্র্যাডিশন ভাঙার জন্য। জনগণের ক্ষমতায়নের কথা বলেন?

রাশেদ খান মেনন : আন্দোলন করেছি, করছি। আমরা নির্বাচন কমিশনকে একাধিকবার বলেছি। এর দায় তো কেবল নির্বাচন কমিশনের না। রাজনৈতিক দলগুলোরও এর দায় আছে। ২০০১ সালে নির্বাচন আমরা দেখিনি। ওই নির্বাচনে কি জালিয়াতি করা হয়েছে, তা কি ভুলে গেছেন।

জাগো নিউজ : সেই জালিয়াতির বিরোধিতা করেই আপনারা ক্ষমতায় এসেছিলেন ২০০৮। ২০১৪ সালের পর প্রতিটি নির্বাচনেই জালিয়াতির অভিযোগ উঠল?

রাশেদ খান মেনন : অভিযোগ ঠিক না। অনেক নির্বাচনই সুষ্ঠু হয়েছে। অভিযোগ তুলে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হচ্ছে। লাভ কি। পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ তো আমরা দেখলাম। ঘটনা তো উল্টো হলো। অনুমানের ভিত্তিতে অভিযোগ হতে পারে না। অভিযোগের প্রমাণে গভীরতা লাগে।

জাগো নিউজ : আপনি সন্তুষ্ট নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে?

রাশেদ খান মেনন : আমেরিকাতেও ব্যালট পেপার পড়ে থাকতে দেখা গেছে জর্জ ডুব্লিউ বুশের সময়। আর আপনাদের অভিযোগ শুনে মনে হয়, আমরা একটি ফেরেশতাদের দেশ তৈরি করে ফেলেছি। বাংলাদেশ ফেরেশতাদের দেশ না, সব সুন্দর হবে না।

জাগো নিউজ : আমেরিকায় জালিয়াতি হচ্ছে এই কথা বলে কি আমাদের জালিয়াতি বৈধতা পেতে পারে?

রাশেদ খান মেনন : আমরা গণতন্ত্রের উন্নয়নে কাজ করছি। স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ভোটের জন্য আমরাও আন্দোলন করছি। গণতন্ত্রের উন্নয়নে বিএনপি সহযোগিতা করছে না। এর দায় তো আমাদের ওপর দিতে পারেন না।

জাগো নিউজ : সহযোগিতা করছে না, নাকি করতে দেয়া হচ্ছে না।

রাশেদ খান মেনন : আমাদেরও বের হতে দেয়নি বিএনপি-জামায়াত সরকার। আমাকে মারপিট করা হয়েছে। মোহাম্মদ নাসিম, মতিয়া চৌধুরীকে রাস্তায় ফেলে রক্তাক্ত করা হয়েছে। তাই বলে কি থেমে গেছি? জেলে ভরাও আন্দোলন হচ্ছে ভারতে।

আরও পড়ুন >> কোটা আন্দোলন রাবিতে শুরু করেছিল ছাত্রশিবির

জাগো নিউজ : একটু অন্য প্রসঙ্গ। বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির লাখ লাখ টন কয়লা উধাও। পাথরও হারিয়ে গেছে। বাংলাদেশের ব্যাংকের ভল্টে রাখা স্বর্ণ অন্য ধাতু হচ্ছে।

রাশেদ খান মেনন : এমন অভিযোগ ঠিক না। স্বর্ণের অভিযোগ সত্য হলে পত্রিকা প্রতিদিনই লিখত। কয়লা জালিয়াতির সঙ্গে হয়তো এমডিরা জড়িত থাকতে পারেন। দুদক দেখছে এসব।

জাগো নিউজ : ‘হয়তো’ বলছেন কেন? দুর্নীতির অনেক বিষয়ই তো প্রমাণিত। বিশেষ করে ব্যাংক খাতের?

রাশেদ খান মেনন : সরকার প্রতিটি ঘটনায় ব্যবস্থা নিচ্ছে। হলমার্ক, ডেসটিনি কর্মকর্তারা জেলে। মামলা হচ্ছে।

জাগো নিউজ : আপনারা পরিশলিত রাজনীতির কথা বলে জোটে আসলেন। দুর্নীতির এই কালি তো আপনাদের গায়েও লাগল।

রাশেদ খান মেনন : ময়লা পরিষ্কার করতে এলে গায়ে ময়লা লাগতেই পারে। আমরা তো ময়লার মধ্যে হাঁটছি। পরিষ্কার করতে জোটে এসেছি, গায়ে ময়লা লাগবেই। ময়লা পরিষ্কার করতে হলে ময়লাও ভাগাড়েও নামতে হয়।

জাগো নিউজ : এমন ময়লার ভাগাড়ে থেকে কী পরিষ্কার করতে পারবেন?

রাশেদ খান মেনন : চেষ্টা তো করছি। নতুন প্রজন্ম করবে। শিক্ষার্থীরা তো ভরসা দিলো আরও। পরিবর্তন আসবেই।

জাগো নিউজ : সিপিবি-বাসদের নেতৃত্বে বাম গণতান্ত্রিক জোট করা হয়েছে। এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া কী?

রাশেদ খান মেনন : নির্বাচন সামনে রেখে জোট গঠন করা হয়েছে। ভালো কথা। তারা নির্বাচনে থাকবে বলে আশা করি।

জাগো নিউজ : আপনাদের জোটে ভেড়ানোর কোনো চেষ্টা থাকবে কিনা?

রাশেদ খান মেনন : খামাখা চেষ্টা করে কি লাভ! তারা ড. কামাল. আ স ম রব, কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে আলোচনা করছেন বলে জানতে পেরেছি। বিএনপিকে অনুসরণ করে তারা গতবার নির্বাচনে আসেনি। এবার নির্বাচনে তাদের স্বাগত জানাবো।

এএসএস/এমআরএম/এমএস