জাতীয়

গোশালায় পরিণত হয়েছে অ্যাপার্টমেন্টগুলো

দিন নয়, ঈদ অানন্দের অপেক্ষা এখন ঘণ্টা ধরে। মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব ঈদুল আজহার অানন্দ মূলত কোরবানির পশুকে কেন্দ্র করেই। ঈদকে কেন্দ্র করে গোটা রাজধানী যেন এখন পরিণত হয়েছে পশুর হাটে। অার ইট-পাথরের নগরের প্রতিটি বাড়িই এখন যেন গোশালা। বাড়িগুলোর নীচতলা (মূলত গ্যারেজ) রূপ নিয়েছে গোয়াল ঘরে। অাবার কোনো কোনাে বাড়ির গেটের বাইরেও বাঁধা অাছে পছন্দের পশু। গরু বা ছাগলের উপস্থিতিই জানান দিচ্ছে ঈদ অানন্দ।

Advertisement

গ্রামের একটি গোয়ালে যে চিত্র দেখা যায়, গত ২-৩ দিন ধরে প্রায় একই চিত্র দেখা যাচ্ছে রাজধানীর অ্যাপার্টমেন্টগুলোতে। কোনো গরু শুয়ে অাছে, কোনোটি দাঁড়িয়ে খাবার খাচ্ছে। খৈল, ভুসি, ভাঙা ছোলাসহ নানা পদের পশুখাদ্য রাখা অাছে থরে থরে। বালতি বা গামলায় পানি রাখা। সেবা শুশ্রূষার কোনোই কমতি নেই। অার কোরবানির ত্যাগের মহিমায় শহুরে মানুষগুলো যেন বনে গেছেন রাখাল।

সরেজমিন রাজধানীর মগবাজার, ইস্কাটন, মালিবাগ, রামপুরা এবং পুরান ঢাকার কয়েকটি বাড়ি ঘুরে দেখা গেল- প্রতিটি বাড়ির গাড়ি পার্কিংয়ের পাশে বাশ দিয়ে পৃথক স্থান করা হয়েছে কোরবানির পশুকে বরণের জন্য। অনেকে নিজেদের গাড়ি সরিয়ে অন্য কোথাও রেখেছেন। অনেকে গাড়ি নিয়ে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যাওয়ায় তাদের সেই গাড়ি রাখার স্থানটি ব্যবহার করছেন অনেকে।

ইস্কাটন গার্ডেন এলাকার ‘আজিজ ভিলা’ নামের একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে মোট ৯টি গরু রাখা হয়েছে। ভবনের তত্ত্বাবধায়ক (কেয়ারটেকার) কামরুজ্জামান বলেন, প্রতিবছর এখানে ১০-১২টা করে গরু আনা হয়। আগে রাতের বেলায় গেটের বাইরের সড়কের পাশে খুঁটি গেড়ে গরু বাধা হতো। তবে বৃষ্টি আর চুরির আশঙ্কায় ২ বছর ধরে গ্যারেজে গরু রাখছি। কোরবানি ঈদের ১ মাস আগেই অ্যাপার্টমেন্টের সদস্যরা মিটিং করে গরু রাখার জায়গা নির্ধারণ করেন। অনেকে বিকল্প স্থানে অন্যের পার্কিংয়ে গাড়ি রাখেন। তবে এটি নিয়ে কখনও কোনো ঝামেলা হয় না।

Advertisement

রাজধানীর পল্টন টাওয়ারের গাড়ির পার্কিংয়ে ১২টি গরু রাখা হয়েছে। টাওয়ারের অন্যতম বাসিন্দা মুনতাসিরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিবছর গ্রামের বাড়ি (বিক্রমপুর) থেকে দুইজনকে এনে ২-৩ দিন এসব গরুর দেখভাল করানো হয়। এজন্য প্রতিজনকে তিন বেলা খাওয়া ও ১ হাজার টাকা করে দিতে হয়।

এদিকে গাড়ির গ্যারেজে গরুর মলমূত্র থেকে যাতে কোনো ধরণের জীবাণু না ছড়াতে পারে এ বিষয়েও সচেষ্ট আছে অ্যাপার্টমেন্টগুলো। ক্লিনারদের কয়েক ঘণ্টা পর পর গোবর বাইরে ফেলতে দেখা গেছে।

তবে ব্যাতিক্রম চিত্র পুরাতন ঢাকায়। পুরাতন ঢাকার বংশাল আরমানিটোলাসহ আশপাশের কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেল, বাড়ি ও রাস্তার পাশে জায়গা না পেয়ে অনেকে স্থানীয় স্কুল মাঠে গরু রাখছেন। স্কুলের প্রহরী গরু পাহারা দিচ্ছেন।

কসাইটুলী এলাকার আনন্দময়ী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রহরী আব্দুল জব্বার বলেন, এলাকাবাসীরা প্রতিবছরই এখানে গরু রাখেন। সারাদিন গরু তাদের নিজ দায়িত্বে থাকলেও রাতের বেলায় এগুলো আমার জিম্মায় থাকে। বিনিময়ে যে যার খুশিমতো বকশিস দেয়।

Advertisement

এআর/এমবিআর/পিআর