জাতীয়

একটি ট্রেনের অপেক্ষায়...

কমলাপুর রেল স্টেশনে ঢুকতেই দেখা গেল শুধু মানুষ আর মানুষ। যেন এটা ঘরমুখো মানুষের জনস্রোত। অন্য যেকোনো দিনের তুলনায় যাত্রীদের ভিড় অনেক বেশি আজ। ব্যাগ-ব্যাগেজসহ পরিবার-পরিজনদের নিয়ে প্ল্যাটফর্মে বসে আছেন অনেকেই। কেউ আবার বসার জায়গা না পেয়ে দাঁড়িয়েও আছেন। প্ল্যাটফর্মের ফ্লোরেও পত্রিকা বিছিয়ে বসে কাঙ্ক্ষিত ট্রেনের অপেক্ষায় অনেকে। ঈদের অগ্রিম টিকিট অনুযায়ী আজ ঈদ যাত্রার পঞ্চম এবং শেষ দিন। আর এই শেষ দিনে এসে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় কমলাপুরে।

Advertisement

আগের দিনগুলোর তুলনায় আজ এত বেশি ভিড়ের কারণ হিসেবে জানা গেল, মঙ্গলবার সকাল থেকে বেশিরভাগ ট্রেনই সময় মতো কমলাপুর স্টেশনে এসে পৌঁছাতে পারেনি। অনেক ট্রেন ৪-৫ ঘণ্টা পর স্টেশন ছেড়ে যাবে এমন তথ্যও জানানো হয়েছে। ফলে নির্দিষ্ট সময়ে স্টেশনে এসেও কাঙ্ক্ষিত ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে যাত্রীদের। এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার উপহাস করে দল বেঁধে সুর মেলাচ্ছেন ‘স্টেশনের রেলগাড়িটা মাইপা চলে না ঘড়ির কাটা’....

হ্যাঁ, ঘড়ির কাঁটা সত্যিই মানছে না রেল। শিডিউল সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। ট্রেনে ঈদযাত্রার প্রথম দিন সময় মতো ট্রেন ছাড়লেও যাত্রার দ্বিতীয় দিন থেকে বিপত্তি দেখা দেয়। আর মঙ্গলবার ঈদযাত্রার শেষ দিন এসে ট্রেনের বিলম্ব শিডিউল ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে নির্ধারিত সময়ের কয়েক ঘণ্টা পরও স্টেশনেই এসে পৌঁছায়নি অনেকগুলো ট্রেন। তাই ফিরতি যাত্রায় ট্রেন কখন স্টেশন থেকে ছুটতে পারবে তা ঠিকভাবে বলতে পারছেন না কেউই। এ অবস্থায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন ঈদ উদযাপনে ঘরমুখো যাত্রীরা।

রাজশাহীগামী ধুমকেতু এক্সপ্রেস সকাল ৬টায় কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সাড়ে ১০টাতেও এসে পৌঁছাতে পারেনি ট্রেনটি।

Advertisement

উত্তরবঙ্গের চিলাহাটিগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস সকাল ৮টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ট্রেনটি এসে পৌঁছায়নি। ট্রেনটি ছেড়ে যাওয়ার সম্ভাব্য সময় দেয়া হয়েছে ১২ টা ৪০ মিনিট। ওই সময়ে ছেড়ে গেলেও ট্রেনটি ৪ ঘণ্টা ৪০ মিনিট লেট।

রংপুর এক্সপ্রেস সকাল ৯টায় স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ট্রেনটি ছাড়ার সম্ভাব্য সময় দেয়া হয়েছে দুপুর ২টা। ফলে ট্রেনটি ন্যূনতম ৫ ঘণ্টা দেরিতে ছাড়বে।

এদিকে খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনটি ৬টা ২০ মিনিটে কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ৩ ঘণ্টা ২৫ মিনিট বিলম্ব করে ৯টা ৪৫ মিনিটে ৭ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ছেড়ে যায়।

ধুমকেতু ট্রেনের যাত্রা করবেন নয়ন আহমেদ। স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে স্টেশনে আসেন ভোর সাড়ে ৫টায়, কারণ ৬টায় তার কাঙ্ক্ষিত ট্রেনটি ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি স্টেশনে এসে জানতে পারেন ট্রেনটি শিডিউল ঠিক নেই। বেলা ১১টায় ট্রেনটি ছেড়ে যেতে পারে।

Advertisement

তিনি বলেন, ঈদের আগের দিন যাত্রী চাপ তুলনামূলক কম থাকবে, এমন আশায় ১২ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আজকের টিকিট কেটেছিলাম। কিন্তু আজ এসে দেখি ট্রেনটি ৫ ঘণ্টা লেট। তাও সেই সময়েও ছাড়তে পারবে কি না তা নিয়েও সংশয়। ছোট বাচ্চা-স্ত্রীকে নিয়ে মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়েছি। প্রতিটা যাত্রী আসহায় অবস্থায় শত বিড়ম্বনা নিয়ে স্টেশনে অপেক্ষা করছে। উত্তরবঙ্গের বেশিরভাগ ট্রেন ৪/৫ ঘণ্টা করে লেট।

ভিড় ঠেলে খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেসে উঠতে পেরেছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী রিয়াজুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা লেট করে ট্রেনটি ছাড়ছে। ট্রেনের ভেতরে-ছাদে কোথাও একটু ফাঁকা নেই। পুরো ট্রেন জুড়েই শুধু যাত্রী আর যাত্রী। অনেকে আছেন টিকিট থাকার পরও নিজের আসন পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেননি। সবচেয়ে ভোগান্তির বিষয় ট্রেনটি অতিরিক্ত লেট। ঈদ যাত্রায় প্রতিবারই এমন ভোগান্তি হয়। এবার ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়ের কারণে যাত্রীদের ভোগান্তির সীমা নেই।

ট্রেনের বিলম্বের বিষয়ে কমলাপুর রেলস্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী বলেন, ঈদযাত্রায় প্রতিটি ট্রেনে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ থাকায় ট্রেন তার নিজস্ব গতির চেয়ে ধীরগতিতে চলছে। এ ছাড়া প্রতিটি স্টেশনে যাত্রী ওঠা-নামা করার কারণে আরও বেশ কিছু সময় অতিরিক্ত লেগে যাচ্ছে। ফলে ট্রেনগুলো দেরিতে আসছে। কমলাপুর স্টেশনে ট্রেন দেরিতে আসায় কিছুটা বিলম্বে ছেড়ে যাচ্ছে।

অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ থেকে শুরু করে বাড়ি ফেরা পর্যন্ত বিড়ম্বনা যেন পিছু ছাড়ে না ঈদে ঘরমুখো মানুষের। তবুও স্বজনদের সান্নিধ্য পেতে বাড়ি ফেরার ব্যাকুলতার সাথে তাদের উচ্ছ্বাসই বলে দিচ্ছে যে, ঘরে ফেরার আনান্দ তাদের কতটা। ঈদ মানে ঘরে ফেরার উৎসব। দৈনন্দিন ব্যস্ততা ভুলে ঈদ আনন্দ উদযাপন করতে কয়েক দিনের জন্য বাড়ি ফিরছেন সবাই, আর এই বাড়ি ফেরাতেই যেন ভুবনের আনন্দ তাদের। তাইতো ট্রেনের বিলম্বকে সঙ্গী করেই বাড়ি ফিরছেন সবাই।

কমলাপুর স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার মোট ৫৩টি ট্রেন কমলাপুর স্টেশন থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। এরমধ্যে তিনটি ঈদ স্পেশাল, বাকিগুলো আন্তঃনগর, লোকাল ও মেইল সার্ভিস।

এএস/এনএফ/পিআর