আন্তর্জাতিক

আত্মীয় সেজে গর্ভ ভাড়া!

দশ টাকায় সারাজীবন বসে খান-এমনই হাঁক ডেকে গ্রামে গ্রামে পিঁড়ি বিক্রি করেন স্বামী। অথচ স্ত্রী দু-দুবার সিঙ্গাপুর ঘুরে এসেছেন। কারণ, তিনি ‘সারোগেট’ বা গর্ভদাত্রী মা। গর্ভ ভাড়া দিয়ে বেশ কয়েকটি শিশুর জন্ম দিয়েছেন তিনি। তার নিজেরও একটি সন্তান আছে।

Advertisement

কলকাতা সরকার ২০১৬ সালে একটি বিল উত্থাপন করে। এতে বলা হয়, সন্তানধারণে শারীরিকভাবে অক্ষম ভারতীয় দম্পতিদের জন্যই শুধু এই ব্যবস্থা চালু থাকবে। বিয়ের পাঁচ বছর পরে যে দম্পতি শারীরিক অসুবিধার কারণে সন্তানধারণ করতে পারেননি, তারা ‘নিকটাত্মীয়ের’ সাহায্য নিতে পারেন। তবে আত্মীয় এক্ষেত্রে অর্থ লাভ করতে পারবে না।

হাসপাতাল এবং আনুষঙ্গিক খরচ বহন করবেন শিশুটির হবু অভিভাবকেরা। এক্ষেত্রে দু'পক্ষকেই রাজ্য সরকারের অনুমতি নিতে হবে। তবে গর্ভপাত করানোর ক্ষেত্রে গর্ভদাত্রীর ইচ্ছাই শেষ কথা। এর সঙ্গে লাগবে সরকারি অনুমতি।

কলকাতার এক আইনজীবী জানান, বিল এখনও পাশ না হলেও রাখঢাক বেড়েছে। সারোগেসি এখন চলে মেঘের আড়াল থেকে। নাম না প্রকাশ করার শর্তে গর্ভ ভাড়া দেয়া ওই নারী জানান, স্বামীর অল্প আয়ে সংসার চলে না। তাই এক প্রতিবেশীর বুদ্ধিতে তিনি এই কাজ শুরু করেছেন। তিনি বলেন, গর্ভ ভাড়া দেয়ার বিষয়ে ভারত সরকারের বিধি-নিষেধ আছে। তবে ভয় করে না। আত্মীয় হলে জন্ম দেয়াই যায়। তাই আত্মীয় সেজেই কাজ করি। এখন টাকাও আগের থেকে বেশি।

Advertisement

কত টাকা পান? এ বিষয়ে জানতে চাইলে কনফারেন্স কলে তিনি ক্লিনিকের এক কর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। ক্লিনিকের ওই কর্মী জানান, কেস পিছু টাকা আলাদা। কোনো সেন্টারের হয়ে কাজ করলে অনেকটা ‘কাট মানি’ দিতে হয়। আর সোজাসুজি কোনো ‘পার্টি’ পেলে ব্যাপারটা অন্য রকম।

জানা গেছে, সারোগেসির মাধ্যমে সন্তান পেতে কোথাও খরচ ৫ থেকে ১০ লাখ আবার কোথাও ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা। ‘সারোগেট’ সন্তানের জন্মভূমি হিসেবে গুজরাটের পাশাপাশি জনপ্রিয় কলকাতাও। বিশেষ করে ভিনদেশি দম্পতিদের কাছে।

তবে গোপনে এভাবে গর্ভধারণ ব্যবসা চললেও এতে নানা জটিলতা রয়েছে। এক ক্লিনিক কর্মী সতর্ক করে বলেন, শেষ পর্যন্ত কেউ রাখবে না আপনার সন্তান। মাঝ পথে থানা-পুলিশের ভয় দেখিয়ে গর্ভপাত করিয়ে নেবে। আপনার টাকাটা যাবে। এক স্ত্রীরোগ চিকিৎসকের মতে, কোনো ক্লিনিক বা চিকিৎসকের মাধ্যমে ‘সারোগেট’ মায়ের সঙ্গে কথা হওয়ার সময়ে খরচের হিসাব থাকে একরকম। তারপরে নানা বাহানায় বাড়তে থাকে চাহিদা।

তিনি বলেন, ‘গর্ভধারণের ছয়মাসের মাথায় যদি কোনো নারী বলেন- গর্ভধারণের বাকি সময় তাকে মালয়েশিয়া কিংবা সিঙ্গাপুরে রাখতে হবে। ততদিনে আপনার কয়েক লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। কিন্তু আপনার সন্তানও ওই নারীর গর্ভে। তাকে রাগাতেও পারবেন না। তখন কী করবেন?

Advertisement

এসআর/টিটিএন/পিআর