ছোট্ট হাতে এক শিশু অবিরাম টেনে চলেছে হাপরের রশি, বাবা আগুনে লোহার টুকরো রেখে তার ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন কয়লা। মাঝে মাঝে লোহার লম্বা সরু একটি খুন্তি দিয়ে উস্কে দিচ্ছেন আগুন। হাতুড়ি পেটানোর টুংটাং শব্দ; চারদিকে আগুনের ফুলকি।
Advertisement
সোমবার (২০ আগস্ট) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের উপকণ্ঠে চৌধুরীহাট এলাকার জগন্নাথ কর্মকারের কামারশালার চিত্র এটি। কেবল জগন্নাথের কামারশালা নয়, পুরো চট্টগ্রামের প্রায় সব কামারশালায় এখন শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা।
ইতোমধ্যেই ঈদুল আজহা উদযাপন করতে অধিকাংশ নগরবাসী বন্দরনগরী ছেড়ে গেছেন। যারা শহরে আছেন তারাও শুরু করে দিয়েছেন কোরবানির প্রস্তুতি। বাসা-বাড়ির দা, বঁটি, ছুরি, চাকু, চাপাতি শান দিতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে কামারের বাড়ি। কেউ কেউ আবার এই শেষ সময়ে এসব যন্ত্রপাতি কিনতে ছুটছেন কামারের দোকানে।
নগরীর বক্সিরহাট, ফিরিঙ্গিবাজার, চকবাজার, অক্সিজেন, চৌধুরীহাট, কাজিরহাট, বহদ্দারহাটসহ বেশ কয়েকটি বাজার ও কামারের দোকানে তৈরি হচ্ছে হাজার হাজার দা, বঁটি, ছুরি, চাকু, চাপাতিসহ নানা সামগ্রী।
Advertisement
জগন্নাথ কর্মকারের ভাষায়, এই সময়টাই তাদের কাজের মৌসুম। ঈদের আগে ১৫-২০ দিন ধরে দা-ছুরি, ধামা যা বিক্রি হয়, সারা বছরেও তা হয় না। এক মৌসুমে প্রায় ৩০-৪০ হাজার টাকার দা, ছুরি বিক্রি করেন তিনি। সারা বছর একা কাজ করলেও কোরবানি উপলক্ষে বাড়তি দুজনকে কাজে নিয়েছেন। সঙ্গে টুকটাক সাহায্যর জন্য কামারশালায় নিয়ে এসেছেন ছেলে বিশুকেও। সে স্থানীয় স্কুলের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ালেখা করে।
জগন্নাথ বলেন, ‘কোরবানি সামনে রেখে পশুর চামড়া ছাড়ানোর জন্য ছোট ছুরি বিক্রি হচ্ছে একশ থেকে দেড়শ টাকায়। মাঝারি সাইজের ছুরির দাম দুইশ থেকে আড়াইশ টাকা এবং বড় সাইজের চারশ থেকে সাড়ে পাঁচশ টাকা। বঁটি আকার ভেদে তিনশ থেকে আটশ টাকা। হাড় কাটার জন্য লোহার পাতের চাপাতি (বিভিন্ন সাইজের) পাঁচশ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করি।’
অক্সিজেন এলাকার এক কামারশালার কর্মচারী নারায়ন জানান, বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে কোরবানির ঈদের সময় তাদের কাজ এবং বিক্রি দুটোই বেড়ে যায়। তবে বেশ কয়েক বছর ধরে লোহার দাম বেশি থাকায় মানুষ এখন আর আগের মতো ছুরি-চাপাতি বানায় না। সাম্প্রতিক সময়ে এসব যন্ত্রের দামও বেড়ে গেছে। ফলে নতুন করে বানানোর চেয়ে পুরনো ছুরি-চাপাতিতে শান দিতেই মানুষ বেশি আসছে।
শহরে খাটিয়ার কদর ভালো :
Advertisement
কোরবানি ঈদ উপলক্ষে নগরের বিভিন্ন এলাকায় গাছের গুঁড়ির আলাদা কদর দেখা যায়। কোরবানির পশুর মাংস কাটার জন্য ব্যবহৃত গাছের গুড়িকে স্থানীয়ভাবে বলা হয় ‘খাটিয়া’। খাটিয়া তৈরিতে তেঁতুল গাছের কাঠকে প্রাধান্য দেয়া হয়। কারণ অন্য কাঠের তুলনায় এ কাঠের দা-ছুরির আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা অনেক বেশি।
ঈদ সামনে রেখে চট্টগ্রামে ব্যস্ত মৌসুমী খাটিয়া ব্যবসায়ীরা। নগরের বেশ কয়েকটি স্থানে অস্থায়ী দোকান বসিয়েছেন তারা। সাজিয়ে রেখেছেন এসব খাটিয়া (গাছের গুঁড়ি)।
নগরের মোহড়া এলাকার একটি স’মিল থেকে এক হাজার গাছের গুঁড়ি নিয়ে শনিবার রাতে বহদ্দারহাট বাজারে এসেছেন সাহাবউদ্দিন। তিনি জাগো নিউজকে জানান, সোমবার দুপুর পর্যন্ত ৫০টি খাটিয়া বিক্রি হয়েছে। এখনও বিক্রি জমে ওঠেনি। গরু কেনা শেষ না হওয়ায় খাটিয়ার কদর কম। গরু কেনা শেষে আগামীকাল (আজ) বেশি বিক্রি হবে। শহরে এসব গাছের গুঁড়ির কদর আছে।
এমবিআর/পিআর