জাতীয়

শেষ দিনের ‘ফাঁদ’ এড়াতে সতর্ক ক্রেতা-বিক্রেতারা

কোরবানির বাকি আর একদিন। সে হিসেবে আগামীকাল (মঙ্গলবার) কোরবানির শেষ হাট। শেষ দিনে এসে কখনো কোরবানির পশু না পেয়ে দড়ি কিনেই বাড়ি ফিরতে হয় ক্রেতাদের, আবার কখনো পানির দামে প্রিয় পশুটি বিক্রি করে চোখের জলে ভাসেন ব্যাপারীরা। তাই এবার আর শেষ দিনের ‘ফাঁদে’ পা দিতে রাজি নন ক্রেতা-বিক্রেতা কেউই।

Advertisement

সকালের গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, দুপুরের কড়া রোদ উপেক্ষা করে চট্টগ্রামের সবগুলো পশুর বাজারে ভিড় করছেন ক্রেতারা। পারত পক্ষে ক্রেতাদের ফেরত দিচ্ছে না বিক্রেতারাও। সব মিলিয়ে আজ জমজমাট চট্টগ্রামের পশুর হাট।

সোমবার (২০ আগস্ট) সকাল থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত নগরের কয়েকটি পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি পশুর হাটেই ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। বাজারগুলো কোরবানির পশুতে কানায় কানায় ভরা। তবে হাটের অধিকাংশ গরুই দেশি ও স্থানীয়ভাবে লালন-পালন করা। চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে হাটে আনা হয়েছে এসব গরু। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গা থেকেও প্রচুর গরু এসেছে এ হাটে। ট্রাক ভরে এখনও গরু ও ছাগল আসছে। অবশ্য গরুর সংখ্যাই বেশি।

নগরের কোরবানির পশুর হাটে উঠেছে পাহাড়ের লাল গরু। চাহিদাও বেশ

Advertisement

গত কয়েকদিন ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে দর-কষাকষির চিত্র বেশি দেখা গেলেও আজ তা হচ্ছে না। নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে পশু কেনাবেচার চেষ্টা করছেন ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই। ক্রেতারা দেখে-শুনে পছন্দের গরুটির দরদাম করছেন। পছন্দ হলে মূল্য ও হাসিল পরিশোধ করে খুশিমনে পশু নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। যদিও গতকাল বিকেল পর্যন্ত ক্রেতাদের অধিকাংশ সময় দরদাম করতেই দেখা গেছে, বিক্রেতারাও চেষ্টা করেছেন ক্রেতাদের একটু বাজিয়ে নিতে।

সোমবার সকাল থেকে পাল্টে যাওয়া হাটের চিত্র সম্পর্কে ক্রেতা-বিক্রেতারা বলছেন- তারা শেষ দিনের ‘ফাঁদে’ পড়তে চান না। তাই আগামীকলের অপেক্ষা না করে কোরবানির পশুটি কেনার বা বেচার জন্য আজই উত্তম সময়।

সকাল সাড়ে ১০টার একটু আগে নগরের বিবিরহাট গরু বাজারে কথা হয় বীমা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, যাই হোক আজ কোরবানির পশু কিনেই বাড়ি ফিরবেন। গত দু’দিনে বেশ কয়েকটি বাজারে ঘুড়েছেন। তবে দাম চড়া ছিল, তাই পশু কেনা হয়নি। আজ একটু এদিক-ওদিক করে কোরবানির পশু কিনে ফেলবেন। বাজারও কিছুটা নমনীয় মনে হচ্ছে।

১২ বছরের মেয়ে নুসরাতকে নিয়ে সাগরিকা গরু বাজারে এসেছেন আগ্রাবাদের রানা। এবার মেয়ের পছন্দের লাল গরু কিনতে হবে তাকে

Advertisement

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আজ গরু না কিনলে আগামীকাল কী হবে তা বলা যাচ্ছে না। এখন হাট ভর্তি গরু, কিন্তু হয়তো কাল দুপুরের দিকে দেখবেন হাটে কেনার জন্য গরু পাচ্ছি না। গত কয়েক বছর এমনটাই ঘটেছে। শেষ দিনের অপেক্ষায় থাকাটা ঠিক হবে বলে মনে হচ্ছে না। তাই আজ সকাল সকাল বাজারে চলে আসলাম।’

বিক্রেতা আবছার মিয়া বলেন, ‘এখন মানুষ আর বোকা নাই। একদিন আগেই চাঁদরাতের মতো বাজার জমে গেছে। শেষ দিনে বাজারে দাম বাড়তে পারে, তাই সব ক্রেতারা বাজারে চলে এসেছেন। আগে এমন হতো না। আমরাও তাদের হতাশ করছি না। আজ কোরবানির পশু আমার থেকে না কিনলে অন্য কারো কাছ থেকে ঠিকই কিনে নেবে। তাই দেখে-শুনে ছেড়ে দিচ্ছি। সকাল থেকে ৬টা গরু বেচলাম। রাতের মধ্যে আরও গরু বিক্রি হবে।’

তবে ভিন্ন মত আরেক বিক্রেতা কামরুলের। তার মতে, ‘আজ যত কমেই দেই কিছু ক্রেতা আছে তারা বাজারে ঘুরবেই। ঘুরে-ফিরে আগামীকাল শেষ সময়ে বেশি দামে কোরবানির পশু কিনবে। অনেক বিক্রেতাও এমনই। যত ভালো দামই পাক, আরও বেশি দামের আশায় আজ গরু বেঁচবে না।’

স্থানীয় গরুর পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রাকে ট্রাকে আসছে গরু

‘আমার আর ৫টা গরু আছে। চেষ্টা করছি আজ সব গরু বিক্রি করে রাতে বাড়ি ফিরতে। তাহলে অন্তত পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে পারবো।’ - যোগ করেন কামরুল।

বিবিরহাট বাজারের ইজারাদার জামশেদ খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘গতকাল থেকে গরু বাজার জমে উঠতে শুরু করেছে। সকাল থেকে ক্রেতাও ছিল। বিকেলের দিকে বেচাবিক্রি কম হলেও সন্ধ্যার পর বাড়ে। তবে আজ সকাল থেকে বাজারে প্রচুর ক্রেতার সমাগম ঘটছে। বেচাবিক্রিও আগের কয়েক দিনের তুলনায় বহুগুণ বেড়েছে। যেহেতু সময় বেশি বাকি নেই তাই আজ খুব ভালো বিক্রি হচ্ছে।’

নগরের নুরনগর হাউজিং পশুর হাটে ৪০টি গরু নিয়ে এসেছেন সাতকানিয়ার আনোয়ার ও জাফর। আনোয়ার জানান, গত চার দিনে মাত্র ৯টি গরু বিক্রি হয়েছে। ক্রেতারা দরদাম করলেও কেনেন না। তবে আজ সকাল থেকে বাজারে ক্রেতার চাপ বাড়ছে, বিক্রিও বেড়েছে।

এবার কোরবানির আগে সনাতন ধর্মালম্বীদের মনসা পুজা থাকায় ছাগালের বাজার একটু আগে ভাগে জমেছে

জাফর জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা মতো বিক্রি এখনও করতে পারিনি। শেষ বাজারের আগেই গরু গুলো ছেড়ে দেব। পশুর লালন-পালন খরচ বেড়েছে। পরিবহন খরচও বেড়েছে। তাই দামও একটু বেশি। পোষানোর মতো দাম পেলেই হবে। আজ বিক্রি না করলে এ গরু দিয়ে কী করবো। বেশি অপেক্ষা করতে গেলে লোকশানে পড়তে হবে।’

মইজ্জারটেক বাজারের ইজারাদার বেলাল হোসেন বলেন, ‘বাজারে এ বছর প্রচুর গরু এসেছে। গতকাল সকাল থেকে ক্রেতা ছিল। বিকেলের দিকে বেচাবিক্রি কম হলেও সন্ধ্যার পর বেড়েছে। যেহেতু এখন সময় নেই, তাই আশা করি আজ ভালো বিক্রি হবে।’

চট্টগ্রাম নগরীতে সাগরিকা ও বিবিরহাট–এই দুটি স্থায়ী পশুরহাট ছাড়াও ৬টি অস্থায়ী পশুর হাট নূরনগর হাউজিং মাঠ কর্ণফুলী গরুর বাজার, স্টিল মিল বাজার, পতেঙ্গা সিটি করপোরেশন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, সল্টগোলা রেলক্রসিং মাঠ, কমল মহাজন হাট ও পোস্তারপাড় বিদ্যালয় মাঠ বাজারে প্রচুর গরু-ছাগল উঠেছে। বেচাকেনা জমে ওঠেছে সবগুলো হাটেই।

দাম একটু বেশি হলেও পছন্দের গরুটা কিনে খুশি মনে বাড়ি ফিরছেন ক্রেতারা

জমেছে ছাগলের বাজারগরুর হাটের পাশাপাশি জমে উঠেছে চট্টগ্রামে নগরের সবচেয়ে বড় দেওয়ানহাট ছাগলের বাজারও। কয়েকদিন আগ থেকেই চট্টগ্রামের আনোয়ারা, বাঁশখালী, সাতকানিয়া, পটিয়াসহ বিভিন্ন এলাকা ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আনা ছাগল বাজারে উঠেছে। বাজারে দেশের পাশাপাশি ভারত থেকেও অনেক ছাগল আনা হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে বাজারে বিক্রি বেড়েছে বলে জানান বিক্রেতারা।

তারা জানান, দাম নাগালের মধ্যে থাকায় কোরবানির পশু হিসেবে ছাগলকে বেছে নিচ্ছেন অনেকে।

বাজারের ইজারাদার মো. আশরাফ উদ্দিন শাহীন জাগো নিউজকে বলেন, ‘এবার কোরবানির আগে সনাতন ধর্মালম্বীদের মনসা পূজা থাকায় ছাগালের বাজার একটু আগে ভাগে জমেছে। এখন কোরবানির জন্য ছাগল বিক্রি হচ্ছে। যারা ছাগল কেনেন তারা আগে ভাগে পশু কিনতে চান না। তাই এই শেষ মুহূর্তে বিক্রি বেড়েছে।

এমবিআর/এমএস